ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ফোঁড়া রোগে আক্রান্ত হয়ে এক সপ্তাহে মারা গেছে ২০ ফ্রিজিয়ান গরু

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩
ফোঁড়া রোগে আক্রান্ত হয়ে এক সপ্তাহে মারা গেছে ২০ ফ্রিজিয়ান গরু

ফরিদপুর: ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের হাট গোবিন্দপুরে "দি পদ্মা ক্যাটেল ফার্মে" ফোঁড়া রোগে আক্রান্ত হয়ে ফ্রিজিয়ান জাতের সাতটি গাভী ও ১৩টি বাছুর মারা গেছে।  

এক মাস আগে খামারের গরুগুলোকে ফোঁড়া রোগের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।

এরপরে গত এক সপ্তাহে খামারের ৫৫টি গাভী এবং বাছুরের মধ্যে ২০ গাভী ও বাছুর মারা যায়। এতে প্রায় ৪০ লাখ টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছেন খামারি।

গত ০২ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মারা যায় গরুগুলো। তবে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণের ফলে খামারের বাকি ৩৫টি গাভী ও বাছুর সুস্থ হওয়ার পথে। সুস্থ হলেও গাভীগুলো আগের মতো দুধ দিচ্ছে না বলে জানিয়েছেন খামারি।  

এদিকে ফরিদপুরে অন্যান্য খামারিদের গরুগুলোকে এই রোগ থেকে বাঁচাতে ভ্যাকসিনের ক্যাম্পেইন শুরু করেছে প্রাণিসম্পদ অফিস। সেইসঙ্গে মশা-মাছি থেকে দূরে রেখে পরিষ্কার স্থানে পশু পালনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।  

ক্ষতিগ্রস্ত খামারি শেখ মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ২০১৪ সালে ছয়টি গাভী নিয়ে খামার শুরু করলেও এই দশ বছরে এমনভাবে ক্ষতির মুখে পরিনি। দেড় মাস আগে আমার খামারের গরুগুলো লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়। প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরে সুস্থ হতে না হতেই ফোঁড়া রোগে আক্রান্ত হয়ে আমার সর্বনাশ হয়ে গেলে। লাম্পি স্কিনের ভ্যাকসিনের সঙ্গে অফিস থেকে আমার খামারের সব গরুকে ফোঁড়া রোগের ভ্যাকসিনও দেওয়া হয়। তারপরও একের পর এক গরু মারা গেল।

তিনি জানান, ২ সেপ্টেম্বর রাতে প্রথম একটি ফ্রিজিয়ান গাভী মারা যায়। এর পর সাতদিনে আমার খামারে সাতটি গাভী ও ১৩টি বাছুর মারা যায়। বাছুরগুলোর বয়স ছয় থেকে এক বছরের মধ্যে। সাতটি গাভীই প্রতিদিন দুধ দিত। এর মধ্যে চারটি গাভী অল্প কয়দিনের মধ্যে বাছুর জন্ম দিত। এতে আমার খামারের প্রায় ৪০ লাখ টাকার গাভী ও বাছুর মারা যায়। সবচেয়ে বড় ক্ষতি হলো সুস্থ হওয়া গাভীগুলো আর আগের মত দুধ দিচ্ছে না। যে গাভী দিনে ২০ লিটার দুধ দিতো সেটি এখন ১০ লিটার দুধ দিচ্ছে। খামারে গরুগুলোর মৃত্যুর আগে দিনে ২৫০ লিটার থেকে ২৮০ লিটার দুধ পাওয়া যেত। এখন দিনে পাই ৩৫-৪০ লিটার। আমার দিনে ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। এই ক্ষতি আমি কীভাবে পোষাবো?

তিনি বলেন, ৫ তারিখে প্রাণিসম্পদ অফিস কর্মকর্তা ও ডাক্তার এসে আমার খামার পরিদর্শন করে তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন। কিন্তু এক মাস আগেই আমি ফোঁড়া রোগের যে ভ্যাকসিন দিলাম তাতে কাজ হলো না কেন?

ফরিদপুর সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমরা শহিদুল ইসলামের খামার পরিদর্শন করেছি। তারা আমাদের মাধ্যমে নিয়মিতই গরুগুলোকে ভ্যাকসিন দিয়ে থাকে। আমরাও তাদের নিয়মিত পরামর্শ ও পর্যবেক্ষণ করি। পদ্মা ক্যাটেল ফার্মের গরুগুলো পর পর দুবার দুটি আলাদা রোগে আক্রান্ত হয়। প্রথমে লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত হলে ভ্যাকসিন ও পরিচর্যায় ঠিক হওয়ার পরপরই ফোঁড়া রোগে আক্রান্ত হয় তার খামারের গরুগুলো। আমরা ভ্যাকসিন দিলেও কয়েকটি গরু মারা যায়। পর পর রোগে আক্রান্ত হওয়ার ফলে গরুগুলোর ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়াটা মৃত্যুর বড় একটা কারণ। আবার রোগের ফলে গরুর খাবারের রুচি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় খাবার কম খায়। কিছু গরুর রুচি ফিরে আসার পর অতিরিক্ত খাবার খেয়ে গ্যাসের সমস্যা হয়েছে। তার খামারের বাকি গরুগুলোর চিকিৎসা চলছে। সেগুলো এখন ভালো আছে।  

তিনি আরও বলেন, অন্য খামারিদের জন্য আমাদের ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন চালু করা হয়েছে। সেইসঙ্গে মশা-মাছির কামড় থেকে দূরে ও পরিষ্কার স্থানে লালন পালন করতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।