বাগেরহাট: বাগেরহাটের রামপালে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চুরির অপবাদ দিয়ে শেখ আব্দুল্লাহ (২৫) নামে এক যুবককে প্রায় ২২ ঘণ্টা আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। এমনকি স্থানীয় বাইনতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল্লাহর সামনে ওই যুবকের চোখ তুলে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়েছে।
পরে ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রেখে নির্যাতনের বিষয়টি কাউকে না জানানোর শর্তে ছেড়ে দেওয়া হয় আব্দুল্লাহকে। ঘটনাটি ঘটেছে রামপাল উপজেলার ব্রী-চাকশ্রি এলাকায়।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে ইজিবাইকে করে বাগেরহাট আসাছিল শেখ আব্দুল্লাহ। পথে রামপাল উপজেলার চাকশ্রি নামক স্থান থেকে জোরপূর্বক তাকে তুলে নিয়ে যায় ব্রি চাকশ্রী এলাকার শেখ হাসান আলী ও ইউপি চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল্লাহর ভাগ্নে আবু সালেহসহ কয়েকজন। চুরির অপবাদ দিয়ে প্রায় ২২ ঘণ্টা নির্যাতনের পরে শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে ছেড়ে দেওয়া হয় শেখ আব্দুল্লাহকে। এদিকে চারদিন পার হলেও এ ঘটনায় কোনো মালা হয়নি। তবে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক।
নির্যাতনের শিকার আব্দুল্লাহ বাগেরহাট সদর উপজেলার মুনিগঞ্জ এলাকার শেখ গফুরের ছেলে। তিনি বর্তমানে বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
নির্যাতনের শিকার আব্দুল্লাহ বলেন, পূর্ব পরিচিত হওয়ায় ব্রি চাকশ্রী এলাকার শেখ হাসান আলীকে আমি ১ লাখ ২৭ হাজার টাকা ধার দেই। কিন্তু তিনি আমাকে টাকা পরিশোধ না করে ঘোরাতে থাকেন। পরে টাকা বাবদ শেখ হাসান আলী তার মালিকানাধীন ইজিবাইকটি আমার কাছে বিক্রি করে দেন এবং প্রতিদিন দুইশ টাকা ভাড়ায় তিনি ইজিবাইকটি চালাতে থাকেন। কিন্তু কয়েকদিন টাকা দেওয়ার পরে আর টাকা দেয় না। যার কারণে জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে আমি ইজিবাইক নিয়ে বিক্রি করে দেই। পরবর্তীতে এ বিষয় নিয়ে আর কথা হয়নি। কিন্তু হঠাৎ বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে ইজিবাইকে করে রামপাল থেকে বাগেরহাট আসার পথে চাকশ্রী নামক স্থান থেকে শেখ হাসান আলী ও চেয়ারম্যানের ভাগ্নে আবু সালেহসহ কয়েকজন জোর করে আমাকে ধরে নিয়ে যায়। ব্রি চাকশ্রী এলাকায় শেখ হাসান আলী বাড়িতে নিয়ে আমাকে নির্যাতন করে। সন্ধ্যার দিকে আমার বন্ধু প্রাইভেটকার চালক আল আমিনকে চাকশ্রী আসার জন্য আমাকে দিয়ে ফোন করায়। পরে আল আমিন গেলে তাকেও বেধে রাখে হাসান ও আবু সালেহরা। সারারাত আমাকে অমানুষিক নির্যাতন করেছে আবুল সালেহ ও হাসানসহ কয়েকজন। বেধড়ক মারধরের সঙ্গে শরীরে সিগারেটের ছ্যাঁকা ও আঙুলের মধ্যে খেজুরের কাটা ঢুকিয়েছে। চোখ উঠিয়ে ফেলার কথা বলেছে।
আব্দুল্লাহ আরও বলেন, সারারাত এভাবে অত্যাচারের পরে দুপুরে বাইনতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল্লাহর কাছে নিয়ে যায় আমাকে ও আমার বন্ধু আল আমিনকে। তিনি কোনো কথা না শুনে আমাদের চোখ তুলে ফেলতে বলেন। পরে ফাঁকা স্ট্যাম্পে আমার এবং আমার মায়ের স্বাক্ষর নিয়ে ৩ লাখ টাকা দেওয়ার স্বীকারোক্তি রেখে ছেড়ে দেয়। আমি নির্যাতনকারীদের কঠিন বিচার চাই।
শেখ আব্দুল্লাহর মা খালেদা বেগম বলেন, আমার ছেলেকে যেভাবে নির্যাতন করেছে তা মানুষে করে না। চেয়ারম্যানের কাছে যেয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি। আমি আমার ছেলের নির্যাতনের বিচার চাই।
প্রত্যক্ষদর্শী শেখ আব্দুল্লাহর বন্ধু প্রাইভেটকার চালক আল আমিন বলেন, আল আমিনের ফোন পেয়ে চাকশ্রী বাজারে গেলে, হাসান ও আবু সালেহ আমাকে বেঁধে রাখে। সারারাত আব্দুল্লাহকে নির্যাতন করে। শুক্রবার দুপুরে আমাদের ছেড়ে দেয়।
এদিকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল্লাহ বলেছেন, তার সামনে কোনো নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি। আবু সালেহ তার ভাগ্নে নয়।
বাগেরহাট জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার সমাদ্দার বলেন, আব্দুল্লাহ নামে ওই যুবকের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোলা-জখম রয়েছে। গুরুতর ইনজুরি রয়েছে কিনা সে বিষয়ে পরীক্ষার পর জানা যাবে।
পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক বলেন, ভিডিওটি আমরা দেখেছি। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভাইরাল হওয়া ২ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়- একটি ঘরের পেছনে আম গাছের সঙ্গে বেঁধে এক যুবককে মারধর করছে কয়েকজন যুবক।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২৩
আরএ