ঢাকা: ময়লার স্তূপের পাশেই বসত তিন শিশুর। সেখানেই হাসি কান্নায় মেতে থাকে তারা।
রোববার (২৪ মার্চ) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী সমিতির ঠিক বিপরীতে ফুটপাতের পাশেই খালি জায়গায় বেশ আনন্দ নিয়ে তাদের খেলা করতে দেখা যায়। এ সময় তারা একটি প্লাস্টিক বস্তার ভেতর কখনো ঢুকে আবার সেই বস্তার ওপরে শিশুকে বসিয়ে অপর দুই শিশুকে দোল খাওয়াতে থাকে আর মিষ্টি করে প্রাণখোলা হাসিতে মেতে থাকতে দেখা যায়। এভাবেই আনন্দ আত্মহারা হয়ে ঘণ্টাব্যাপী তারা খেলা করতে থাকে। অথচ সেই স্থানটিতেই ময়লা ফেলা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ এর আশেপাশের ময়লাও সেখানে ফেলানো হয়। জমে থাকা ময়লার স্তূপের পাশেই খালি জায়গায় তিন শিশুই তাদের পরিবারের সঙ্গেই সেখানেই বেড়ে উঠছে।
সেখানেই কথা হয় ফরহাদ ও তানহার মা মরিয়মের সঙ্গে। তিনি জানান, শিশু দুটির সন্তানের বাবার নাম ফালান। ভাঙারি টোকানোর পাশাপাশি যখন যে কাজ পায় সেটাই করেন তিনি। এ ময়লার পাশেই তাদের জীবনযাপন। মরিয়মও নিক্ষিপ্ত ময়লার ভেতর থেকে কিছু জিনিসপত্র সংগ্রহ করে সেগুলো ভাঙারি দোকানে বিক্রি করে থাকেন। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে চলছে ময়লার পাশে থাকা ফালান ও মরিয়ম দম্পতির দুই শিশুকে নিয়ে তাদের সংসার জীবন।
কথা হয় শিশু জান্নাতের মা ময়না আক্তারের সঙ্গে। তিনি জানান, তার স্বামীর নাম আবুল হোসেন। তিনি রিকশাচালক। রিকশাচালক স্বামীর পাশাপাশি ময়নাও আশেপাশে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে স্বামীর সন্তানদের নিয়ে একই জায়গায় ওই দম্পতির সঙ্গে ভাগাভাগি করে থাকে।
তারা জানান, দুই পরিবারের মধ্যে ঝগড়া হলেও কোনো দিন তিন শিশুর মধ্যে ঝগড়া হয় না। তারা তিনজন আপন মনেই সারাদিন খেলা করে থাকে।
তারা জানান, তাদের তেমন আত্মীয়-স্বজন নাই। দেশের বাড়িও জায়গা সম্পদ নাই। ঢাকা শহরে বছর পর বছর ধরে থাকছেন।
খেলা করার সময় তিন শিশুর মধ্যে দুইজনের সঙ্গে কথা বলতে গেলে, প্রথমেই তারা মিষ্টি হাসি দেয়। মনে হলো আমাকে (প্রতিবেদক) তারা হাসি দিয়ে অভ্যর্থনা জানালো। জান্নাত ও তানহার কাছে জানতে চাওয়া হলো, সামনে ঈদ আসছে তোমরা নতুন জামা কাপড় পরবে না, এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে তারা বলেন, ‘আম্মায়-আব্বায় কইছে নতুন জামা আমাগো কিনে দিবো। ’
সমাজের কাছে পথশিশু নামেই বেশি পরিচিত তারা। রাস্তার পাশে ময়লার ডাস্টবিনে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তাদের দিন পার করতে হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৪
এজেডএস/আরআইএস