ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থান সংরক্ষণ করতে হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম।
রোববার (২৬ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর মিরপুরে জল্লাদখানা বধ্যভূমিতে এসটিএস গ্রাফিটি আর্ট ওয়ার্ক এবং মুক্তির সবুজায়ন শীর্ষক বৃক্ষরোপণ প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
আতিকুল ইসলাম বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের ত্যাগের বিনিময়ে আজ আমরা পেয়েছি লাল-সবুজের পতাকা, পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ। তাদের ত্যাগের বিনিময়ে আজ আমি মেয়র, তাদের ত্যাগের বিনিময়ে আজ আমরা কাউন্সিলর ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী হতে পেরেছি। তাই সবার আগে বীর মুক্তিযোদ্ধারা সম্মান পাবেন তারপর অন্যরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র বলেন, মিরপুরের জল্লাদখানা বধ্যভূমি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত। এখানে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তাক্ত ইতিহাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত জল্লাদখানা বধ্যভূমিকে সংরক্ষণ করা আমাদের দায়িত্ব।
তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগে দেখেছি এ জায়গাটায় নেশার ও ময়লার অভয়ারণ্য ছিল। দায়িত্ব নিয়ে সবার সহযোগিতায় আমি সিটি করপোরেশন থেকে পরিত্যক্ত এ জায়গাটিকে নান্দনিকভাবে সাজিয়েছি। এখন এ এলাকার জনগণের দায়িত্ব হবে জায়গাটিকে রক্ষণাবেক্ষণ করা।
অবৈধ দখলদারদের কথা উল্লেখ্য করে মেয়র বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেমন আমাদের শত্রু ছিল। আর এখন মাঠ, পার্ক ও খালের জমি দখলদাররা আমাদের শত্রু। এসব ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে আমাদের কথা বলতে হবে। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য শহর গড়তে হলে মাঠ ও পার্কের বিকল্প নেই। খেলার মাঠকে প্লট আকারে বরাদ্দ দিয়ে ভবন নির্মাণ করা যাবে না।
মাঠ ও পার্ক নির্মাণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এ সময় জল্লাদখানা বধ্যভূমিতে কোনো ধরনের যানবাহন পার্কিং করে জনগণের অসুবিধা সৃষ্টি করা যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন মেয়র আতিক।
ঢাকা শহরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে নগরবাসীকে দায়িত্ব নিতে হবে উল্লেখ করে আতিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকা শহরে যত্রতত্র অবৈধভাবে পোস্টার, রেক্সিন, দেয়ালে লেখা, নামফলক, সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার এসব লাগানোর ফলে নগরীর সৌন্দর্য ব্যাহত হচ্ছে। নগরী অপরিচ্ছন্ন হয়ে পরছে। ঢাকা শহরের সৌন্দর্য রক্ষায় এবং স্মার্ট সিটি গড়ে তুলতে হলে এসব বন্ধ করতে হবে। মেট্রোরেল আমাদের রাষ্ট্রীয় সম্পদ। এটি জনগণের সম্পদ। যেখানে আমাদের প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেলে পরে থাকা ময়লা নিজ হাতে কুড়িয়ে পরিষ্কার করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে তাকে অনুসরণ করে আমাদের স্বপ্নের মেট্রোরেল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
বক্তব্য শেষে মেয়র আতিক অন্যান্য অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে এসটিএস গ্রাফিটি আর্ট ওয়ার্ক এবং মুক্তির সবুজায়ন শীর্ষক বৃক্ষরোপণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এ সময় মেয়র বধ্যভূমিতে পতিত জমিতে শিশুদের জন্য স্থাপিত খেলার সামগ্রীতে শিশুদের সঙ্গে খেলায় অংশ নিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন।
উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত অন্যতম স্থান ‘মিরপুর জল্লাদখানা বধ্যভূমি’কে কেন্দ্র করে একটি আধুনিক ও সবুজ শিশুবান্ধব গণপরিসর গড়ে তোলার লক্ষ্যে ডিএনসিসির উদ্যোগে শক্তি ফাউন্ডেশন এবং মেটলাইফ ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় জল্লাদখানা স্মৃতিসৌধের বিপরীতে পরিত্যক্ত জমিতে ছোট-বড় মিলিয়ে ১০০০টি গাছ লাগানো হয়েছে। শিশুদের জন্য উন্মুক্ত খেলার জায়গায় লাগানো হয়েছে সবুজ ঘাস। এছাড়া দুর্গন্ধ যুক্ত ও দৃষ্টিকটু আবর্জনা ডাম্পিং করার সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) কে বিখ্যাত কার্টুনিস্ট সৈয়দ রাশাদ ইমাম তন্ময় এবং সহ-শিল্পীরা সাজিয়েছেন নতুন সাজে।
অনুষ্ঠানে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী জহুরুল ইসলাম মানিকের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন- প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ডিএনসিসির অঞ্চল-২ এর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমান ও কাউন্সিলর, মেটলাইফ বাংলাদেশের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আলা আহমেদ, শক্তি ফাউন্ডেশনের উপ-নির্বাহী পরিচালক ইমরান আহমেদ প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২৩
এমএমআই/আরবি