নীলফামারী: নীলফামারীর সৈয়দপুরে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে প্রায় অর্ধশত ডেন্টাল কেয়ার। স্বল্পমেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স করেই হাতুড়ে চিকিৎসকেরা দাঁতের চিকিৎসক সেজে ডেন্টাল কেয়ারগুলো খুলে বসেছেন।
সাধারণ মানুষের অভিযোগ, প্রশাসন এসব দেখেও না দেখার ভান করছে। আর তাই বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই দিনের পর দিন ওই ডেন্টাল কেয়ারগুলোর পরিচালিত হয়ে আসছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সৈয়দপুর উপজেলার শহীদ ডা. জিকরুল হক রোড, শহীদ ডা. শামসুল হক রোড, বঙ্গবন্ধু সড়ক, মিস্ত্রিপাড়া, বাবুপাড়া, গোলাহাট বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৫৫ ডেন্টাল কেয়ার রয়েছে। এসবের মধ্যে বেশির ভাগ চিকিৎসকেরই ন্যূনতম ডিগ্রি বা ডিপ্লোমা নেই। রোগীদের আকৃষ্ট করার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের নামে টানানো হয়েছে আকর্ষণীয় ব্যানার ও সাইনবোর্ড।
ভুয়া পদ-পদবি ব্যবহার করে তারা রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে সেবার নামে বাণিজ্য করে যাচ্ছেন। সরকারি বিধি অনুযায়ী, ডিপ্লোমাধারী টেকনিশিয়ানদের চেম্বার খুলে জটিল রোগের কোনো চিকিৎসা দেওয়ার বিধান নেই। অথচ দাঁত ওঠানো, বাঁধানো, রুট ক্যানেল, জিআই, ফিলিং, দাঁত সোজা করার মতো স্পর্শকাতর চিকিৎসার কাজ করে যাচ্ছেন এসব কতিপয় হাতুড়ে চিকিৎসক। আর অনেকেই না জেনে এসব ডেন্টাল কেয়ারে চিকিৎসাসেবা নিতে এসে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।
উপজেলার গোলাহাট এলাকার এক ভুক্তভোগী জানান, তিনি স্থানীয় এক ডেন্টাল কেয়ারে চিকিৎসা করিয়ে দীর্ঘদিন ভুগে পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ডেন্টাল চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে সুস্থ হয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন এক ডেন্টাল কেয়ারের চিকিৎসাসেবা দেওয়া একজন বলেন, আমি ডিপ্লোমা কোর্স শেষ করে প্র্যাকটিস করছি। তবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করলেও এখনো অনুমোদন পায়নি।
এ নিয়ে মুঠোফোনে কথা হয় সৈয়দপুর চাঁদনগর এলাকার বাসিন্দা এবং ঢাকা ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক আপেল মামুদের সঙ্গে।
তিনি বলেন, বিএমডিসির অনুমোদন ছাড়া প্র্যাকটিস করার বিধান নেই। এমনকি লাইসেন্সের নবায়ন না থাকলেও কেউ চিকিৎসাসেবা দিতে পারবে না। অনেকে কিছু না বুঝেই তাদের কাছ থেকে দাঁতের চিকিৎসা নিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন। তাদের অপচিকিৎসার কারণে মানুষ হেপাটাইটিসসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, এ সব চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসাসেবা নিয়ে অনেকের মুখ ফুলে গেছে বা খারাপ অবস্থা হলে তখনই আমাদের কাছে আসে। এসব ব্যক্তি কারও কাছে অভিযোগ করতে পারে না বা কিছুই করতে পারে না।
এ প্রসঙ্গে সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু মো. আলেমুল বাশার জানান, ডেন্টাল বা মেডিসিন হোক কেউ এমবিবিএস ছাড়া চিকিৎসক লিখতে পারবেন না। যদি ডিপ্লোমা ডিগ্রি থাকে, তাহলে প্র্যাকটিস করবে, কিন্তু স্পেশাল কোনো ট্রিটমেন্ট করতে পারবেন না। এসব হাতুড়ে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। শিগগিরই এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৩
এসএম