রাঙামাটি: বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের প্রবারণা পূর্ণিমার পর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হলো কঠিন চীবরদান। প্রবারণা পূর্ণিমা পালনের একমাসের মধ্যে এ কঠিন চীবন দানোৎসব পালন করে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা।
শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) বিকেলে রাঙামাটির রাজবন বিহারে দু’দিনব্যাপী দানোত্তম কঠিন চীবরদানের সমাপ্তি ঘটবে।
জানা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৌদ্ধ মন্দির রাঙামাটির রাজবন বিহারে ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে দুদিনব্যাপী পালিত হচ্ছে কঠিন চীবর দানোৎসব। বিহারে আটশো বৌদ্ধধর্মাবলম্বী নারী তাদের ষোলশ নরম হাতের পরম শ্রদ্ধা দিয়ে পূর্ণ লাভের সন্ধানে বৌদ্ধ ভিক্ষুকদের জন্য গেরুয়া তৈরি করেছে। নির্ঘুম নিশি কাটিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলা কেটে সুতা বানিয়ে রং করে নানা রকম আচার মেনে চীবর তৈরি করেছেন তারা।
ভক্তদের তৈরি এসব চীবর বা বস্ত্র বৌদ্ধ ভিক্ষুকরা পরিধান করে। তৈরিকৃত এসব বস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- দোয়াজিক, অন্তর্বাস, চীবর ও কটিবন্ধনী। তৈরিকৃত এসব বস্ত্র বৌদ্ধ ভিক্ষুদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। অনেক কষ্টে এসব বস্ত্র তৈরি করা হয় বলে একে কঠিন চীবর বলা হয়।
বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা বলছেন, মানুষ-মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে, শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রেখে এ ভুবনে বেঁচে থাকার শিক্ষা গৌতম বৌদ্ধ শিখিয়েছেন।
বিহারে আসা বৌদ্ধধর্মাবলম্বী নারী নিরূপা দেওয়ান বাংলানিউজকে বলেন, বিশাখা আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে ধর্মীয় গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো যায়। আর গৌতম বুদ্ধ আমাদের শান্তি, শৃঙ্খলা এবং হিংসা, বিদ্বেষ পরিহার করার শিক্ষা দিয়েছেন।
চীবর তৈরি করতে আসা কল্পনা চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বৌদ্ধ ভিক্ষুকদের জন্য বস্ত্র তৈরি করতে এসেছি। প্রতি বছর আসি, এ বছরও এসেছি। কাজটি করতে যেমন ভালো লাগে তেমনি পূর্ণতা অর্জন করা হয়।
ভারতের মহারাষ্ট্র প্রদেশ থেকে আসা বৌদ্ধধর্মাবলম্বী বিজয় লাক্সমী মণিরত্ন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা গৌতম বুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে এখানে এসেছি। এখানে এসে পুরো বিশ্বের মানুষের জন্য শান্তি এবং মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করছি।
তার সঙ্গী একই দেশের নাগরিক সুষ্মিতা মহাজন বাংলানিউজকে বলেন, ধর্ম মানুষকে প্রশান্তি দেয়। বহুদূর থেকে এখানে এসেছি প্রশান্তি এবং পূর্ণতা অর্জনের আশায়।
রাঙামাটি রাজবন বিহার শাখার উপাসক-উপসিকা পরিষদের গৌতম দেওয়ান বলেন, গৌতম বুদ্ধের শুরুতে বিশাখা প্রবর্তিত কঠিন চীবরদান শুরু হয়। যেটি বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা সম্মানের সঙ্গে পালন করে আসছে। মূলত নির্বাণ লাভের আশায় এ কঠিন চীবর দান পালন করে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা।
তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, জেলা পরিষদসহ সর্বস্তরের মানুষ সবাই আমাদের সহযোগিতা করেছেন। যে কারণে আমরা এত বড় অনুষ্ঠান করতে পেরেছি। এবার ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, আমেরিকা থেকে প্রায় শতাধিক বৌদ্ধধর্মাবলম্বী বিদেশি নাগরিক কঠিন চীর দানে অংশ নিয়েছেন। কঠিন চীবর দানে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটেছে বলে জানান তিনি।
দানোত্তম কঠিন চীবরদান একদিনে যেমন বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব তেমনি পার্বত্যাঞ্চলের মানুষের অন্যতম উৎসব। বৌদ্ধ ভিক্ষুকদের মধ্যে গেরুয়া প্রদানের মধ্যে দিয়ে শুক্রবার বিকেলে পাহাড়ে দানোত্তম কঠিন চীবরদানের পরিসমাপ্তি ঘটবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২২
এসএম