ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সম্মিলিতভাবে একাত্তরের গণহত্যার স্বীকৃতি চাইতে হবে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৩
সম্মিলিতভাবে একাত্তরের গণহত্যার স্বীকৃতি চাইতে হবে ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: একাত্তরের গণহত্যা নিয়ে রাজনীতি করার কিছু নেই। আমাদের সম্মিলিতভাবে এ গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চাইতে হবে।

শনিবার (২৫ মার্চ) জাতীয় গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত '১৯৭১, গণহত্যা ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির প্রেক্ষাপট' শীর্ষক আলোচনা সভা ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীতে এ কথা বলেন বক্তারা। জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এ আলোচনা সভা ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে জাতীয় প্রেসক্লাব।

প্রধান আলোচকের বক্তব্যে সাবেক অ্যাম্বাসেডর ও আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জমির বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ নিয়ে বড় বড় কথা বলে। কিন্তু ১৯৭১ সালে বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানিরা যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে সেটিকে তারা গণহত্যা বলে স্বীকৃতি দিচ্ছে না। অথচ ওই গণহত্যায় ৩০ লাখের বেশি মানুষ মারা গেছে। মা-বোনদের মানহানি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নির্যাতনকে গণহত্যা স্বীকৃতি দিয়ে বার্মা অ্যাক্ট করা হয়েছে। মিয়ানমারের গণহত্যাকে যদি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশের গণহত্যাকে কেন স্বীকৃতি দেওয়া হবে না? আমরা সেই স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করছি।

শুধু সরকার নয়, সবাইকে সম্মিলিতভাবে একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চাইতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এটি নিয়ে রাজনীতি করার কোনো কারণ নেই। এটিকে রাজনৈতিক অঙ্গনে আনার কোনো কারণ নেই। যা ঘটেছে সেটাকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দিয়ে আইন সম্মতভাবে যা করণীয় তা করা হোক।

স্বাগত বক্তব্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, অনেকে বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিরা আমাদের কয়েক লাখ মা-বোনদের সম্ভ্রমহানি করেছে। এটা আমাদের বলা উচিত নয়। বাঙালি নারীর সম্ভ্রম পাকিস্তানিরা হানি করতে পারেনি। তারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, একাত্তরের গণহত্যার স্মৃতিচিহ্ন বহনকারী অনেক বধ্যভূমি এখনও অযত্নে, অবহেলায় পড়ে আছে। আমরা যদি নিজেরা এটিকে সংরক্ষণ না করি, ধারণ না করি, তাহলে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি কীভাবে পাবো? রাষ্ট্রীয়ভাবে এসব স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে আমাদের বেগ পেতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি কবি হাসান হাফিজ বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ অত্যন্ত সুপরিকল্পিত নীল নকশা করে বাঙালিদের হত্যা করা হয়েছিল। অনেক বধ্যভূমি ও গণহত্যার স্থান চিহ্নিত করা গেলেও, সবগুলো এখনো উন্মোচিত হয়নি। আমদের এগুলো খুঁজে বের করতে হবে। পাশাপাশি একাত্তরের গৌরবগাঁথা ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। তাদের মধ্যে একাত্তরের চেতনা সঞ্চারিত করতে হবে।

'বধ্যভূমিতে একদিন' প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা কায়সার চৌধুরী বলেন, কোনো ভাষা বা জনগোষ্ঠীকে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করার চেষ্টাই গণহত্যা।

এ সময় তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, একাত্তর সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, আলবদর, আল সামসরা বাঙালিদের নির্মূল করা জন্য যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল, সেটিকে কেন গণহত্যা বলা হবে না?

এ সময় ২৫ মার্চ কালরাত্রিকে গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দাবি জানান জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক আশরাফ আলী।

জাতীয় প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য জুলহাস আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ শাহেদ চৌধুরী। আলোচনা সভা শেষে 'বধ্যভূমিতে একদিন' প্রামাণ্যচিত্রটি প্রদর্শন করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৩
এসসি/এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।