ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ঐতিহ্যবাহী বোস কেবিন ছিল গোপন চিঠি আদান প্রদানের স্থান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৩
ঐতিহ্যবাহী বোস কেবিন ছিল গোপন চিঠি আদান প্রদানের স্থান

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের ইতিহাস সংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন ঘটনার সাথে জড়িত ঐতিহ্যবাহী বোস কেবিন। প্রায় একশ বছর আগে নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনের অদূরে প্রতিষ্ঠিত হয় এই বোস কেবিন।

নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন আলোচিত ঘটনাবলি, দেশের রাজনীতিসহ নানা ঘটনার সাথে জড়িয়ে আছে বোস কেবিনের স্মৃতি। দেশি-বিদেশি বিখ্যাত ব্যাক্তিদের পদচারণার স্মৃতি রয়েছে এই বোস কেবিনে।

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনসহ এমন কোন রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রাম নেই যার সাথে সম্পৃক্ততা নেই এই বেস কেবিন। রাজনৈতিক নেতাদের গোপন চিঠিপত্র আদান প্রদানের অন্যতম জায়গা ছিল এটি। এখনও স্থানীয়দের কাছে এখানকার চা অনেক জনপ্রিয়।

নেতাজী সুভাসচন্দ্র বোসও বোস কেবিনে এসেছিলেন বলে শোনা যায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাধিকবার বোস কেবিনে এসেছিলেন বলে ইতিহাস থেকে জানা যায়।

১৯৩১ সালের ৭ নভেম্বর। কলকাতা থেকে জাহাজে চেপে নারায়ণগঞ্জে এলেন অখণ্ড ভারতবর্ষের প্রবাদপ্রতীম রাজনীতিবিদ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। জাহাজ থেকে নামতেই তাঁকে গ্রেপ্তার করে ব্রিটিশ পুলিশ, নারায়ণগঞ্জ থানায় নিয়ে বন্দী করে রাখে আট ঘণ্টা। এ সময় বোস কেবিনের প্রতিষ্ঠাতা নৃপেন্দ্র চন্দ বোস, সবার কাছে যিনি ভুলু বোস নামে পরিচিত, থানায় গিয়ে এই নেতাকে চা খাইয়ে তৃপ্ত করেছিলেন।  

অনেকে ধারণা করেন, বোস কেবিনের নামটি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নাম থেকে নেওয়া। তবে তা সত্য নয়। ব্যানার্জি কেবিন বোস কেবিন হয়েছিল নৃপেন বোস তথা ভুলু বাবুর পদবি থেকেই।

নৃপেন বোস বেঁচে ছিলেন ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত। তার জীবদ্দশায় মেজোপুত্র রবীন্দ্র চন্দ্র বোস ও তারপর নাতি তারক বোস এর হাল ধরেন। শুরুতে ১ নম্বর রেলগেট ও স্টিমার ঘাটের কাছে ছিল দোকানটি। ১৯৮৮ সালে এটি স্থানান্তরিত হয় ২ নম্বর রেলগেটের কাছে, চেম্বার রোডে। নামের সঙ্গে নিউ যুক্ত হয়ে এটি হয় নিউ বোস কেবিন।

ইতিহাস বলছে, ১৯২১ সালে ‘দ্য বোস কেবিন’ নাম দিয়ে নারায়ণগঞ্জের ১ নম্বর রেলগেটের ফুলপট্টির পশ্চিম পাশে প্রথমে চা বিস্কুটের ব্যবসা শুরু করেছিলেন ভুলু বোস। তখন তিনি স্বদেশি আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী। ব্যবসার আড়ালে স্বদেশি নেতাকর্মীদের গোপন যোগাযোগ এবং সংবাদ আদান প্রদানের নিরাপদ স্থান হয়ে ওঠে এ প্রতিষ্ঠান।

এখনো বিকেল নামতেই বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতাদের আড্ডা জমে এখানে। চায়ের কাপে ঝড়তোলা নানা রাজনৈতিক কথামালার উত্তাপ ছড়ায় চা প্রেমীদের মুখে। শুধু রাজনীতিবিদ নয় আইনজীবী, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, চাকুরিজীবী, ছাত্র, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের আড্ডা জমে এ বোস কেবিনে।  

তারক বোস বলেন, এখানে সকল শ্রেণীপেশার মানুষের আগমন হয়। দোকানটিতে পা পড়েছে মওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেক রাজনীতিবিদের। এসেছেন শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, শহীদ কাদরী, নির্মলেন্দু গুণদের মতো কবি-সাহিত্যিকরাও।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৩
এমআরপি/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।