ঢাকা: রমজানের আগে ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ার পেছনে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যে কারণ দেখিয়েছে, তা সত্যতা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
তিনি বলেন, ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ার কারণ হিসেবে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছে, ফিড, বাচ্চা ও ওষুধের দাম বেড়েছে।
শনিবার (১৫ এপ্রিল) ‘বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রধান কারণ’ বিষয়ে আয়োজিত এক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) এই ছায়া সংসদের আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।
অনুষ্ঠানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ডিজি বলেন, রমজানের আগের ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনকারী চারটি বড় প্রতিষ্ঠান ভোক্তা অধিদপ্তরের অফিসে এসে ঘোষণা দিয়ে একদিনে ৮০ টাকা দাম কমিয়ে দিয়েছে। এরপর বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম আরও কমে গেল। ১৯৫ টাকা ঘোষণা দিয়ে তারা ১৫৩ টাকা করে প্রতিকেজি মুরগি বিক্রি করেছে। এটা ছোট খামারিদের ধ্বংস করার জন্য করা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে আমরা কাজ করছি।
এ সময় তিনি ভোক্তার অধিকারের জন্য ভোক্তাকেই আওয়াজ তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভোক্তারা যদি সচেতন না হয়, নিজের অধিকারের কথা নিজে প্রতিষ্ঠা না করে, তাহলে শুধু ভোক্তা অধিদপ্তর দিয়ে এটি কখনোই সম্ভব নয়। আমরা শুধু প্রতীকী অভিযান করে মানুষের সামনে বিষয়গুলো তুলে ধরছি।
বিতর্ক প্রতিযোগিতার বিষয সম্পর্কে এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, আমরা ধান, চাল, সবজি, মাছ, মাংসের মতো অনেকগুলো পণ্য উৎপাদন করতে পারি। কিন্তু ভোজ্যতেল, চিনি, মসুর ডাল, মসলাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় আরো অনেকগুলো পণ্য আমাদের আমদানি করতে হয়। এর ফলে বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিত দ্রব্যমূল্যের ওপর প্রভাব ফেলে। এটা শুধু বাংলাদেশ নয়, উন্নত দেশগুলোতেও এই মন্দা চলছে।
তিনি বলেন, দেশের দ্রব্যমূল্য বাড়ার পেছনে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট যেমন আছে, তেমনি আমাদের অভ্যন্তরীণ অনেক বিষয়েও অসঙ্গতি আছে। দ্রব্যমূল্য বাড়ার পেছনে আমাদের কর্পোরেট কালচারও দায়ী। তেল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেকগুলো পণ্যের নিয়ন্ত্রণ চার-পাঁচটি বড় বড় প্রতিষ্ঠানের হাতে চলে যাচ্ছে। এজন্য নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে যায়।
ডিজি আরো বলেন, আমাদের দ্রব্যমূল্য বাড়ার আরেকটি কারণ ব্যবসায়ীদের মানিসকতা। প্রতিটি পণ্যে তাদের অতি মুনাফা লাভ করতে হবে। এজন্য তারা পণ্যের দাম বাড়িয়ে বাজারকে অস্থিতিশীল করে তোলে। এতে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
দ্রব্যমূল্য বাড়ার পেছনে সাধারণ ভোক্তাদেরও দায়ী করে তিনি আরও বলেন, এবার রমজানের প্রথম দিন দুপুরে ৪০ টাকার বেগুন ১শ টাকা হয়ে গেল। কারণ ভোক্তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। রমজানে দাম বেড়ে যাবে এই ভয়ে ভোক্তারা এক কেজির জায়গায় পাঁচ কেজি বেগুন কিনেছে। এই জায়গায় আমাদের সচেতন হতে হবে। নাহলে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ কখনোই সম্ভব নয়। প্রতিটি পণ্যের চাহিদা আছে। সেই চাহিদা যদি হঠাৎ করে কয়েকগুণ বেড়ে যায়, তাহলে তো অসাধু ব্যবসায়ী-সিন্ডিকেট সুবিধা নেবে। ভোক্তা অধিদপ্তর বাজার মনিটরিং করে এসব সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য সুপারিশ করতে পারে শুধু। কারণ আমাদের আইনে অনেক সীমাবদ্ধতা আছে।
বিতর্ক প্রতিযোগিতার সভাপতিত্বে করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য বাড়ার জন্য বৈশ্বিক পরিস্থিতিকে দায়ী করা হলেও প্রকৃতপক্ষে সুশাসনের অভাব এবং সরকারি সংস্থাগুলোর অদক্ষতা ও সমন্বয়হীনতা এজন্য কম দায়ী নয়। বাজার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা দুর্নীতি। মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা সবসময়ই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে প্রতারিত করে। ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী শিল্পমালিকরাও ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে সুকৌশলে তেল, চিনি, ডিম, মুরগির দাম বাড়িয়ে দেয়। তা প্রতিরোধে আরও শক্তিশালী বাজার মনিটরিং টিম গঠন ও বাস্তবায়ন করা জরুরি।
তিনি আরো বলেন, প্রভাবশালী এসব বাজার সিন্ডিকেটকারীদের শাস্তি দেওয়া না গেলে অন্যান্যরা প্রশ্রয় পেতে থাকবে। অনিয়ম করতে ভয় পাবে না। এ সময় তিনি দ্রব্যমূল নিয়ন্ত্রণে ১০ দফা সুপারিশ তুলে ধরেন।
‘বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিই দ্রব্যমূল্য বাড়ার প্রধান কারণ’ বিষয়ক এই ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সরকারি দল হিসেবে অংশগ্রহণ করে স্টেট ইউনিভার্সিটি ও বিরোধী দল হিসেবে অংশগ্রহণ করে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি। প্রতিযোগিতায় সরকারি দল বিজয় লাভ করে। প্রতিযোগিতা শেষে তাদের হাতে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি তুলে দেওয়া হয়।
প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে ছিলেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের বিজনেস এডিটর উম্মান নাহার আজমী, একাত্তর টিভির বিজনেস প্রোগ্রাম হোস্ট জুলিয়া আলম, দৈনিক প্রথম আলোর অর্থনৈতিক প্রতিবেদক আরিফুর রহমান, ড. এস এম মোর্শেদ, অধ্যাপক ড. শাহ আলম চৌধুরী প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০২৩
এসসি/এএটি