ঢাকা: আমাদের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান স্বনির্ভর হিসেবে গড়ে তোলা গেলে আমাদের জাতীয় উন্নতির লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো সহজ হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পথনকশা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে হলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেছেন, প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা, সক্ষমতা এবং শৃঙ্খলা নিশ্চিত হলেই বাংলাদেশ তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষে পৌঁছাতে পারবে।
রোববার (৮ অক্টোবর) বিকেলে স্থানীয় সরকার বিভাগের সভাকক্ষে ঢাকা ওয়াসার ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরের ডেব্ট সার্ভিস লায়াবিলিটিস বা ডিএসএল চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহম্মদ ইবরাহিম, সম্মানিত অতিথি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ আলতাফ উল আলম এবং সভাপতিত্ব করেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে স্বনির্ভর করতে না পারি, দায়বদ্ধতা যদি অন্য কারও ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে হয়, তখনই সমস্যা দেখা দেয়। তখনই লক্ষ্যে পৌঁছা কঠিন হয়ে পড়ে। এটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জিং।
ঢাকা ওয়াসার বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য সরকারের কাছ থেকে গৃহীত ঋণ পরিশোধের এ উদাহরণকে প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতার দৃষ্টান্ত হিসাবে তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ঢাকা শহরের বাসিন্দাদের সেবা দিতে ঢাকা ওয়াসা ঋণ নিয়েছে। এখন সেখানে পানির গুণগত মান ঠিক থাকতে হবে। দামও যৌক্তিক হতে হবে। যেমন, আমরা সবসময় ভর্তুকির কথা বলি।
মো. তাজুল ইসলাম এ সময় ওয়াসার পানির জন্য ভর্তুকির বিরোধিতা করে বলেন, আমাদের আরও অনেক জনকল্যাণমূলক বিষয় এবং প্রকল্প রয়েছে যেখানে ভর্তুকি দেওয়া অধিকতর যুক্তিসঙ্গত কারণ তাতে অনেক মানুষের জীবনমান উন্নত হবে। তারপরও ভর্তুকি যদি দিতেই হয় তা দরিদ্র ও অক্ষম মানুষের পাওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। মন্ত্রী প্রশ্ন রাখেন রাষ্ট্র কেন ধনী ও সক্ষম মানুষের পানির বিলের অর্থ জোগান দেবে। এ ধরনের মন মানসিকতা আমাদের পরিহার করা উচিত বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, আমি সচেতনভাবেই বলছি যে সাবসিডিয়ারি কুড নট বি রাইট প্রসেস (ভর্তুকি সঠিক প্রক্রিয়া হতে পারে না)। সরকার কেন ভর্তুকি দেবে? সরকার তো সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে রাজস্ব সংগ্রহ করছে। এখন যদি ভর্তুকি দিয়ে ফেলি, তাহলে লক্ষে পৌঁছাতে আমাদের যে আরও অনেক প্রকল্প নেওয়া দরকার, আরও অনেক কাজ করা দরকার, অনেক মানুষের জীবনকে সুখ-শান্তিতে পরিপূর্ণ করে দেওয়া দরকার, সেটি করতে পারবো না।
তিনি বলেন, ৩০ টাকা দিয়ে এক বোতল পানি খাই, কিন্তু যখনই ওয়াসার দাম দেওয়ার কথা আসবে, তখন এক হাজার লিটারের দাম ১৫-২০ টাকা দিতে পারবো না। এ বিষয়ে আমি একমত না। আপনি তো ১০ টাকা দিয়ে পানি কিনে খেয়ে ফেলেন। এখন যদি বলেন, সবাই তো খায় না। কিন্তু সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ টাকা দিয়ে পানি কেনে, নাহলে এতগুলো পানি ইন্ডাস্ট্রি কীভাবে চলে? প্রতিদিন দেখি, কাভার্ডভ্যানে করে লাখ লাখ বোতল পানি যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, গ্যাসের, বিদ্যুতের, হোল্ডিংসহ যে কোনো কর রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনার জন্য দরকার। সারা দুনিয়ায় এটি প্রয়োগ করা হয়। যেসব দেশ বেশি রাজস্ব আদায় করতে পারছে, সেসব দেশ বেশি উন্নতি করতে পারছে। ইন্টারনাল রিসোর্স মবিলাইজেশন কী করে হবে? আমি যদি অভ্যন্তরীণ সম্পদ তুলতে না পারি, তাহলে মবিলাইজেশন কী করে করবো?
মন্ত্রী বলেন, আমি বলছি, অঞ্চল ভাগ করে গুলশানে এক হাজার লিটার পানি পঞ্চাশ টাকা করে দেন। আমি গুলশানে থাকি, আমরা পঞ্চাশ টাকা করে দেব। এক হাজার লিটার পানি পঞ্চাশ টাকা হবে, এটা বেশি কিছু না। আপনারা বেশি করে আয় করেন, আর যাত্রাবাড়িতে, যেখানে নিম্ন আয়ের মানুষ থাকেন, সেখানে কমিয়ে দেন। আমাদের ওয়াশার এমডি এ নিয়ে সেমিনারও করেছেন।
তাজুল ইসলাম জানান, ঢাকা শহরের ষাট শতাংশ মানুষ পানি পেতো না, এখন শতভাগ মানুষ পানি পাচ্ছে। তাহলে সেই কথা স্বীকার করবেন না? শতভাগ বিদ্যুতায়ন সারা বাংলাদেশে হয়েছে, সেটা বলবো না? আজ গ্রামগঞ্জে যোগাযোগের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। আজ কোনখাতে উন্নয়ন হয়নি?
বাংলাদেশ সময়: ২১৩১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮,২০২৩
জিসিজি/জেএইচ