বরিশাল: ‘প্রায় চারশ বছর’ পুরোনো পর্তুগিজ আমলের এক মসজিদ ঘিরে প্রচলিত আছে নানা বিশ্বাস। মুসল্লিদের অনেকের দাবি, এটি একটি গায়েবি মসজিদ।
স্থানীয়দের তথ্যানুযায়ী, এ মসজিদের ভেতরে তিনজন দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতে পারেন। এতে মিম্বর না থাকলেও দেয়াল কেটে আকৃতি দেওয়া হয়েছে। মসজিদের ভেতরে উচ্চতা সাড়ে ১২ ফুট, দৈর্ঘ্যে ৬ ফুট এবং প্রস্থে ৫ ফুট। দুপাশে রয়েছে ছোট দুটি জানালা। এ মসজিদে একটি গম্বুজও রয়েছে। মসজিদটি দেখতে প্রায় প্রতিদিনই ভিড় করেন দর্শনার্থীরা।
মসজিদটি নিয়ে অলৌকিক বিশ্বাসও প্রচলিত রয়েছে পুরো এলাকায়, যার মূল চরিত্রে বটসদৃশ একটি গাছ। পুরো মসজিদটি ঘিরে রেখেছে গাছটি। লতায় প্যাঁচানো গাছটি স্থানীয়ভাবে লাহর গাছ নামে পরিচিত। এর পাতার মধ্যেও রয়েছে ভিন্নতা। সচরাচর এমনটি দেখা যায় না।
গাছটি এমনভাবে মসজিদটিকে ঘিরে রেখেছে, বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই এখানে কিছু আছে। মসজিদ, গাছ এবং এখানকার পুকুর নিয়ে স্থানীয়দের আছে নানা বিশ্বাস, মতবাদ। কেউই এ মসজিদের সঙ্গে জুড়ে থাকা গাছের ডালা ভাঙা তো দূরে থাক, একটি পাতাও ভুলক্রমে ছেঁড়েন না। গাছ থেকে যে পাতা ঝড়ে পড়ে, তা পড়েই থাকে। জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারও করেন না কেউ।
স্থানীয়দের বিশ্বাস, কেউ যদি এ গাছের ডাল ভাঙেন, কিংবা পাতা ছেঁড়েন, তবে তার বিপদ হবেই হবে। স্থানীয় বাসিন্দা সুমন বলেন, গাছটি পুরোপুরিভাবে মসজিদকে ঘিরে রেখেছে। এ মসজিদ সাধারণ কোনো মানুষের সৃষ্টি নয়। পাশাপাশি এ মসজিদের পুকুর নিয়ে নানা ধরনের কাহিনী আছে।
সজিব নামে আরেকজন জানান, মসজিদটিকে ঘিরে রাখা বটগাছের কোনো ডাল আজ পর্যন্ত কেউ কাটেনি। এর ডাল কাটা নিষেধ। কেউ কাটলে তার সঙ্গে নানা অলক্ষুণে ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, ছোটবেলা থেকে তিনি মসজিদটি দেখছেন। বাপ-দাদাসহ গ্রামের অনেক মুরব্বির কাছ থেকে শুনেছেন, জিন-পরীরা নাকি এ মসজিদ বানিয়েছে। মসজিদসহ আশপাশের গাছপালার ক্ষতিসাধনের চেষ্টাও কেউ করেন না।
আরিফুর রহমান নামে অপর এক বাসিন্দা বলেন, বহু বছর ধরে মসজিদটি এভাবেই আছে। তিন থেকে পাঁচজন এ মসজিদে নামাজ পড়তে পারে। ছোটবেলা থেকেই মসজিদটি দেখে আসছি। আমার বাপ-দাদারাও এ মসজিদে নামাজ পড়েছেন। তাদের কেউ কেউ বলে গেছেন- এই মসজিদটির দেখভাল করছে জিন-পরীরা। অনেকেই নাকি আবার গভীর রাতে সাদা পোশাকে কাউকে এ মসজিদে নামাজ আদায় করতেও দেখেছেন।
স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠদের দাবি, এ পর্যন্ত সন্ধান পাওয়া সবচেয়ে ছোট প্রাচীন মসজিদ এটি। এ মসজিদ পরিচালনায় থাকা লোকজন বলছেন, পুরোনো দলিল-দস্তাবেজ অনুসারে, পর্তুগিজ আমল থেকেই ওখানে মসজিদ বাড়ি নামে রেকর্ড রয়েছে। তবে ঠিক কখন নির্মাণ করা হয়েছিল, তার সঠিক ইতিহাস পাওয়া যায়নি।
মসজিদের সামনে একটি দানবাক্স রয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত ভক্তরা এই দানবাক্সে দান করে থাকেন। প্রতি তিন মাস অন্তর খোলা হয় মসজিদের দানবাক্স। প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ ও খিচুড়ি খাওয়ানো হয় গরিবদের। মসজিদটির ইতিহাস সংরক্ষণের পাশাপাশি এর অবয়ব ঠিক রেখে উন্নয়নের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
মোতাহার হোসেন নামে একজন জানান, যে সাহায্য পাওয়া যায়, তা মসজিদের নানা কাজে ব্যয় করা হয়। সরকার যদি মসজিদটি কেন্দ্র করে এ এলাকায় উন্নয়ন করে, তাহলে এ এলাকার মানুষের পাশাপাশি দর্শনার্থীরাও উপকৃত হবেন।
দর্শনার্থীরা বলছেন, রাস্তাঘাটের কারণে মসজিদটি দেখতে গিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয়। রাস্তাঘাটের উন্নয়নে সবার আগে উদ্যোগ নেওয়া উচিত। নয়তো পুরোনো এ মসজিদের ইতিহাস জানার বিষয়ে আগ্রহ হারাবে নতুন প্রজন্ম।
বরিশাল শহর থেকে সড়কপথে বেলতলা খেয়াঘাট হয়ে চরমোনাইয়ের চরহোগলা গ্রামে যেতে হয়। শহরের রুপাতলী হয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ছুঁয়ে ভোলা সড়ক ঘুরে চরমোনাইয়ের গ্রামটিতে সরাসরি যাতায়াত করা যায়।
পতাং ও নাপিতের হাট নামক দুটি স্থানে এমন ছোট আরও দুটি মসজিদ ছিল বলে জানা গেছে। আর সেগুলো এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২৪
এমএস/আরএইচ