রাঙামাটি: পার্বত্যাঞ্চলের সবচেয়ে বড় উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। গত ০৬ জুলাই বোর্ডের চেয়ারম্যান পদটি শূন্য হয়েছে।
বর্তমানে বোর্ডের চেয়ারম্যান পদটি নিজের করে নিতে পাহাড়ের ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি এবং আমলারা জোর তদবির চালাচ্ছেন। এ নিয়ে চলছে চুলচেড়া বিশ্লেষণ- আবার কি প্রতিষ্ঠানটি আমলাতন্ত্রের শাসনামলে ফিরে যাবে, নাকি কোনো বেসামরিক ব্যক্তি দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হবে?
তিন পার্বত্যাঞ্চলের উন্নয়নের মেগা প্রকল্পগুলো পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে সরকার বাস্তবায়ন করে থাকে। দেশের স্বাধীনতার পর পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিদর্শনকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মূলত পার্বত্যাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য একটি পৃথক বোর্ড প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছিলেন। দেশের মধ্যে কয়েকটি পৃথক বোর্ডের মধ্যে এটিও একটি সরকারের স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান।
বোর্ডটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কখনো সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আবার কখনো আমলা কিংবা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দ্বারা প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ২০২১ সালে ০৬ জুলাই রাঙামাটি জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমাকে সচিব পদ মর্যাদায় দুই বছরের জন্য বোর্ডের চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়েছিল। বোর্ডটির ইতিহাসে নিখিল কুমার চাকমা প্রথম বেসামরিক ব্যক্তি এবং তিনি আমলা কিংবা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছিলেন না।
সরকারি বিধি অনুযায়ী চলতি মাসের ০৬ জুলাই চেয়ারম্যান পদে নিখিল কুমার চাকমার মেয়াদ শেষ হওয়ায় পার্বত্যাঞ্চলে আবার জোর আলোচনা শুরু কয়েছে- কে হচ্ছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের পরবর্তী চেয়ারম্যান।
অতীতে জনপ্রতিনিধি, সামরিক কর্মকর্তা কিংবা আমলা দ্বারা প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পরিচালনা করায় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ চেয়ারম্যান পদটি পাওয়ার জন্য সরকারের কাছে তদবির করেননি। তবে বেসামরিক ব্যক্তি হিসেবে নিখিল কুমার চাকমা চেয়ারম্যান নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতৃবৃন্দ বোর্ডের চেয়ারম্যান পদটি বাগিয়ে নিতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।
বোর্ডের চেয়ারম্যান পদটি পেতে পুনরায় বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমাও জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। বলা হচ্ছে, তিনি পার্বত্যমন্ত্রী বীর বাহাদূর ঊশৈসিং এমপির আর্শিবাদ নিয়ে কেন্দ্রে লবিং চালাচ্ছেন।
বোর্ডটির চেয়ারম্যান পদের জন্য পার্বত্যাঞ্চলে বেশি আলোচিত নাম হলো সাবেক জেলা পরিষদের চেয়াম্যান বৃষকেতু চাকমা। কথিত আছে, তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার এমপির আর্শিবাদপুষ্ট।
এদিকে খাগড়াছড়ি জেলা থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, মহিলা সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা, সাবেক সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু, রাঙামাটি জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা চিংকিউ রোয়াজা, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ কুমার চাকমার নাম শোনা যাচ্ছে। বোর্ডটির চেয়ারম্যান পদ পেতে সাবেক এবং বর্তমান কয়েকজন আমলাও চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে চাউর হয়েছে।
তবে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু বলেন, আমি বোর্ডের চেয়ারম্যান পদের জন্য কোনো তদবির করিনি।
রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুছা মাতব্বর বলেন, আমিও বোর্ডের চেয়ারম্যান পদটি পেতে চাই। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে যোগ্য মনে করবেন, যিনি এ অঞ্চলের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবেন, তাকে এ পদ দেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের এ নেতা আরও বলেন, চেয়ারম্যান পদটির জন্য জেলা পর্যায় থেকে আমরা কারো জন্য বিশেষ সুপারিশ পাঠাইনি। নেত্রীর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০২৩
এসআই