টাঙ্গাইল থেকে ফিরে: এক সময় দেশের গ্রাম-গঞ্জ, হাট-বাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় চোখে পড়তো নরসুন্দরদের ভ্রাম্যমাণ সেলুন। কখনও দেখা যেত বড় কোনো বটগাছের নিচে অথবা বাজার ঘেঁষা দেয়ালের পাশে দুটি টুল বা মোড়া বসিয়ে একটি স্ট্যান্ডে আয়না ঝুলিয়ে বসে আছেন নরসুন্দররা।
গ্রাম-গঞ্জে এক সময় কম খরচে এসব নরসুন্দরদের কাছে চুল-দাড়ি কামাতে ভিড় করতেন সব শ্রেণির মানুষ। তবে বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রসাধনীর কারণে পাল্টে গেছে নরসুন্দরদের জীবনমান।
শনিবার (১৩ জানুয়ারি) টাঙ্গাইলের কালিহাটি নারান্দিয়া বাজার বটতলায় দেখা মিলল সেই সময়ের এক নরসুন্দর দীতেন চন্দ্র শীলের সঙ্গে। তিনি চুল-দাড়ি কেটে গত ৫০ বছর এ বটতলার নিচে কাটিয়ে দিয়েছেন।
দীতেন চন্দ্র শীল বাংলানিউজকে বলেন, আমার বাবা খোকা চন্দ্র শীল তিনি এখানেই কাজ করতেন। আমি ছোটবেলায় বাবার কাছে এখানে আসতাম। তার কাছ থেকেই আমি এ কাজ শিখেছি। পরে আমি এ জায়গায় কাজ শুরু করি। প্রায় ৫০ বছর ধরে আমি এখানে চুল-দাড়ি কেটে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমি যখন চুল-দাড়ি কামাতে শুরু করি তখন এ কাজের মূল্য খুবই কম ছিল। তখনকার দিনে চুল কেটেছি দুই আনা, ১২ আনা ও ২৫ পয়সায়। বর্তমানে চুল কাটতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা নিচ্ছি এবং দাড়ি কাটতে নিচ্ছি ২০ টাকা। এক সময় এ জায়গায় ১৫ থেকে ২০ জন নরসুন্দর কাজ করতেন। তাদের মধ্যে শুধু আমি বেঁচে আছি। আর এখানে কাজ করে যাচ্ছি। বয়স হয়েছে, বাসায় বসে থেকে কী করবো। তাই এখানেই প্রতিদিন দুই থেকে তিনশ’ টাকার কাজ করি। আর তাই দিয়ে সংসার চালাই।
দীতেন শীল বলেন, বর্তমানে আধুনিক সেলুন হওয়ার কারণে আমার এখানে তেমন কাস্টমার হয় না। এখন শুধু শিশু ও বৃদ্ধরা আসেন। এক সময় সব শ্রেণির লোকজন এখানে চুল-দাড়ি কামাতে আসতো বিশেষ করে স্কুলের ছাত্ররা। বর্তমানে আধুনিক সেলুন হওয়া এখানে আর তেমন কাস্টমার আসে না।
তিনি বলেন, আমার তিন ছেলেকে লেখাপড়া করিয়েছি। এদের মধ্যে এক ছেলেকে বিএ পাস আরেক ছেলেকে এইচএসসি পাস করিয়েছি। কিন্তু তারা চাকরি না পেয়ে আমার মতোই নরসুন্দর হিসেবে কাজ করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২৪
আরআইএস