দিনাজপুর: দিনাজপুরে সপ্তাহের ব্যবধানে একটি খামারের ৩৫টিসহ ৪০টি গরু মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও আক্রান্ত রয়েছে কয়েকটি খামারের প্রায় অর্ধ শতাধিক গরু।
জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কর্মকর্তারা খুরা রোগ বললেও মিলছে না কোনো প্রতিকার। মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করতে রক্ত সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার সাতোর ইউনিয়নের প্রাণনগর গোয়ালপাড়া এলাকার খামারগুলোতে এমন চিত্র দেখা গেছে।
স্থানীয় ঘোষ ডেইরি ফার্মের মালিক গোপাল ঘোষ ও আনন্দ ঘোষ। ২০০০ সালে শুরু করেন ঘোষ ডেইরি ফার্ম। বর্তমানে তাদের খামারে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় শতাধিক গরু। হঠাৎ গরুর এমন রোগ আর মৃত্যুতে হতাশ তারা।
মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) সকাল পর্যন্ত ঘোষ ডেইরি ফার্মে সপ্তাহের ব্যবধানে মোট ৩৫টি গরু মারা গেছে। একই এলাকার চঞ্চল ডেইরি ফার্মের তিনটি গরু ও একটি মহিষ মারা গেছে। এছাড়াও পাশের গৌতম ঘোষ নামে এক খামারির একটি গরু মারা গেছে। এসব খামারের প্রায় অর্ধ শতাধিক গরু এখনও আক্রান্ত রয়েছে।
ঘোষ ডেইরি ফার্মের খামারি আনন্দ ঘোষ বলেন, এই খামারে আমরা দুধ উৎপাদন করে থাকি। একেকটি গাভি ১৫ থেকে ৩৫ লিটার পর্যন্ত দুধ দিয়ে থাকে। গাভি এবং বাছুরকে সময় মতো সব ধরনের ভ্যাকসিন দেওয়া হলেও কি কারণে যে একের পর এক গাভি/বাছুর মারা যাচ্ছে জানি না। এখন পর্যন্ত আমাদের মোট ৩৫টি গরু মারা গেছে। এগুলোর বাজার মূল্য প্রায় এক কোটি টাকার মতো। বিভিন্ন জায়গা থেকে ডাক্তাররা এসে দেখছে, বিভিন্ন রকম চিকিৎসা দিচ্ছে। কিন্তু তাতেও কোনো কাজে আসছে না। প্রতিদিনই গরু-বাছুর মারা যাচ্ছে। আমরা দুই ভাই তো এই খামারের ওপরেই নির্ভরশীল। আমাদের একটাই চাওয়া, আক্রান্ত বাকি গরুগুলোকে সঠিক চিকিৎসা দিয়ে যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ করে তোলা যায়।
চঞ্চল ডেইরি ফার্মের মালিক গোবিন্দ ঘোষ বলেন, প্রথমে আমার খামারের একটি গরু মারা যায়। তারপর আরও দুটি গরু ও একটি মহিষ মারা যায়। এখনও বেশ কয়েকটি গরু-মহিষ আক্রান্ত আছে। গরু যখন রোগে আক্রান্ত হয় তখন খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দেয়। ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে মারা যাচ্ছে। সব ধরনের চেষ্টা করছি কিন্তু কোনো চেষ্টাই কাজে আসছে না। তাড়াতাড়ি এ সমস্যার সমাধান না হলে আমরা খামারিরা শেষ হয়ে যাব।
এসব ডেইরি ফার্মে কর্মকর্তারা বলেন, রোগে আক্রান্ত হলে গরুগুলো খাওয়া ছেড়ে দেয়। মুখ দিয়ে লালা ঝরে। দুর্বল হয়ে যায় ধীরে ধীরে। দেহের তাপমাত্রা কমে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ঘাড় বেঁকে গিয়ে হঠাৎ পড়ে মারা যাচ্ছে। প্রথম তিনদিন একটা করে মারা গেলেও পরে কোনোদিন তিনটা কোনোদিন সাতটা এভাবে মারা গেছে। রাতে বেশির ভাগ গরু মারা যাচ্ছে। এসব গরু দাফন করতেই অনেক লোকজনের দরকার হচ্ছে। চারপাশের খামারিরা অনেক আতঙ্কের মধ্যে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে।
এ বিষয়ে জেলা ভেটেরিনারি কর্মকর্তা ডা. আশিকা আকবর তৃষা বলেন, আক্রান্ত খামারের গরুর নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এটি খুরা রোগের নতুন প্রজাতি। সমস্যা সমাধানে সব ধরনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২৩
আরএ