ঢাকা, বুধবার, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘জেন্ডার সমতা ও সমনাগরিকত্ব প্রতিষ্ঠা’ বিষয়ক সেমিনার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৯ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০২৩
‘জেন্ডার সমতা ও সমনাগরিকত্ব প্রতিষ্ঠা’ বিষয়ক সেমিনার

ঢাকা: বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস (সিপিজে) ও পিস ক্যাফের যৌথ উদ্যোগে ‘জেন্ডার সমতা ও সমনাগরিকত্ব প্রতিষ্ঠায় গণতান্ত্রিক ও ইহজাগতিক মূল্যবোধ’ বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে সেমিনারে সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের (বিএনপিএস) পরিচালক শাহনাজ বেগম সুমি।

এতে আলোচনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এস এম আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সেউতি সবুর এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস-এর একাডেমিক অ্যান্ড লিগ্যাল এমপাওয়ারমেন্টের পরিচালক শাহরিয়ার সাদাত।

সেমিনারে বক্তব্য রাখেন পিস ক্যাফের সভাপতি তাহমিনা হাবিবা এবং সমাপনী বক্তব্য দেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়েররর স্টুডেন্ট লাইফের যুগ্ম পরিচালক তাহসিনা রহমান।

সভাপ্রধানের বক্তব্যে শাহনাজ বেগম সুমি বলেন, গণতন্ত্র নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী ও জনগণের মধ্যে কতগুলো ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। বেশির ভাগ মানুষ গণতন্ত্র বলতে কেবল ভোটের অধিকার বোঝে। নারীরা দেশের মোট জনগণের ৫০ শতাংশ। তাদের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কোথায়? সংখ্যায় অল্প জনগোষ্ঠীসহ সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কোথায়? মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে অর্জিত সংবিধান রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের সমান মর্যাদা দিয়েছে এবং ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, লিঙ্গ বা জন্মস্থানের কারণে রাষ্ট্র কারো প্রতি কোনো বৈষম্য করবে না বলে অঙ্গীকার করেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পরেও এখনো ঐতিহ্যগতভাবে সম্প্রীতিপূর্ণ এই দেশটিতে ধর্মের ভিত্তিতে মানুষে-মানুষে বিভাজন সৃষ্টি করে বিদ্যমান পুরুষতান্ত্রিক বৈষম্যমূলক ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করা হচ্ছে। ধর্মকে সুকৌশলে রাজনীতিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য অসহিষ্ণুতা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও জনমত গড়ে তোলা খুবই জরুরি। যুবসমাজ এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

অধ্যাপক ড. এ এস এম আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, সমাজ ও সংস্কৃতি নারী ও পুরুষে ভেদাভেদ সৃষ্টি করেছে। আমাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ অবস্থান থেকে আত্মপরিচয়ের অনুসন্ধান করতে হবে। হাজার হাজার বছর ধরে যে মানুষগুলোকে আমরা পশ্চাৎপদ করে রেখেছি, তাদের সমতা প্রতিষ্ঠা করার জন্য সমাজের প্রতিটি মানুষের দায় আছে। সমানে সমান মানেই সমতা নয়। সমতা মানে যাদের পিছিয়ে রাখা হয়েছে তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়া। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিই শুধু উন্নয়ন নয়। উন্নয়ন মানে স্বাধীনতা।

শাহরিয়ার সাদাত বলেন, গণতন্ত্র মানে কেবল ভোটের অধিকার নয়। গণতন্ত্র মানে হলো রাষ্ট্রের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া। জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য নাগরিকদের দায়বদ্ধতা আছে। যতদিন পর্যন্ত সমাজ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধারণ করতে পারবে না ততদিন পর্যন্ত প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে না। একই রকমভাবে, জেন্ডার সমতা যদি আমরা নিশ্চিত করতে চাই তাহলে নারী-পুরুষের সমানাধিকারের বিষয়টি সবাইকে অন্তরে ধারণ করতে হবে।

ড. সেউতি সবুর বলেন, নাগরিকত্ব কী, তা যদি আমরা না জানি তাহলে আমরা কী করে নাগরিকের মতো আচরণ করবো? রাষ্ট্র আমাদের মালিকও না, সেবাপ্রদানকারী সংস্থাও না। রাষ্ট্রের কাছ থেকে নাগরিক অধিকার আদায় করে নেওয়া আমাদের দায়িত্ব। জেন্ডার সমতা কেবল নারীদের বিষয় নয়। নারী, পুরুষ, ট্রান্সজেন্ডারসহ সকল লিঙ্গীয় পরিচয়ের মানুষের জন্য একটি সমতাভিত্তিক পরিবেশ তৈরি করাই জেন্ডার সমতার মূলকথা। তাই প্রত্যেককে জেন্ডার সমতা বিষয়ে সচেতন হতে এবং নিজের অধিকার আদায় করে নিতে হবে।

সেমিনারের শেষ অংশে প্রশ্নোত্তর পর্বে শিক্ষার্থীরা বাকস্বাধীনতা, জেন্ডার সমতা, গণতন্ত্র, ইহজাগতিকতা ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৮ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০২৩
এইচএমএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।