ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বিটরুট চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার সুফি

মো. আমিরুজ্জামান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২০ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২৪
বিটরুট চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার সুফি

নীলফামারী: ভিনদেশি সবজি বিটরুট। থাইল্যান্ডের এ সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের।

জেলার সদরে ও সৈয়দপুরের কামারপুকুরে এই সবজি চাষে সাফল্য দেখিয়েছেন কৃষকেরা। বিভিন্ন পুষ্টিগুণ ও ঔষধিগুণ সম্পন্ন এ সবজিটিকে সুপারফুডও বলা হয়ে থাকে। সালাদ, সবজি ও জুসের জন্য অভিজাত শ্রেণির হোটেলে এ সবজির বেশ কদর রয়েছে। পুষ্টিকর খাবার হিসেবেও এটি পরিচিত। উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগের মহৌষধ হিসেবেও ফলটি কার্যকর।

বিটরুটের গাছ দেখতে অনেকটা পালং শাকের মতো হলেও রঙে ভিন্নতা আছে। এ সবজির ভেতরের রং গাঢ় লালচে বেগুনি। বীজ রোপণের দুই মাস পর মাটির নিচে এ সবজিটি হয়। প্রতিটি বিটরুটের ওজন হয় গড়ে ২০০ গ্রাম থেকে আধা কেজি। দামও ভালো। বাজারে এ সবজির কেজি প্রতি দাম ৩০০ টাকার কাছাকাছি। বিটরুট চাষে অবশ্য খরচও বেশি। এক বিঘা জমিতে খরচ হয় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকার মতো। তবে দাম বেশি হওয়ায় খরচ বাদে এক লাখ টাকার মতো আয় করা সম্ভব।

নীলফামারী সদর উপজেলার পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের কাছারীপাড়া গ্রামে বাসিন্দা আব্দুল গফুরের ছেলে আবু সুফি আহমেদ। রংপুরের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ালেখা শেষ করেছেন তিনি। তার বাবা পেশায় কৃষক হওয়ায় কৃষি পেশার ওপর রয়েছে সম্মান ও ভালো লাগা। আর এই ভালো লাগা থেকে প্রথমবারের মতো ৫২ শতক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে উচ্চ ফলনশীল বিটরুট চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। এদিকে আগামী মৌসুমে বিটরুট চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন স্থানীয় চাষিরাও।

এছাড়া নিজেই তৈরি করেছেন ব্যাক টু নেচার (বিএনএল) নামে একটি কোম্পানি। সেই কোম্পানির মাধ্যমে নিজের চাষাবাদের পণ্য দেশের বিভিন্ন সুপার শপে বিক্রি করছেন তিনি।

অপরদিকে জেলার সৈয়দপুরের কামারপুকুর ইউনিয়নের দলুয়া চৌধুরীপাড়ায় সোনাঝুড়ি নামে একটি খামারে এই বিটরুট চাষে সফলতা পেয়েছেন খানম। তিনি বলেন, শখের বশে বাড়িতে বসে না থেকে নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছি খামার। সেখানে মুরগিসহ নানা ধরনের সবজি চাষাবাদ করে মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে চলেছি। আমার খামারটিতে সার্বক্ষণিক ৫/৬ জন শ্রমিক কাজ করে। এলাকায় বিটরুট চাষ ব্যাপক চাহিদা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।  

প্রকৌশলী আবু সুফি আহমেদ বলেন, প্রথম প্রথম এই বিটরুট চাষ করায় অনেকে হাসি-ঠাট্টা করেছেন। পরে সফলতা ও চাহিদা দেখে স্থানীয় কৃষকেরা আগ্রহী হচ্ছেন। শীতকালে উৎপাদন বেশি হলেও বর্তমানে সবসময়ই এ সবজির দেখা মেলে। ডিসেম্বরের শুরুতে বিটরুট রোপণ করার উপযুক্ত সময় এবং তা উঠতে প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ দিন সময় লাগে। মার্চের শেষে ফসলটি সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করার উপযুক্ত সময়।

তিনি আরও বলেন, বিটরুট তুলে কুচিকুচি করে কাটার পর তা শুকানো হচ্ছে বাড়ির ছাদে। এরপর তার হিট মেশিনের মাধ্যমে আরও শুকানোর প্রক্রিয়া শেষে পাউডার করা হচ্ছে। তা ছোট ছোট জারে করে চলে যাচ্ছে ক্রেতার হাতে। প্রতিদিন এক থেকে দুই কেজি পাউডার বিক্রি করেন সুফি। আধা কেজির পাউডারের দাম এক হাজার টাকা আর ২৫০ গ্রাম পাউডারের দাম ৫০০ টাকা।

আবু সুফি আহমেদ বলেন বলেন, এক কেজি বীজ ও সার, লেবার ও পানি খরচসহ বিঘা প্রতি ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বিটরুট চাষে। বেলে, দোআঁশ জাতীয় উর্বর মাটিতে চাষ করলে সার কম লাগে। এ গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হওয়ায় খরচ অনেকটাই কম। বীজ রোপণের চার মাসের মাথায় ক্ষেত থেকে বিটরুট উঠানো শুরু করেছি। আমার কোম্পানির মাধ্যমে কাঁচা এবং পাউডার করেও বিক্রি করছি।

নীলফামারী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক আহমেদ ও সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ধীমান ভূষণ বলেন, জেলায় এখন বিটরুট চাষ হচ্ছে। বিটরুটে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, কপার ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এ ছাড়া এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ক্যানসার, হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বিটরুট সবজি চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক কাজ করছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।