ঢাকা, বুধবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘শিক্ষকের বকা’ খেয়ে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীর আত্মহত্যা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০২৩
‘শিক্ষকের বকা’ খেয়ে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীর আত্মহত্যা

কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার সুলতানপুর মাহতাবিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির কয়েকজন ছাত্রী ধূমপান করায় তাদের অপমান করেন দুই শিক্ষক। অপমান সইতে না পেরে লজ্জায় জিনিয়া খাতুন নামে এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন।

এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়ছে। পরে মরদেহ দেখতে গিয়ে হামলার শিকার হন প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ।

ছাত্রীদের ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেয়া হবে এমন হুমকির অসত্য তথ্য ছড়িয়ে উত্তেজনা সৃষ্টির অভিযোগ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। পুলিশ জানায়, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিহত জিনিয়ার মামা সাবেক ইউপি সদস্য ও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য গাজিরুল ইসলাম বলেন, সামান্য ধূমপানের অভিযোগে ছোট্ট বাচ্চা মেয়েকে এভাবে নির্যাতন করা শিক্ষকের বিচার চাই। জিনিয়াকে কক্ষে ডেকে আটকে রেখে স্কুল ব্যাগ রেখে দেন শিক্ষক লাল্টু। অপর শিক্ষক ওলিউর ওই ছাত্রীদের ভিডিও ধারণ করে রাখেন এবং নেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। এতে জিনিয়া লজ্জায়-অপমানে বাড়ি ফিরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

নিহত জিনিয়ার সহপাঠী সিনথিয়া বলে, আমরা চারতলার সিড়িঘরে ছিলাম। ওখান থেকে স্যার আমাদের ডেকে নিয়ে তাদের রুমে জিজ্ঞাসা করেন যে আমরা সিগারেট খেয়েছি কিনা। একজন ম্যাডাম আমার মুখ শুকে গন্ধ পেয়েছিলেন। তখন স্যার আমাদের বকাবকি করেন এবং আয়া খালাকে দিয়ে ক্লাসরুম থেকে আগেই আমাদের বইখাতার ব্যাগ আনিয়ে নিয়েছিলেন। পরে লাল্টু স্যার বলেন, এর বিচার আগামীকাল হেড স্যার করবেন। এই বলে আমাদের বাড়িতে চলে যেতে বলেন।

অপর শিক্ষার্থী আঁখি খাতুন বলেন, স্যাররা আমাদের বকাবকি করেছে ঠিকই তবে কোনো মারধর করেননি। তাছাড়া স্যারেরা আমাদের ভিডিও করেছে বলে যে-সব কথা শুনছি তা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। স্যারেরা আমাদের কোনো ভিডিও করেননি বা নেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকিও দেননি।

অভিযুক্ত শিক্ষক মশিউর রহমান লাল্টু দাবি করেন, সোমবার (০৭ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে সপ্তম শ্রেণির কয়েজজন মেয়ে স্কুলের সিড়িঘরে গিয়ে ধূমপান করেছে এমন অভিযোগের সত্যতা পাই। এ সময় ওই ছাত্রীদের বলি যে, তোমাদের বিচার আগামীকাল (মঙ্গলবার, ০৮ আগস্ট) হেড স্যার নিজে অভিভাবকদের ডেকে নিয়ে করবেন। তখন তাদের বলা হয়েছিল, তোমাদের বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলে এসে ব্যাগ নিয়ে যেতে হবে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ বলেন, সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীর মরদেহ দেখতে গেলে সেখানে একদল উচ্ছৃঙ্খল লোক আমার ওপর অতর্কিত হামলা করে রক্তাক্ত জখম করেন।

তিনি আরও বলেন, গত সোমবার দুপুরে স্কুল মাঠে ছাত্রদের ফুটবল খেলা চলছিল। এ সময় সবাই খেলা দেখছিল। কিন্তু ওই মেয়েরা চতুর্থ তলার সিড়িঘরে গিয়ে ধূমপান করছে এমন কথা আমার শিক্ষকরা ফোন করে জানান। এ সময় আমি জেলা শিক্ষা অফিসে দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত ছিলাম। তারপর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে স্কুলে ফিরে শুনতে পাই, জিনিয়া নামে সপ্তম শ্রেণির এক মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। সেখানে আমার স্কুলের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসেছে, তা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে  পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। রিপোর্টে কারো বিরুদ্ধে দোষ পাওয়া গেলে তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম স্বপন বলেন, স্থানীয় একটি মহল নিজেদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পানি ঘোলা করার চেষ্টা করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে পরবর্তীতে যারা এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে এবং প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলা চালিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি। যতদূর জানতে পেরেছি, এসব অসত্য ভুয়া তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে নিহত ওই ছাত্রীর নিকটাত্মীয় গাজিরুল নিজেই জড়িত এবং এটি বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রচার হয়েছে।

এদিকে, এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, জিনিয়া আত্মহত্যার ঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। এছাড়া পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো অভিযোগ পাইনি।

তিনি আরও বলেন, মরদেহ দেখতে গিয়ে শিক্ষক হামলার শিকার হয়ে রক্তাক্ত জখম হয়েছেন সে বিষয়েও কোনো অভিযোগ এখনও পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০২৩
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।