ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বোঝা মনে করে ফেলে যায় পরিবার, পুলিশ পেল মরদেহ

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০২ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০২৩
বোঝা মনে করে ফেলে যায় পরিবার, পুলিশ পেল মরদেহ

ঢাকা: আজিমপুর কবরস্থানের সামনে ফেলে যাওয়া মৃত সেই বৃদ্ধের পরিচয় জানতে পেরেছে পুলিশ। তার নাম আব্দুর রশিদ খাঁ (৮০)।

বার্ধক্যজনিত রোগে ভোগার কারণে তিনি চলাফেরা করতে পারতেন না। মল-মূত্র সব বিছানায় করতেন। পুলিশ ধারণা করছে, পরিবারের সদস্যরা ওই বৃদ্ধকে বোঝা মনে করে আজিমপুর কবরস্থানের সামনে রাস্তায় ফেলে যায়। অবশেষে সেখানেই তিনি মারা যান।

শনিবার (০৩ জুন) রাত পৌনে ১টার দিকে ওই বৃদ্ধের পরিচয়টি নিশ্চিত করেন শুরু থেকেই লেগে থাকা লালবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হুজাইফা হোসাইন।

তিনি জানান, শনিবার বিকেলে আজিমপুর কবরস্থান এক ও দুই নম্বর গেটের মধ্যবর্তী স্থান থেকে ওই বৃদ্ধকে অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে পরীক্ষার পরে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসকরা জানান, হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা গেছেন।

তখন তার কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি। পরে পুলিশ তদন্ত করে তার পরিচয় পায়। এক্ষেত্রে তারা শরণাপন্ন হয় সিআইডির ক্রাইম সিনে। তারা ওই মৃত বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তির ফিঙ্গারপ্রিন্টে মাধ্যমে নাম ঠিকানা বের করেন। ওই ঠিকানার সূত্র ধরেই পুলিশ খুঁজতে থাকে তার স্বজনদের। এক পর্যায়ে পুলিশ জানতে পারে বরিশাল সদর ৯ নম্বর ওয়ার্ড কর্নকাঠি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রশিদ খাঁ। পরে পুলিশ ওই ব্যক্তির ছেলে নাতির সঙ্গে কথা বলে।

তাদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ মোটামুটি নিশ্চিত হয় যে, আব্দুর রশিদ খাঁ বার্ধক্যজনিত কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ছিলেন। ধারনা করা হচ্ছে, এই বয়সে তাকে বোঝা মনে করে রাস্তায় ফেলে যান তারা। তবে আজিমপুর ফেলে যাওয়ার আগে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে এক সন্তানের বাসায় থাকতেন আব্দুর রশিদ খাঁ।

তিনি আরও বলেন, শনিবার সকালে কবরস্থানের সামনে ওই বৃদ্ধের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। ক্ষুধার্ত ও দুর্বল আব্দুর রশিদ খাঁ ইশারায় বারবার কি যেন বলতে চেয়েছেন, কিন্তু বুঝতে পারেনি। তাকে খাওয়ানোর চেষ্টাও করা হয়েছে। অতঃপর বিকেলের দিকে ওই বৃদ্ধ অচেতন হয়ে পড়েন। এই সংবাদে দ্রুত সেখানে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তিনি মারা যান।

পুলিশ কর্মকর্তা হুজাইফা হোসাইন বলেন, যতটুক জানা গেছে, আব্দুর রশিদ খায়ের দুই পরিবার ছিলেন। তার দুই পরিবারের বেশ কয়েকজন সন্তান ও নাতি-নাতিরাও আছেন। পরে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল মর্গ থেকে আব্দুর রশিদ খায়ের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম মোর্শেদ জানান, বয়োজ্যেষ্ঠ লোকটিকে বোঝা মনে করে পরিবার ফেলে গিয়েছে এরকম প্রশ্ন আমাদেরও। কিন্তু তার পরিবারের লোকজন বিষয়টা অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, আব্দুর রশিদ খা এক পাশে প্যারালাইসিস হলেও অন্য পাশে ভর দিয়ে মাঝে মাঝে সবার অগোচরে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেন। তেমনি কয়েকদিন আগে তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে যান। কিন্তু তার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনো নিখোঁজের জিডি করা হয়নি।

আরও পড়ুন: রাজধানীতে ট্রেনের ধাক্কায় নিহত ১, ফুটপাতে ফেলে যাওয়া বৃদ্ধের মৃত্যু

বাংলাদেশ সময়: ০২০০ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০২৩
এজেডএস/এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।