ঢাকা, শুক্রবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ফুলগাজীতে ট্রান্সফরমার চুরির হিড়িক!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০১ ঘণ্টা, মে ৮, ২০২৩
ফুলগাজীতে ট্রান্সফরমার চুরির হিড়িক!

ফেনী: ফেনীর ফুলগাজীতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বসানো ইরিগেশন সেচ প্রকল্পের বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরির হিড়িক পড়েছে।  

শুধুমাত্র এপ্রিল মাসেই অন্তত ১৫টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে।

বিদ্যুৎ সংকটে জমিতে পানি দিতে না পেরে এ নিয়ে কৃষকদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসিনতা সচেতনদের ভাবিয়ে তুলেছে।
 
পাউবো জানায়, সিলোনীয়া নদী থেকে পানি উত্তোলন করে চাষাবাদের জন্য ফুলগাজীর বিভিন্ন ইউনিয়নে ইরিগেশন সেচ প্রকল্প চালু করে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড।

অনাবাদী জমি চাষাবাদের আওতায় এনে উৎপাদন বাড়ার লক্ষ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন চালু করা হয়। প্রকল্প এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে পানি উত্তোলনের জন্য বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার স্থাপন করে পাউবো। কিন্তু গত কয়েকমাস ধরে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হয়ে যাচ্ছে। যেসব এলাকায় বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হচ্ছে ওইসব এলাকায় বিদ্যুৎহীনতায় নদী থেকে পানি তোলা যাচ্ছে না।  

এতে করে বোরো মৌসুমে প্রকল্পের আওতায় সেচ সংকটে ফসলি জমি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। জমিতে পানি দিতে না পেরে স্থানীয় কৃষকরা দিশেহারা হয়ে দুশ্চিন্তায় দিনাতিপাত করছে।  

কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড অথবা অন্য কোনো সরকারি দপ্তর ট্রান্সফরমার চুরি রোধ ও পুনরায় ট্রান্সফরমার স্থাপনে তেমন কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।
 
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, শুধুমাত্র এপ্রিল মাসেই অন্তত ১৫টি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। তন্মধ্যে ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের গোসাইপুর গ্রামে ৩টি, গাবতলা গ্রামে ৬টি, দৌলতপুর গ্রামে ৩টি ও মুন্সীরহাট ইউনিয়নের তারালিয়া গ্রামে ৩টি। চুরি হওয়ার পর এসব ট্রান্সফরমার উদ্ধার অথবা পুনরায় চুরি ঠেকাতে তেমন তৎপর দেখা যাচ্ছে না। পাউবো থেকে দায়সারার জন্য থানায় একটি ডায়েরি করা হলেও সবাই যেন নিশ্চুপ ভূমিকায় রয়েছে।
 
স্থানীয় কৃষকদের ধারণা, পাশাপাশি এলাকায় পল্লী বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার রয়েছে। সেগুলো কখনোই চুরি হয় না। কিন্তু উদ্বেগজনক হারে পাউবোর বসানো ট্রান্সফরমারগুলো চুরির ঘটনা ঘটছে। এ ঘটনায় স্থানীয় অসাধু চক্রের সঙ্গে পাউবো ও পল্লী বিদ্যুতের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত থাকতে পারেন।   
 
ফুলগাজীর গোসাইপুর ইরিশেন সেচ প্রকল্পের পরিচালক মো. অহিদুন নবী জানান, ২০ এপ্রিল রাতে তার স্কিমের ৩টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়। সকালে গিয়ে দেখি ট্রান্সফরমারের ভেতরের কয়েল ও তেলগুলো নিয়ে গেছে। পরে আমি বিষয়টি পাউবোকে অবহিত করি।  

তিনি জানান, একদিকে অনাবৃষ্টি অন্যদিকে নদীতে পানি সংকটে কৃষকের কপালে চিন্তার ভাজ স্থায়ী হয়ে বসে আছে। তারপর ইরিগেশনের ট্রান্সফরমার চুরি যেন ‘মরার উপর খড়ার ঘা’।

ফুলগাজী সদর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. সেলিম বলেন, সেচ প্রকল্পের স্কিমের আওতায় স্থাপিত ট্রান্সফরমার চুরির পর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বিষয়টি জানাতে এসেছিলেন। আমি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানিয়ে প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছি।  

তিনি বলেন, গত একমাসে শুধু তার ইউনিয়নে অন্তত ১২টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ায় কৃষকরা জমিতে পানি তুলতে পারছে না। এতে করে সেচ প্রকল্পের আওতাধীন বোরো ফসলের মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে।
 
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (বিডব্লিউডিবি) রাশেদ শাহরিয়ার জানান, ফুলগাজীতে ইরিগেশন সেচ প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত ১৭টি চুরি হয়েছে। এ বিষয়ে ফুলগাজী থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
 
ফুলগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল হাসিম বলেন, ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা তদন্ত করা হচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০২৩
এসএইচডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।