ঢাকা: ২০১৩ সালে রাজধানীর মতিঝিলে পুলিশ কনস্টেবল বাদল মিয়া হত্যাকাণ্ডের মূলপরিকল্পনাকারী ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রধান আসামি রিপন নাথ ঘোষকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
র্যাব জানায়, আসামি রিপন বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তারের পেছনে নিহত পুলিশ সদস্য বাদলের হাত রয়েছে বলে মনে করতেন।
শুক্রবার (১৬ জুন) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মতিঝিল টিএন্ডটি কলোনি এলাকা থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এক সদস্যের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে জানা যায়, মৃত ব্যক্তি বাংলাদেশ পুলিশের সদস্য কনস্টেবল বাদল মিয়া।
এ ঘটনায় মতিঝিল থানায় একটি হত্যা মামলা (নং-৩২) দায়ের করা হয়। মামলার তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ৫ এপ্রিল গ্রেপ্তার রিপনকে প্রধান অভিযুক্ত করে মোট পাঁচজনের নামে তদন্তকারী কর্মকর্তা চার্জশিট দাখিল করেন।
বিচারিক কার্যক্রম শেষে আসামিদের নামে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত রিপন নাথ ঘোষসহ মোট পাঁচজনকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) রাতে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে কনস্টেবল বাদল হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি রিপন নাথ ঘোষকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার রিপনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে খন্দকার আল মঈন বলেন, ২০১২ সালের ৯ নভেম্বর মতিঝিলের এজিবি কলোনি এলাকায় একটি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রিপনের অন্যতম সহযোগী তার খালাতো ভাই গোপাল চন্দ্র আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গ্রেপ্তার হয়। এর কিছুদিন পর একটি মাদকবিরোধী অভিযানে রিপন নাথ ও তার একজন সহযোগী মাদকসহ গ্রেপ্তার হয়, যেখানে কনস্টেবল বাদল অভিযানিক দলের সদস্য ছিলেন।
দুই মাস কারাভোগ করে জামিনে বের হয়ে আসেন রিপন। পরে তারা জানতে পারেন, মাদকবিরোধী অভিযানে অংশ নেওয়া কনস্টেবল বাদল মতিঝিল এলাকায় বসবাস করছেন।
ইতোপূর্বে বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তারের পেছনে পুলিশ সদস্য বাদলের হাত রয়েছে বলে আসামিরা সন্দেহ করেন। নির্বিঘ্নে মাদককারবার পরিচালনার জন্য রিপন তার সহযোগীদের নিয়ে কনস্টেবল বাদলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার রিপন বিভিন্ন সময় রেন্ট-এ-কারের প্রাইভেটকার চালানোর সুবাদে তার বিভিন্ন রেন্ট-এ-কারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। কনস্টেবল বাদলকে হত্যার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রিপন ২০১৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে রেন্ট-এ-কার থেকে একটি প্রাইভেটকার ভাড়া নিয়ে নিজে গাড়ি চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া অন্য সদস্যদের নিয়ে কনস্টেবল বাদলের কর্মস্থল শাহবাগ গোলচত্বর এলাকায় যান।
বিশ্বজিৎ ও কনস্টেবল বাদল একই এলাকায় বসবাস করায় ও পূর্ব পরিচিত হওয়ায় কনস্টেবল বাদলকে কৌশলে ডেকে আনার জন্য বিশ্বজিৎকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী বিশ্বজিৎ কনস্টেবল বাদলকে ডেকে এনে কৌশলে প্রাইভেটকারে উঠায়। তারা কনস্টেবল বাদলকে নিয়ে প্রাইভেটকারে করে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে থাকেন এবং তার ওপর শারীরিক নির্যাতন চালান।
এক পর্যায়ে তারা রাজধানীর মতিঝিল কালভার্ট সংলগ্ন নির্জন এলাকায় এসে রিপন নাথ ও তার অন্যান্য সহযোগীরা গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে কনস্টেবল বাদলকে হত্যা করেন। পরে গুম করার উদ্দেশে মতিঝিল টিএন্ডটি কলোনি এলাকায় প্রাইভেটকার থেকে কনস্টেবল বাদলের লাশ ফেলে দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যান।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, গ্রেপ্তার রিপন মতিঝিল এলাকার চিহ্নিত মাদক চোরাকারবারি এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি কনস্টেবল বাদল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার হন। কিন্তু মামলার বিচারকার্য চলমান থাকা অবস্থায় জামিনে বের হয়ে টাঙ্গাইলে আত্মগোপনে চলে যান।
আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তিনি গ্রেপ্তার এড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করতেন এবং কিছুদিন পর পর বাসা পরিবর্তন করতেন। তিনি কখনো স্থায়ীভাবে এক জায়গায় বসবাস করতেন না এবং মাঝে মধ্যে গোপনে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫১ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২৩
পিএম/আরবি