ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘হাকসোবাজার রেল আইস্যে, রেল আইস্যে’

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০২৩
‘হাকসোবাজার রেল আইস্যে, রেল আইস্যে’

কক্সবাজার: দুপুর থেকেই কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনে ছিল হাজারো উৎসুক দর্শনার্থীদের ভিড়।

বিকেলের পর আরও বাড়তে থাকে নারী-পুরুষের ভিড়।

সবার অপেক্ষা কখন আসবে ট্রেন। অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে অবশেষে সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে কক্সবাজার পৌঁছায় দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সেই স্বপ্নের ট্রেন।

এ সময় ‘হাকসোবাজার রেল আইস্যে, রেল আইস্যে’ বলে উৎসুক শিশু-কিশোরের দৌড়ঝাপ ছিল চোখে পড়ার মতো।  

শুধু শিশু-কিশোররা নয় রোববার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ট্রেনের প্রথম হুইসেলের আওয়াজ শুনে খুশিতে সবার চোখে মুখে ছিল অন্যরকম ভালো লাগার অনুভূতি। যেখানে ছিল স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকরাও।

এর আগে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আটটি বগি ও একটি ইঞ্জিন নিয়ে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে নতুন রেলপথ দিয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে ট্রেনটি। তবে কক্সবাজার প্রথম আসা এটি যাত্রীবাহী কোনো ট্রেন ছিল না। এটা ছিল পরিদর্শন ট্রেন। বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন শেষে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পৌঁছাতে সময় নিয়েছে ৯ ঘণ্টা ২০ মিনিট। যাত্রা পথে পরিদর্শন দল বিভিন্ন স্টেশন, সেতু, রেলপথের শেষ হওয়া নির্মাণকাজ ঘুরে দেখে।

নতুন রেলপথে ট্রেন দেখতে সকাল থেকে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দুই পাশে শত শত মানুষ অপেক্ষা করেন। অনেক জায়গায় ফুল ছিটিয়ে ট্রেনের কর্মকর্তা ও রেলকর্মীদের শুভেচ্ছা জানান উৎসুক দর্শনার্থী।

আইকনিক রেলস্টেশনে ট্রেন দেখতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা খোরশেদ আলম (৫৫) জানান, ‘আজ কক্সবাজারে প্রথমবারের মতো স্থানীয় বাসিন্দারা রেল দেখলো। আমরা প্রথম রেলের হহুইসেলের শব্দ শুনলাম, এটা আমাদের জন্য কম আনন্দের বিষয় নয়। ’

নিজেকে নতুন একটি ইতিহাসের অংশীদার দাবি করে তিনি বলেন, আজ কক্সবাজারে রেল আগমনের নতুন একটা ইতিহাসের সূচনা হলো। আর সেই ইতিহাসের অংশীদার হলাম আমিও।

বাংলাদেশ রেলওয়ের কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনের নব নিযুক্ত স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী সাংবাদিকদের জানান, এটি কোনো ট্রায়াল ট্রেন না। নতুন রেলপথ নির্মাণ কাজের যাচাই-বাছাই করার অংশ হিসেবে এ ট্রেন যাত্রা।

এ ট্রেনে রেলের পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, তারা যাচাই-বাছাই করে সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা তা জানালে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।

ট্রেনটিতে সরকারি রেল পরিদর্শক রহুল কাদের আজাদ, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজমুল ইসলামসহ সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা ছিলেন।

প্রসঙ্গত আগামী ১১ নভেম্বর এ রেলপথ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের কথা রয়েছে। মূলত ১১ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের আগে নতুন নির্মিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ পরিদর্শনের জন্য এ ট্রেন চালানো হয়।

সাধারণত দেশের কোথাও নতুন রেললাইন নির্মিত হলে পরিদর্শন অধিদপ্তর পরীক্ষা করে দেখে। অধিদপ্তর ছাড়পত্র দিলে নতুন রেলপথটি ট্রেন চলাচলের জন্য উপযোগী বলে বিবেচনা করা হয়। এরপর ট্রায়াল রান (পরীক্ষামূলক চলাচল) ও ট্রেন চলাচল শুরু করতে পারবে।

জানা গেছে, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার লাইনের মধ্যে মোট প্রকল্পের কাজ ৯২ শতাংশ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন প্রকল্পটির কাজ ২০১৮ সালে শুরু হয়। আগামী বছরের জুন পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ থাকলেও তার আগে আগামী ডিসেম্বরের দিকে পুরোপুরি কাজ শেষ হবে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চালানোর জন্য এর আগেই বুঝিয়ে দেওয়া যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০২৩
এসবি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।