মাদারীপুর: মাদারীপুরে হামলা চালিয়ে সাইফুল ইসলাম (১৫) নামে এক কিশোরের বাম হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
রোববার (১৮ জুন) রাত ৯টার দিকে সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের ছয়না এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সে ছয়না এলাকার দুলাল ফকিরের ছেলে এবং পেশায় রাজমিস্ত্রির কাজ করত।
এদিকে একই এলাকায় বিএম ফয়সাল (২৯) নামে এক ইলেকট্রিশিয়ানকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। তাকেও উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বিএম ফয়সাল শহরের কুকরাইল এলাকার আব্দুল হাকিমের ছেলে।
জানা গেছে, সন্ধ্যায় সাইফুল তার বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে বের হয়। ঘোরাঘুরি শেষে করে সাইফুল বন্ধুদের বিদায় দিয়ে একা তার বাড়ির দিকে ফিরছিল। এ সময় একটি গাড়িতে কয়েকজন দুর্বৃত্ত সাইফুলের গতিরোধ করে। পরে তারা সাইফুলকে নিয়ে একটি নির্জন স্থানে গিয়ে মারধর শুরু করে। এ সময় দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার বাঁ হাতের কবজি কেটে দেয়। সাইফুলের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
পরে স্থানীয় লোকজন সাইফুলকে উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) পাঠানো হয়।
আহত সাইফুল ইসলামের বোন ফারজানা আক্তার বলেন, ‘আমার একটা মাত্র ভাই। তার জীবনটা ওরা নষ্ট করে দিল। ও এখন কী করে চলবে, কী কাম করে খাবে। আমরা ভাই দিনমজুরের কাজ করত। ওর লগে তো কারো শত্রুতা নাই। কে আমার ভাইয়ের হাত কেটে দিল? আমার ভাইয়ের অপরাধ কী?’
অন্যদিকে একই এলাকায় রাত ৮টার দিকে বিএম ফয়সাল নামে এক যুবককে মোবাইলে ফোন করে ডেকে নেয় অজ্ঞাত কয়েকজন যুবক। পরে তাকে বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের জন্য অন্ধকার একটি ঘরে নিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। পরে স্থানীয় লোকজন বিএম ফয়সালকে উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। তাকেও উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় দায়িত্বরত চিকিৎসক।
আহত বিএম ফয়সালের ভাই বিএম রাসেল বলেন, আমার ভাইয়ের সঙ্গে কারো কোনো বিরোধ নেই। সে একটি ইলেকট্রনিক দোকান চালায়। তাকে অচেনা একটি নম্বর থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ ঠিক করে দেওয়ার জন্য ডেকে নিয়ে হামলা চালায়। যারা আমার ভাইকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়েছে, তাদের বিচার চাই।
সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা সৈয়দা সোনিয়া বলেন, দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর অবস্থায় দুজনকে হাসপাতালে আনা হয়। তাদের মধ্যে সাইফুল ইসলামের বা হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন ছিল। তবে তার শরীরে অন্য কোথাও আঘাত নেই। অন্যজনের মাথা, হাত, পা, বুকসহ একাধিক স্থানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো ছিল। দুজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) পাঠানো হয়েছে। '
মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘ধারালো অস্ত্রের আঘাতে এক তরুণের বা হাতের কবজি কেটে ফেলেছে সন্ত্রাসীরা। তবে কেন তার হাত কেটে ফেললো সেই বিষয়ে ওই তরুণ ও তার পরিবার কোনো কিছুই বলতে পারছে না। খবর পেয়ে আমরা হাসপাতাল ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। '
তিনি আরও বলেন, আমরা ধারণা করছি দুই ঘটনা একই সন্ত্রাসীরা ঘটিয়েছে। স্থানীয় আধিপত্য বা রাজনৈতিক দলাদলির কারণেও এই হামলার ঘটনা ঘটতে পারে। বিষয়টি পুলিশ গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৫ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২৩
আরএ