ঢাকা: প্রভাতের স্নিগ্ধ আলোয় সূচনা হয়েছে নতুন বছরের। প্রকৃতিতে ধরা দিয়েছে নবরূপ।
শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নিতে রাজধানীর রমনা পার্ক, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও টিএসসিতে নেমেছে সাধারণ মানুষের ঢল। ছোট-বড়, নারী-পুরুষ নির্বিশেষ প্রায় সবাই ধারণ করেছেন বৈশাখী সাজ।
ছেলেদের বেশির ভাগের গায়ে সাদা-লালসহ বিভিন্ন রঙের পাঞ্জাবি, মেয়েদের পরনে শাড়ি। কারো মাথায় গামছা, কারো হাতে নানা রঙের চুড়ি। কেউ গালে-হাতে এঁকেছেন নানা রঙের আল্পনা, তো কারো খোঁপায় ঝুলছে ফুলের মালা। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই বাঙালিয়ানা সাজ দিয়ে বরণ করে নিচ্ছে বাংলা নববর্ষকে।
স্ত্রী ন্যান্সি রূপা ও মেয়ে তালহাকে নিয়ে রমনায় বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে এসেছেন পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন বাবু। তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখ আমাদের বাঙালিয়ানার একটি অংশ, আমাদের ঐতিহ্য। সারা বছর আমরা এই দিনটিকে বরণ করে নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করি। তাই এই দিনটিতে আমরা আমাদের বাঙালিয়ানা পোশাক শাড়ি-পাঞ্জাবি পরে ঘুরতে বের হই। এই পোশাক আমাদের সংস্কৃতি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার সামনে কথা হয় কানাডার ইমেগ্রেশন কনসালট্যান্ট সুপ্রীয় কুমার চক্রবর্তীর সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বৈশাখের অন্যতম আকর্ষণ কৃষ্ণচূড়া ফুল। বাঙালির প্রিয় ফুলেরও একটি এটি। তাই পহেলা বৈশাখে নারী পুরুষ সকলের পোশাকে ফুটে উঠে কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙ।
সঙ্গীতশিল্পী লিপিকা তাপসী বলেন, ছোটবেলায় পহেলা বৈশাখে আমরা রঙ খেলতাম। নতুন পোশাক পরে সেজে ঘর থেকে বের হতাম। এটি বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। সেই সংস্কৃতি ধরে রাখতেই আমরা বাঙালিরা এখনো পহেলা বৈশাখে শাড়ি-পাঞ্জাবি পরে বের হয়। মেতে উঠি প্রাণের উৎসবে।
ছায়ানটের কর্মী তিথি সাহা বলেন, নতুন বছর মানে নতুন উদ্যমে পথচলা শুরু করা। জরাজীর্ণ ঝেড়ে ফেলে নতুনকে বরণ করে নেওয়া। তাই এদিন নতুন শাড়ি পরে আমরা নতুন বছরকে বরণ করে নিই। এটি আমাদের সংস্কৃতি।
জীর্ণতাকে ঘুচিয়ে নতুনের আহ্বানে এদিন সকালে রমনার বটমূলে শুরু হয় নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার অনুষ্ঠান। আহির ভৈরব সুরে সারেঙ্গি বাদনের মধ্য দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয় বাংলা ১৪৩০ সালকে। এরপর প্রকৃতির গান, মানবপ্রেম ও দেশপ্রেম ও আত্মবোধন-আত্মজাগরণের সুরবাণী দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানান ছায়ানটের শতাধিক শিল্পী।
প্রতিবছরের মতো এবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি- প্রতিপাদ্য নিয়ে সকাল ৯টায় বের হয় এই মঙ্গল শোভাযাত্রা। হামলার হুমকি উপেক্ষা করে এই শোভাযাত্রায় অংশ নেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজারো মানুষ।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২৩
এসসি/আরএইচ