শেরপুর: মুমূর্ষু অবস্থায় দিন যাপন করছে জেলায় কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত কিশোর মমিন মিয়া (১৫)। হামলার ১৮ দিন পার হলেও কথা বলতে পারছে না সে।
ফলে দিন দিন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে মমিনের শারীরিক অবস্থা। তার পাশে বসে চোখের পানি ফেলছেন মমিনের মা মমতা বেগম ও বাবা খোকন মিয়া।
সোমবার (৩ এপ্রিল) সরেজমিনে শ্রীবরদী উপজেলার কুড়িকাহনীয়া ইউনিয়নের গড়খোলা গ্রামে মমিনদের বাড়িতে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়।
জানা যায়, মমিনের বাবা খোকন মিয়া ওই গ্রামের ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালান। তার এক ছেলে এক মেয়ে। মমিন এবার কুড়িকাহনীয়া সাউথ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র।
স্কুলের বেঞ্চে বসাকে কেন্দ্র করে মমিনের দ্বন্দ্ব শুরু হয় স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে। ঘটনার পর স্কুলে যাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে যায় মমিনের। গত চার মাস আগে মমিনের মা-বাবা কিশোর গ্যাং লিডার আল আমিনের কাছে গিয়ে হাত-পা ধরে ক্ষমা চেয়েছেন। যেন তাদের ছেলে স্কুলে যাতায়াত করতে পারে। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি।
গত ১৫ মার্চ বুধবার রাতে মমিন ও তার সহপাঠী শাকিল (১৫) কুড়িকাহনীয়া মাদরাসা মাঠে ওয়াজ মাহফিল শুনে বাড়ি ফিরছিল। পথে ওঁত পেতে থাকা কোরবান ও আল আমিনসহ ১০/১২ জন কিশোর গ্যাং ধারালো চাপাতি, লোহার রোড ও চেইন দিয়ে আঘাত করে গুরুতর আহত অবস্থায় মমিন ও শাকিলকে ফেলে রেখে যায়। পরে অন্য সহপাঠী ও স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে আশংকাজনক অবস্থায় শেরপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে মমিনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হয়ে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। ঢাকা মেডিকেলে মমিনের মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়। এর ১০ দিন পর চিকিৎসা শেষে বাড়িতে আনা হয় তাকে।
এ ঘটনায় মমিনের দাদা আজিজুর রহমান বাদী হয়ে ১০ জনসহ অজ্ঞাতনামা ৪-৫ জনকে আসামি করে শ্রীবরদী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
পরে পুলিশ রাতেই অভিযান চালিয়ে কোরবান আলী (১৬), আল-আমিন (১৮), খুরশেদ আলী (২০), এলাইজ মিয়া (১৭), মাসুদ রানা (১৮) ও ইলিয়াসকে (১৮) গ্রেপ্তার করে। পরদিন তাদের আদালতে সোপর্দ্দ করা হলে আদালত তাদেরকে গাজীপুরের জাতীয় কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠায়।
তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সাজু মিয়া (১৮), সেলিম মিয়া (১৮), হালিম মিয়া (১৮) ও জুয়েল মিয়া (১৭) পলাতক রয়েছে।
এদিকে, মমিন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাইলেও বিধি বাম! স্বাভাবিক জীবন তো দূরের কথা, টানা ১৮ দিন ধরে কথা বলতে পারছে না মমিন। টাকার অভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাটুকু পাচ্ছে না সে।
মমিনের বাবা খোকন মিয়া বলেন, ওরা আমার পোলাডারে মাইরা পঙ্গু কইরা দিছে। আমি কামলা দিয়ে সংসারই চালামু, না চিকিৎসার খরচ দিমু? ১০/১২ দিন মমিসিং-ঢাহা (ময়মনসিংহ-ঢাকা) দৌড় পাইরা দুই লাখ টাহার ওপরে ঋণ অইছে। অহনও পোলাডা মরার মতো পইরা আছে। কার কাছে বিচার চাইমু?
মা মমতা বেগম বলেন, স্বামী ইট ভাঙ্গার কাম করে। পুলাডার মুখের দিকে চাইয়া দুঃখকে দুঃখ মনে করি নাই। দুই বেলা ভাত খাই। দুপুরের খাবারের টাহা বাচাঁয়ে পুলার পড়ালেখার খরচ জোগাই। এহন বাড়ি ভিটা বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে অইবো। তবুও পোলাডা ভালা হোক। এডাই আমগোর শেষ ভরসা। পোলার কিছু অইলে আমরা কই যামু?
স্থানীয় জুইমত আলী (৫৫) বলেন, ওরা কিশোর গ্যাং বানাইছে। দূর থেকে যারা আসে, ওই সব ছেলেরা কথা না শুনলে মারধর করে। ওদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলারও সাহস পায়না। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
কুড়িকাহনীয়া ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ খান নুন বলেন, এ বিষয়ে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। না হলে এ কিশোর গ্যাং ভবিষ্যতে এলাকায় আরও বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে।
শ্রীবরদী থানার অফিসার ইনচার্জ বিপ্লব কুমার বিশ্বাস বলেন, ঘটনার দিনই ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপর আসামিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এ ঘটনায়, কিশোরর গ্যাংয়ের হামলায় মৃত্যু শয্যায় মমিনের চিকিৎসায় এগিয়ে আসবে বিত্তবানরা। মমিন সুস্থ হয়ে আলোকিত করবে তাদের সংসার। পলাতক অপরাধীরাও গ্রেপ্তার হবে দ্রুত। এমনটাই প্রত্যাশা সচেতন মানুষের।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৮ ঘণ্টা, ৩ এপ্রিল, ২০২৩
এসআইএ