ঢাকা, বুধবার, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

প্রথমে রেকি এরপর চাদরে আড়াল করে চুরি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২২ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০২৩
প্রথমে রেকি এরপর চাদরে আড়াল করে চুরি

ঢাকা: রাজধানীতে স্বর্ণের দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে চুরি করে আসছিল একটি চক্র। প্রথমে তারা টার্গেট নির্ধারণ করে কয়েকদিন রেকি করে দোকান কখন খোলা বা বন্ধ থাকে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেন।

আশেপাশের লোকজনের আনাগোনা কম থাকলে সুযোগ বুঝে চাদর দিয়ে দোকানটি আড়াল করে চুরি করতেন চক্রের সদস্যরা।

এর আগে ১৪ এপ্রিল রাজধানীর ভাটারা থানাধীন ১০০ ফিট রোডের মাদানী অ্যাভিনিউয়ের হাজী ম্যানশনের নিচতলার নূর জুয়েলার্সে করা চুরির ঘটনায় এই চক্রের আট সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তাররা হলেন-মো. শরীফ ওরফে জামাই শরীফ, মো. আমির হোসেন ওরফে মোটা আমির, মো. ইয়াছিন আরাফাত মোল্লা ওরফে কানা মোটা ইয়াছিন, মো. ফারুক, মো. নুরে আলম সুমন ওরফে ডিবি সুমন, মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে আব্দুল্লাহ, মোকাররম হোসেন ওরফে রুবেল ওরফে মনির হোসেন ওরফে মনু ও মো. পারভেজ।

বুধবার (১৪ জুন) কুমিল্লা, ব্রাক্ষণবাড়িয়া ও নারায়ণগঞ্জসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ সময় তাদের কাছ থেকে চুরি হওয়া দুই ভরি স্বর্ণ, স্বর্ণ বিক্রির ১২ লাখ টাকা এবং তালা কাটার যন্ত্রপাতি, চুরির কাজে ব্যবহৃত তিনটি ছাতা উদ্ধার করা হয়।

বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান।

মশিউর রহমান বলেন, গত ১৪ এপ্রিল দুপুরে ভাটারা থানাধীন ১০০ ফিট রোডের মাদানী এভিনিউর হাজী ম্যানশনের নিচতলার নূর জুয়েলার্সের মালিক ও কর্মচারীরা দোকানে তালা লাগিয়ে পাশের মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করার জন্য যান। নামাজ শেষে দোকানে এসে দেখতে পান দোকানের গেইট ও সাটারে দেওয়া তালাগুলো কাটা। পরে মালিকসহ দোকানের কর্মচারীরা ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পান স্বর্ণালংকারের বক্সগুলো এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে এবং দোকানের ট্রেতে রাখা কোনো স্বর্ণালংকার আর নেই।

তারা হিসাব করে দেখতে পান প্রায় ১৮৬ ভরি স্বর্ণালংকার এবং ক্যাশে থাকা নগদ ৫০ হাজার টাকা তালা চুরি হয়েছে। এ ঘটনায় ভাটারা থানায় একটি মামলা (৩৩) দায়ের করা হয়।

মামলার তদন্তের বিষয়ে তিনি বলেন, ডিবি লালবাগ টিম মামলাটি প্রায় দুই মাস তদন্ত করে ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে ১৩ জন আসামিকে শনাক্ত করে। পরে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ এই চোর চক্রের আট সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

চুরির কৌশলের বিষয়ে মশিউর রহমান বলেন, তারা কোনো একটি প্রতিষ্ঠানে চুরি করার আগে ওই এলাকায় কয়েক দিন অবস্থান করেন। পায়ে হেঁটে, রিকশায় চড়ে এলাকা রেকি করেন। প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মচারীরা কোথায় যান, কতক্ষণ অবস্থান করেন তাও পর্যবেক্ষণ করেন। ঘটনার দিন মালিক-কর্মচারীরা প্রতিষ্ঠান বাইরে থাকাকালীন ছাতা বা চাদর দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সামনে এক ধরনের আড়াল করে তালা কেটে ভেতরে গিয়ে শাটার বন্ধ করে দেন। চুরি শেষ হওয়া পর্যন্ত চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন অবস্থানে সতর্ক থেকে ছাতা এবং চাদর দিয়ে আড়াল তৈরি করে রাখেন।

নির্দিষ্ট কিছু দোকানে তারা চোরাই স্বর্ণালংকার কম দামে বিক্রি করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, চক্রটি চুরি করা স্বর্ণ ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা ভরিতে অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়।

চক্রটি ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেটের মানি এক্সচেঞ্জ, জুয়েলারি সপ, টায়ার টিউবের আড়ত, লাইট হাউসে বিশেষ কায়দায় তালা কেটে, শাটার ভেঙে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার চুরি করেছেন। এই চক্রের সঙ্গে ব্যবসায়ীরা জড়িত রয়েছে কি না এ বিষয়ে গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলেও জানান ডিসি মশিউর।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০২৩ 
পিএম/এসআইএস 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।