নরসিংদী: শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ সার কারখানা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে যাচ্ছে যা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় বিরাট ভূমিকা রাখবে।
নতুন সার কারখানাটি স্থাপিত হলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের পাশাপাশি সার আমদানির ওপর নিভর্রতা হ্রাস পাবে।
বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নরসিংদীর পলাশে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানার কমিশনিং কার্যক্রম উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, বিদেশি কোম্পানিকে বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হচ্ছে ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানার সার্বিক কাজ। ইতোমধ্যেই ৯৫ থেকে ৯৮ ভাগ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। চলতি মাসেই পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যাবে পরিবেশ বান্ধব এই সার কারখানাটি।
শিল্পমন্ত্রী আরও বলেন, নিরবচ্ছিন্ন সার সরবরাহ নিশ্চিত করে শিল্প মন্ত্রণালয় কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সচেষ্ট রয়েছে। সার কারখানা পর্যায়ে উৎপাদন যাতে কোনো অবস্থায় ব্যাহত না হয়, সে লক্ষ্যে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। সার কারখানার উৎপাদন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার লক্ষ্যে ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের প্রশাসনিক ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে। একই সঙ্গে কারখানাগুলোর উৎপাদনশীলতা বাড়াতে কারিগরি জনবলের প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন জনবল নিয়োগ করা হবে বলে তিনি জানান।
এ সময় শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি, স্থানীয় এমপি ড. আনোয়ারুল আশরাফ খান, শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা, বিসিআইসির চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এসএম আলম, প্রকল্প পরিচালক রাজিউর রহমান মল্লিক উপস্থিত ছিলেন।
শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি বলেন, সরকার কৃষিকে প্রাধান্য দিচ্ছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সারের কোনো বিকল্প নেই। তাই দেশে নতুন নতুন সার কারখানা করা হচ্ছে। পলাশের সার কারখানাটি একটি পরিবেশ বান্ধব কারখানা। এখানে সব আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। আর আমাদের দেশিয় ইঞ্জিনিয়ারদের এই সার কারখানার সব মেশিন চালানোর ও সার কারখানার রক্ষণাবেক্ষণের কৌশল আয়ত্বে রাখতে হবে। যাতে বিদেশিরা চলে গেলে আমাদের সারকারখানা চালাতে কোনো সমস্যা যেন না হয়।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশের ইউরিয়া সারের চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি সুলভমূল্যে কৃষকদের কাছে সার পৌঁছে দিতে ২০১৮ সালে এই প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু করে শিল্পমন্ত্রণালয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন পর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি গত ২০২২ সালের ২১ এপ্রিল এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। এতে বছরে ৯ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিকটন ইউরিয়ার সার উৎপাদন সম্ভব হবে।
ইতোমধ্যেই নির্মাণ কাজের ৯৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চার বছর মেয়াদি এ জিপি প্রজেক্টের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। কারখানাটি দৈনিক ২ হাজার ৮০০ টন হিসাবে বার্ষিক ৯ লাখ ২৪ হাজার টন গ্রানুলার ইউরিয়া সার উৎপাদন করবে। আর ১ টন সার উৎপাদনের জন্য সর্বোচ্চ ২২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস খরচ হবে। সেদিক থেকে প্রতিদিন ২ হাজার ৮০০ টন সার উৎপাদনের জন্য তিতাস গ্যাসকে প্রায় ৭০ হাজার এমসিএফ গ্যাস সরবরাহ করতে হবে।
প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে তুলনামূলক কঠিন শর্তে সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট হিসেবে জাপান ও চীনের ঠিকাদারদের যৌথ কনসোর্টিয়াম ব্যাংক অব টোকিও-মিতসুবিশি ইউএফজে লিমিটেড (এমইউএফজি) ও দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন লিমিটেড (এইচএসবিসি) ৮ হাজার ৬১৭ কোটি টাকার ঋণ সংগ্রহ করে দেয়। কমিটমেন্ট ফি, সার্ভিস চার্জ মিলিয়ে এ ঋণের সুদের হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। চার বছরের নির্মাণকালসহ মোট ১৫ বছরে কনসোর্টিয়ামকে মোট ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
কারখানাটি দেশের কৃষি উৎপাদন, কৃষি অর্থনীতি, ব্যবসা বাণিজ্য সর্বোপরি দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। প্রকল্পের বিভিন্ন প্ল্যান্টের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের অ্যামোনিয়া প্ল্যান্ট, ইউরিয়া প্ল্যান্ট এবং ইউটিলিটি দৃশ্যমান। এছাড়া, পিডিবি হতে পাওয়ার রিসিভিং, ইমারজেন্সি ডিজেল জেনারেটরের লোড টেন্ট সম্পন্ন হয়েছে, কুলিং ওয়াটার সিস্টেমে ওয়াটার ফ্ল্যাশিং ও কেমিক্যাল ক্লিনিং, নাইট্রোজেন ইউনিটের Instrument Air Compressor এর প্রি-কমিশনিং এবং কমিশনিং শেষ হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০২৩
আরএ