ঢাকা: প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরকালে হত্যার হুমকি দিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাছে একটি ই-মেইল আসে। তদন্তে শনাক্ত করা হয় হুমকিদাতাকে।
ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) জানায়, ২০২৩ সালের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরের সময় ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের অফিসিয়াল ই-মেইল ঠিকানায় একটি হুমকিবার্তা আসে।
হুমকিবার্তায় লেখা ছিল, ‘২৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভোর ৪টায় গুলি করা হবে। ’ তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি ডিএমপি ও পুলিশ সদরদপ্তরের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে জানানো হয়। ওই সময় বিদেশ সফরকালে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়।
পরে ওই ঘটনায় দীর্ঘ তদন্ত শেষে সৌদি আরবে অবস্থানরত দুজনকে শনাক্ত করা হয়। রাষ্ট্রদূত ও সাবেক আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারীর মাধ্যমে সৌদি সরকার ও স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হয়।
একপর্যায়ে শনাক্ত করা দুজনকে গত ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশে পাঠানো হলে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি। গ্রেপ্তাররা হলেন- সৌদি যুবদলের সভাপতি কবির হোসেন ও সহযোগী দীন ইসলাম।
সিটিটিসি বলছে, রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারার অংশ হিসেবে খোদ প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, গত বছরের ১৭ এপ্রিল বিকেল ৪টা ৫৯ মিনিটে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস সেন্টারের ই-মেইল ঠিকানায় হুমকিবার্তা সংবলিত একটি ই-মেইল আসে।
ইমেইলে ইংরেজিতে লেখা ছিল, ‘২৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভোর ৪টায় গুলি করা হবে। বাংলাদেশ পুলিশের ক্ষমতা নেই এ হামলা ঠেকানোর। ’
সিটিটিসি প্রধান বলেন, বিষয়টি জানার পর তাৎক্ষণিকভাবে হুমকিবার্তার ভয়াবহতা এবং জাতীয় নিরাপত্তা ও শান্তি-শৃঙ্খলার স্বার্থে বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। হুমকিদাতাকে দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে সিটিটিসি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সিটিটিসি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের একটি চৌকস দল গোপনীয় অনুসন্ধান এবং প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ শেষে ই-মেইল পাঠানো ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। জানা যায়, হুমকিবার্তা পাঠানো ব্যক্তির নাম নাম দীন ইসলাম বাদল। আইপি কর্মকাণ্ড পর্যালোচনায় তদন্ত টিম নিশ্চিত হয়, তার অবস্থান সৌদি আরবে।
পরে এ ঘটনায় ২০ এপ্রিল রমনা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করে সিটিটিসি। মামলার আসামি ও সহযোগীদের সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এনসিবি-ইন্টারপোলের পাশাপাশি ডিপ্লোম্যাটিক চ্যানেল ব্যবহার করা হয়।
দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং সৌদি কর্তৃপক্ষের তদন্ত শেষে ২৯ জানুয়ারি হুমকিদাতা দীন ইসলামকে তার সহযোগী কবির হোসেনসহ আটক করে বাংলাদেশে পাঠায়। পরে তাদের হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের সময় দীন ইসলামের কাছ থেকে হুমকিবার্তা পাঠানো ই-মেইল অ্যাড্রেসটির রিকভারি মোবাইল নম্বরসহ একটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, গত ১০ বছর ধরে সৌদিতে থাকা কবির সৌদি হোসেন যুবদলের একাংশের সভাপতি। একই সঙ্গে সৌদি যুবদলের নেতা দীন ইসলাম। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীকে হুমকির উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২৭ বার হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছে। এ হুমকির গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের বক্তব্য সন্দেহজনক। শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা বা হামলা করা হলে রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে, এটিই তাদের ছিল উদ্দেশ্য। তাদের সঙ্গে অন্য কারো যোগসাজশ ছিল কি না, তা জানতেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
দীর্ঘ সময় তদন্ত ও পারস্পরিক যোগাযোগের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকিদাতাদের বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য সৌদি সরকার ও সৌদিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৪
পিএম/আরএইচ