ঢাকা: খাদ্য মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শরীর ও মনকে সুস্থ্য রাখতে খাবারের কোনো বিকল্প নেই।
বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘সুন্দর আগামীর জন্য নিরাপদ খাদ্য প্যাকেজিং’ শীর্ষক সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা।
নিরাপদ খাদ্য সংক্রান্ত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা এবং নিরাপদ খাদ্য প্যাকেজিং বিষয়ে ব্র্যান্ড মালিক, নিয়ন্ত্রক ও প্রক্রিয়াজতকারীসহ অন্যান্য অংশীজনদের মধ্যে সচেতনতার বৃদ্ধির লক্ষ্যে যৌথভাবে এই সম্মেলনের আয়োজন করে প্যাকেজিং ও লেবেলের জন্য প্রয়োজনীয় ছাপা ও কোটিংয়ের কালি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘সিগওয়ার্ক’ ও ‘এফসিসিআই’।
সম্মেলনে পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সিগওয়ার্ক এশিয়ার প্রেসিডেন্ট আশিস প্রধান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্যাকেটজাত খাবারের বাজার দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। ফলে খাদ্য প্যাকেজিংয়ের জন্য আমাদের এখন নতুন ও উচ্চতর মান প্রয়োজন। খাদ্য প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে অপ্রচলিত ও অনিরাপদ চর্চা থেকে সরে এসে উন্নত ও নিরাপদ খাদ্য প্যাকেজিংয়ের কৌশলগুলো রপ্ত করা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
খাবার প্যাকেজিংয়ে অনুবর্তিতা নিশ্চিত করা খুবই জটিল চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, খাদ্যপণ্যের জন্য নিরাপদ প্যাকেজিং সরবরাহ করতে সাপ্লাই চেইনের সকল স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে একটি সহযোগিতাপূর্ণ পরিবেশ থাকতে হয়। পাশাপাশি এই প্রক্রিয়া তাদের এক সাথে কাজ করতে বাধ্য করে। আজকের এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য হলো প্যাকেজিং চেইনের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে মতবিনিময় করা এবং নতুন নিয়মগুলো বাস্তবায়নের জন্য নিজেদের ভূমিকা ঠিক করে নেওয়া।
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। করোনা পরবর্তী সময়ে এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর খাদ্যের গুরুত্ব নতুন করে উপলব্ধি করছে বিশ্ব। খাদ্যের নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো নিরাপদ খাদ্য। আর এটি নিশ্চিতে খাদ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এ জন্য কয়েক বছর আগে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হয়। দেশে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে প্রতিষ্ঠানটি চমৎকার কাজ করছে।
খাবার প্যাকেজিংয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, সরাসরি ক্ষেত বা উৎপাদন এলাকা থেকে যদি দূষণ ছাড়া খাবার গ্রহণ করা যেত, তাহলে হয়তো প্যাকেজিংয়ের প্রয়োজন পড়তো না। কিন্তু তা সম্ভব নয়। আমাদের খাবার মজুদ করতে হয়, বিতরণ করতে হয়, সরবরাহ করতে হয়। এছাড়া খাবারকে নিরাপদ রাখতেও প্যাকেজিংয়ের বিকল্প নেই। তাই আমাদের ওষুধের মতো নিরাপদভাবে খাবার গ্রহণ করতে হবে, তা না হলে পরে খাবারের মতো ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।
সিগওয়ার্কের গ্লোবাল প্রোডাক্ট সেফটি অ্যান্ড রেসপনসিবিলিটি এবং সাসটেইনেবিলিটির প্রধান ড. ইয়র্গ-পিটার ল্যাংহ্যামার বলেন, নিরাপদ প্যাকেজিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় এবং সঠিক প্যাকেজিং ছাড়া কোনো খাবারই নিরাপদ নয়। প্যাকেজিং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সমস্ত সাপ্লাই চেইনে স্বচ্ছতা ও একটি সমন্বিত পদ্ধতি অনুসরণ করা প্রয়োজন। প্যাকেজিংয়ের ভ্যালু চেইন বেশ জটিল এবং এক্ষেত্রে দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়া আবশ্যক। বাংলাদেশে টেকসই নিরাপদ খাদ্য প্যাকেজিং কার্যকর করতে টলুইন-মুক্ত কালি ব্যবহার, বৈশ্বিক নীতির অনুবর্তিতা ও পণ্য সুরক্ষার প্রয়োজনীয় নিয়ম মেনে চলতে সিগওয়ার্কের অঙ্গীকারবদ্ধ।
এ সময় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএফএসএ-এর চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মো. আব্দুল কাইয়ুম সরকার। সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এফসিসিআই এর উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য ও সাবেক সভাপতি এবং বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী হক চৌধুরী।
এছাড়া সিগওয়ার্কের ফুড সেফটি ও টক্সিকোলজির পরিচালক ড. এভার্ট ডেলব্যাংকো, ইউনিলিভার কনজিউমার কেয়ারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কেএসএম মিনহাজ, মন্ডেলেজের কান্ট্রি লিড জাহিদ খান, নেসলের ম্যানুফ্যাকচারিং ডিরেক্টর হাকিম আসরার আহমেদ, পারফেট্টি ভ্যান মেলের সাপ্লাই চেইন ডিরেক্টর আরশাদ চৌধুরী, বিএফএসএ এর সদস্য ও প্রকল্প পরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ, বিএসটিআই'র উপপরিচালক (মেট্রোলজি) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, আরলা ফুডসের হেড অব মার্কেটিং গালিব বিন মোহাম্মদ ও কোকাকোলার কমিউনিকেশন অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি হেড ফারাহ শারমিন আওলাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২৪২ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২৩
এসসি/এমজেএফ