ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রামুর ‘ত্ব’ ক্যাং বৌদ্ধ জাদি রক্ষায় কোনো উদ্যোগ নেই

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২৩
রামুর ‘ত্ব’ ক্যাং বৌদ্ধ জাদি রক্ষায় কোনো উদ্যোগ নেই প্রায় ১০০ বছরের প্রাচীন জাদি, অযত্ন অবহেলায় এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ছবি- বাংলানিউজ

কক্সবাজার: কক্সবাজারের রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের দরগাহপাড়া পাহাড় চূড়ায় অবস্থিত প্রায় ১০০ বছরের প্রাচীন ‘ত্ব’ ক্যাং বা বনবিহার। পাহাড়ের ওপর থেকে এটির উচ্চতা প্রায় ৩০ ফুট হলেও সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৩৫০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত জাদিটি।

অনেকের কাছে এটি বৌদ্ধ জাদি বা প্যাগোডা নামেও পরিচিত।

বর্তমানে ওই জাদি পাহাড়ের চারপাশই বেদখল হয়ে গেছে। আর অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকতে থাকতে এ প্রাচীন পুরাকীর্তিটি এখন পরিত্যক্ত হয়ে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এটি রক্ষায় প্রয়োজন সরকারি উদ্যোগ।

স্থানীয়রা বলছেন, সরকারিভাবে এটি রক্ষার উদ্যোগ নিলে প্রাচীন এ পুরাকীর্তিটি যেমন রক্ষা পাবে। অন্যদিকে এই পাহাড়কে ঘিরে গড়ে ওঠতে পারে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা।

রামুর বৌদ্ধ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি গবেষক ধনিরাম বড়ুয়ার জানান, ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে জাদিটি স্থাপন করা হয়। তৎকালীন বার্মার বৌদ্ধ ভিক্ষু উঁ দেবেন্দ্র মহাস্থবির এ ত্ব ক্যাং বা রাজারকুল বনবিহার প্রতিষ্ঠা করেন। অনেকে সেসময় তাকে পন্ডিত ঠাকুর নামেও চিনতেন। সে সময় তিনি শ্রীকুল রাখাইন বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষের দায়িত্বেও ছিলেন। এ ক্যাংটি নির্মাণের জন্য তার শিষ্য উঁ ইন্দ্রবংশকে শ্রীকুল বৌদ্ধ বিহারের দায়িত্ব অর্পণ করেন।

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় একসময় পুরো রামু ছিল রাখাইন রাজ্য এবং এখানকার বেশিরভাগ পুরানো স্থাপনা রাখাইনদের দ্বারা নির্মিত। ত্ব ক্যাং ও বনবিহার মূলত বৌদ্ধিক নিয়মে ধ্যান সাধনার জন্যই ভিক্ষু প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। নির্মাণের পর তিনি দীর্ঘদিন সে বিহারে ধ্যান-সাধনা করেন। তবে সে সময় এ পাহাড়ের আশেপাশে কোনো জনবসতি ছিল না বলেও জানান ধনিরাম বড়ুয়া।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে এ জাদির পাহাড়ের পাদদেশে এমনকি চারপাশে গড়ে উঠেছে জনবসতি। অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে জাদিটি। রামু উপজেলাজুড়ে অন্তত ৩০টির বেশি বৌদ্ধ বিহার ও জাদি উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের মধ্যে থাকলেও এটি রক্ষায় সরকারি-বেসরকারী কোনো উদ্যোগ নেই।

সম্প্রতি রামু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুমথ বড়ুয়াসহ কয়েকজন তরুণ জাদিটির আশপাশ পরিষ্কার করেন এবং জাদির গায়ে রঙের আস্তর লাগানোর উদ্যোগ নেন।

সুমথ বড়ুয়া বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি জাটিটি রক্ষার। কিন্তু সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এটি রক্ষা করা সম্ভব নয়। বর্তমানে যথাযথ পরিকল্পনা এবং অর্থাভাবে এটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

অধ্যাপক নীলোৎপল বড়ুয়া বলেন, শুধু ত্ব ক্যাং ও বনবিহার নয়। রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কের পাহাড় চূঁড়ায় নির্মিত চাতোপা জাদিটিও পাহাড় ধসের শিকার হয়ে যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে। এ পাহাড়ের উত্তর পাশে পাহাড়ের মাটি সরে গিয়ে জাদির গোড়া ছুঁয়েছে। কিন্তু পাহাড় ধস ঠেকাতে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই।

রামুতে কোনো পর্যটন কেন্দ্র নেই। নেই ভ্রমণের ব্যবস্থা। অথচ এ দুটি জাদি রক্ষার উদ্যোগ নিলে মহামূল্যবান পুরাকীর্তি দুটি যেমন রক্ষা হতো, পাশাপাশি জাদি পাহাড়কে ঘিরে তৈরি হতো পর্যটনের অপার সম্ভাবনা।

রামু সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিরুপম মজুমদার বলেন, নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কের জাদিটি দূর থেকে অনেকবার দেখেছি। দেখতে অনেক দৃষ্টিনন্দন। কিন্তু এটিসহ দুটি জাদি যে ঝুঁকির মুখে আছে জানতাম না। এগুলো দেখভালের দায়িত্বে যারা আছেন তারাও কোনোদিন আমাদের জানায়নি।

তিনি বলেন, এসব পুরাকীর্তিগুলো দেশের সম্পদ। দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এগুলো রক্ষা করা জরুরি। সরেজমিনে দেখে জাদিগুলো রক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২৩
এসবি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।