নড়াইল: জেলায় টিসিবির পণ্য প্রথম কয়েক দফা কার্ড অনুযায়ী নিতে পারলেও গত ৪ কিস্তি ধরে কার্ড খুজে পাচ্ছেন না অনেকেই। বর্তমানে এখানে সেখানে ধর্না দিয়েও ফিরে পাননি হারিয়ে যাওয়া কার্ড।
একারণে কয়েকমাস সরকারি ভর্তূকি মূল্যে মালামাল নিতে না পারায় ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। এ নিয়ে ডিলারকে মারধোরের ঘটনাও ঘটেছে। এর মধ্যে টিসিবি কার্ড চুরির অভিযোগ করেছেন কার্ডধারীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের মার্চ মাস থেকে ছবিসহ কার্ড তৈরি করে টিসিবি পণ্য বিতরণ করে। ৫১ জন ভ্রাম্যমান ডিলারের মাধ্যমে জেলায় ৪৫ হাজার ৫শত ৯১জন তালিকাভূক্ত ভোক্তা এসব পণ্য পাচ্ছেন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৩ হাজার ৮০, লোহাগড়ায় ১০ হাজার ১০১ ও কালিয়ায় ১১ হাজার ৭৮ জন।
এছাড়া নড়াইল পৌরসভায় ৫ হাজার ৫৬৭, কালিয়া পৌরসভায় ৩ হাজার ৮৫ এবং লোহাগড়া পৌরসভায় ২ হাজার ৬৮০জন তালিকাভূক্ত কার্ডধারী রয়েছেন।
সরকারী ভর্তুকি মূল্যে রমজান মাসে ২লিটার তেল, ২ কেজি চিনি, ২ কেজি মুশুরের ডাউল এবং ১ কেজি ছোলা পাচ্ছেন।
সূত্র জানায়, পণ্য বিতরণে পৌরসভা এলাকাগুলোতেই এ অনিময় বেশি। নড়াইল পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে টিসিবির ৫ হাজার ৫৬৭ তালিকাভূক্তের দেড় হাজারের বেশি টিসিবি পণ্য ঠিকমতো পাচ্ছেন না।
নিম্ন আয়ের তালিকাভূক্ত কার্ডধারীরা জানিয়েছেন, প্রথমবার টিসিবি পণ্য নেওয়ার পর তাদের কার্ড আর ফেরত দেওয়া হয়নি। এখন কাউন্সিলররা তাৎক্ষনিক যাদের স্লিপ বিতরণ করছেন তারাই পণ্য পাচ্ছে। এদিকে টিসিবি পণ্য বিক্রির সময় কয়েক বিক্রয় কর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে।
পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের দূর্গাপুর এলাকায় প্রখর রোদের মধ্যে প্রায় ৪০-৫০ জন লাইনে দাড়িয়ে রয়েছেন টিসিবির পণ্য নেওয়ার জন্য। ট্রাকের পাশে বসে থাকা টিসিবির তালিকাভূক্ত গৃহিনী নিপা বেগম ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, প্রায় এক বছর আগে প্রথমবার টিসিবি পণ্য তোলার সময় ডিলার কার্ড নিয়ে যায়। তারপর আর মাল পাইনি। কাউন্সিলর ইপি রাণী বিশ্বাসের একটি স্লিপ দেওয়ার কথা রয়েছে বলে বসে রয়েছি।
একই সমস্যায় পড়া হাফিজুর রহমান (৬০), জামান শেখ (৫০), মিজানুর রহমান (৫০), ফিরোজা বেগম, মরিয়ম বেগমসহ অনেকই জানান, কার্ডের জন্য স্থানীয় কাউন্সিলর আনিসের কাছে গেলে তিনি কোনো সদুত্তর দেয়না। বরং তিনি এখন তার পছন্দের ব্যক্তিদের স্লিপ দেয়।
ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিচুর রহমান বলেন, আমার ওয়ার্ডের ১৫৭টি কার্ড ডিসি অফিস থেকে হারিয়ে গেছে। এখন স্লিপের মাধ্যমে টিসিবি পণ্য দেওয়া হচ্ছে। কিছু সমস্যা হচ্ছে। তবে এখন গরীব থেকে বড়ো লোকরাই বেশি টিসিবি পণ্য নিচ্ছে। যার দোতলা পাকা বাড়ি রয়েছে তারাও মাল নিচ্ছে। কার্ডগুলোর নামের তালিকা পৌরসভায় নেই বলে জানান তিনি।
৩ নম্বর ওয়ার্ডের মহিষখোলা এলাকার বাসিন্দা গৃহকর্মী তহুরন বেগম এবং পুরোনো বাজার এলাকার মাসুম বিল্লাহ, পারভিন সুলতানা, মাহামুদা জানান, দুই বার টিসিবি পণ্য নেওয়ার সময় ডিলার কার্ড জমা নিলেও পরে আর ফেরত পাইনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক টিসিবির ডিলার বলেন, পণ্য দেওয়ার পর স্থানীয় কাউন্সিলর বা ইউনিয়ন মেম্বরকে কার্ড ও স্লিপ দিয়ে দেই। তারা কার্ড বুঝে না নিলে তা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ফেরত দেই। মেম্বর-কাউন্সিলররাই অপছন্দের ব্যক্তিদের কার্ড আউট করে দিয়ে পছন্দের লোকদের স্লিপ দিয়ে থাকেন। কখনও কখনও একজন ব্যক্তি ১০-১৫টি স্লিপ নিয়ে পণ্য নিতে আসে।
জেলা মৎসজীবী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর টিসিবি পণ্য নিজের বাড়ীর আঙ্গিনায় দিচ্ছে, যাতে পণ্য সরাতে সুবিধা হয়। তালিকাভূক্ত ভোক্তাদের কার্ড কাউন্সিলর নিজেদের কাছে জমা রেখে এখন পছন্দের ব্যক্তিদের স্লিপের মাধ্যমে টিসিবি পণ্য দিচ্ছে।
পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মলয় কুন্ডু বলেন, নিন্ম আয়ের টিসিবির কার্ডধারী অনেকেই টিসিবি পণ্য না পাবার অভিযোগ করেছেন। তাদের কার্ড গায়েব হয়ে গেছে। অনিয়মের কারণে সরকারি এত সুন্দর উদ্যোগ ভেস্তে যেতে বসেছে।
এ বিষয়ে নড়াইল পৌর মেয়র আনজুমান আরা বলেন, ২য় দফা বিতরণের সময় থেকেই ডিলারের কাছ থেকে কার্ড হারিয়ে গেছে। কোনো ওয়ার্ডের ৮’শ কার্ড থাকলে সেখানে ২’শ কার্ড নেই। এরকম অনিয়ম পেয়েছি, তবে যাদের কার্ড হারিয়ে গেছে তাদের স্লিপের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে।
টিসিবির দ্বায়িত্বে থাকা নড়াইলের অতিঃজেলা প্রশাসক(সার্বিক) ফকরুল হাসান বলেন, ২য় দফার পরে কোনো কোনো ইউনিয়ন পরিষদ নিজ উদ্যোগে কার্ড তৈরি করে দিয়েছেন। সেখানে ভালোভাবেই চলছে। নড়াইল পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের কিছু কার্ড হারিয়ে যাওয়ার কথা আমরা শুনেছি। পৌরসভায় মনিটরিং এর অভাব রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২৩
এসএম