ঢাকা: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি বলেছেন, বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা সারা বছর ঈদের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। ঈদের আয় দিয়ে তারা সারা বছর সংসার চালান।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন দুই হাজার কোটি টাকার মালামাল পুড়ে একদিনেই তারা ফকির হয়ে গেছে। দুর্যোগে যারা কষ্ট পাচ্ছেন আমরা তাদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। পাশাপাশি সরকারের কাছে আবেদন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। দরকার হলে বিনা সুদে অথবা স্বল্প সূদে তাদের ঋণ দিতে হবে।
মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) বিকেলে হোটেল ইম্পেরিয়াল মিলনায়তনে জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আয়োজিত ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কারণে কেউ ইচ্ছে করলেই ভালো কাজ করতে পারছে না। আমরা সাহায্য দিতে বলেছি, দেখা যাবে এমন লোককে সাহায্য দেওয়া হচ্ছে এখানে যার দোকানই নেই। যারা সরকারি দল করেন তারাই সাহায্য ও ঋণ পাবেন। আবার যার ঋণ দরকার তিনি পাবেন না। অথবা ঋণ পেতে হলে অর্ধেক টাকা ঘুষ হিসেবে দিতে হবে। দুঃখের বিষয় এমন বাংলাদেশের জন্য এদেশ স্বাধীন হয়নি।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের আরও বলেন, গেল বছর কন্টেইনার ডিপোটে অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক সংখ্যক মানুষ মারা গেছেন। অনেকে পঙ্গু হয়ে গেছেন। আমরা দাবি করেছিলাম, দুর্ঘটনাকে স্বাভাবিক ঘটনা মনে না করে ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? গেল বছর ২৪ হাজার অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
তদন্ত কমিটি গঠন হয় কিন্তু তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী কারো শাস্তি হয়েছে বলে আমরা জানি না। ৪ মার্চ চট্টগ্রাম রি-রোলিং মিলে অক্সিজেন প্লান্ট বিস্ফোরণে চারজন মারা গেছেন, সায়েন্সল্যাব এলাকায় ৫ মার্চ পাঁচ-ছয়জন মারা গেল। আবার ৭ মার্চ সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণে অনেক মানুষ মারা গেল। এগুলো যদি দুর্ঘটনা হয় তাহলে ভবিষ্যতে যাতে দুর্ঘটনা না ঘটে সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে হাজার কোটি টাকার মালামাল ধ্বংস হয়ে গেল, এর দায়-দায়িত্ব কার? আগামীকাল যে এমন দুর্ঘটনা আর ঘটবে না তার কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবে? আজকের দুর্ঘটনায় কোনো প্রাণহানী হয়নি, কিন্তু প্রাণহানীর চেয়েও খারাপ অবস্থা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের জীবনের নিরাপত্তা নেই, সম্পদের নিরাপত্তা নেই। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে মানুষের নিরাপত্তা ও জীবন মানের উন্নয়ন নিশ্চিত করা। সেজন্যই দেশের মানুষ সরকারকে দেশ চালাতে টাকা পয়সা দেয়। সরকারের বাড়ি. গাড়ি, থাকা-খাওয়া নিশ্চিত করে দেশের গরিব মানুষ। সরকার দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা ও উন্নয়নের পরিবর্তে নিজেদের নিরাপত্তা ও উন্নয়ন নিয়ে ব্যস্ত। পুলিশসহ সব বাহিনীর লোক বাড়ছে, জনবল দ্বিগুণ করা হচ্ছে। তারপরও কেন এত আগুন লাগবে? এত ক্ষয়ক্ষতি হবে? কেন চুরি-ছিনতাইয়ের শিকার হতে হবে? কেন সরকারি দলের নেতাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ অপমাণিত হবে? আপনাদের উন্নয়ন হবে, দেশে-বিদেশে বাড়ি হবে এজন্য তো আমরা আপনাদের রাখি নাই। দেশের মানুষের জান ও মালের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সরকারকে কাজ করতে হবে।
জিএম কাদের বলেন, ক্ষমতায় থাকার জন্য বাহিনী বাড়ানো হচ্ছে, পোস্ট নেই কিন্তু প্রমোশন দেওয়া হচ্ছে। গাড়ি-বাড়ি দেওয়া হচ্ছে শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য। মানুষের অবস্থা দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। আমরা রেশনিং এর ব্যবস্থা করতে বলেছি। কিন্তু মাসে এক বা দুইবার কার্ডের মাধ্যমে নিত্যপণ্য সরবরাহ করছে। এতে মানুষের খুব কম চাহিদা মিটছে।
এসময় জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, ৩২ বছরেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ঠিক করতে পারেনি কোন প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হবে। আওয়ামী লীগ চায় কোন পদ্ধতিতে ক্ষমতায় থাকা যাবে। আর বিএনপি চায় তাদের নেতার মুক্তি আর কিভাবে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে। দেশের মানুষের জন্য তাদের কোনো চিন্তা নেই।
সভাপতির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও মহানগর দক্ষিণ এর সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেন, আগামী দিনে রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির উজ্জ্বল ভবিষ্যত রয়েছে। জাতীয় পার্টি দেশের মানুষকে উন্নয়ন ও সুশাসন দিয়েছিল। তাই দেশের মানুষ আবারও জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে কেউ চক্রান্ত করলে তাকে ক্ষমা করা হবে না।
জাতীয় পার্টি কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এর সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি’র সভাপতিত্বে এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের এর সাধারণ সম্পাদক জহিরুল আলম রুবেলের পরিচালনায় এই অনুষ্ঠানে ইফতার পূর্ব আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক এ আদেল, প্রাদেশিক বিষয়ক সম্পাদক মো. খোরশেদ আলম খুশু, কেন্দ্রীয় সদস্য মো. মাহবুবুর রহমান খসরু, মো. শাহজাহান মিয়া।
এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, এটিইউ তাজ রহমান, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, আলমগীর সিকদার লোটন, মোস্তফা আল মাহমুদ, চেয়ারম্যান এর উপদেষ্টা নুরুল ইসলাম ওমর এমপি, খলিলুর রহমান খলিল, ভাইস-চেয়ারম্যান সালমা হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, লুৎফর রেজা খোকন, এইচ এম শাহরিয়ার আসিফ, যুগ্ম-মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, বেলাল হোসেন, এড. আব্দুল হামিদ ভাসানী, সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য নির্মল দাস, নাসির উদ্দিন সরকার, মো. হেলাল উদ্দিন, এনাম জয়নাল আবেদীন, আবু জায়েদ আল মাহমুদ মাখন সরকার, সুলতান মাহমুদ, গোলাম মোস্তফা, আহাদ ইউ চৌধুরী শাহিন, যুগ্ম সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য আজহারুল ইসলাম সরকার, সুজন দে, আক্তার হোসেন দেওয়ান, এমএ সোবহান, সরফুদ্দিন আহমেদ শিপু, মাশুক রহমান, সমরেশ মণ্ডল মানিক, শেখ মো. দ্বীন ইসলাম, শাহনাজ পারভিন, ইব্রাহিম আজাদ, কেন্দ্রীয় সদস্য কাজী মামুন, সোলায়মান সামি, শেখ মো. সরোয়ার, জায়েদুল ইসলাম জাহিদ, অ্যাডভোকেট মো. আবু ওয়াহাব, অ্যাড. মো. নজরুল ইসলাম, আব্দুর রহিম।
বাংলাদেশ সময়: ২২৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০২৩
এসএমএকে/আরএ