রাজশাহী: রাজশাহীর বাজারে অর্ধেক দামেও মিলছে না তরমুজের ক্রেতা! ৮০ টাকা কেজির তরমুজ নেমে এসেছে ৪০ টাকায়।
সকাল, বিকেল ও রাতে তিন ধরনের দাম ধরা হচ্ছে তরমুজের।
এবার গোটা দেশেই হুলস্থুল ফেলে দিয়েছিল গরিবের রসালো ফল তরমুজ। এ বছর মৌসুমের আগেই বাজার দেখা যায় শিশু থেকে প্রবীণ সবারই পছন্দের ফল তরমুজের। গ্রীষ্মের এ আকর্ষণীয় ফল তাই বিক্রি হচ্ছিল বসন্তেই। তবে শুরু থেকে দাম ছিল চড়া। আর রমজানের শুরুতে এর দাম হয়ে ওঠে আকাশচুম্বী। পিস হিসেবে মোকাম থেকে কিনে নিয়ে আসা তরমুজ বিক্রি হচ্ছিল ৮০ টাকা কেজি দরে। এ নিয়ে হৈচৈ পড়ে যায় সর্বত্র।
আর্থাৎ ৪-৫ কেজি ওজনের একটি তরমুজ কিনতে গেলেও প্রায় ৫০০ গুণতে হচ্ছিল। ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়েও তরমুজের দাম সাধারণ মানুষের লাগালে আনা যাচ্ছিল না। উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাড়তি দামের কারণে তরমুজ বয়কটের ডাক দেওয়া হয়। অনেকেই এ আহবান জানিয়ে হ্যাশট্যাগ (#) করেন। এর প্রভাব পড়েছে রাজশাহীর তরমুজের বাজারেও।
লাগামহীন দামের কারণে মানুষ তরমুজ কেনা থেকে বিরত থাকায় রমজানের ২০ দিন না যেতেই তরমুজের দাম আকাশ থেকে নেমে এসেছে মাটিতে। রাজশাহীতে রমজানের শুরুতে কেজিপ্রতি তরমুজের দাম সেঞ্চুরির কাছাকাছি চলে গেলেও এখন বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে। সন্ধ্যার পর এ দাম নামছে ২০-২৫ টাকাতেও। তবুও ক্রেতা কমেছে। অথচ হালে তরমুজের সরবরাহ আরও বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় শেষ পর্যন্ত বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরাই।
মহানগরীর সবচেয়ে বড় তরমুজের মোকাম শালবাগান বাজার। এর আশপাশেই তরমুজের সবগুলো বড় আড়ত। এখানকার ব্যবসায়ীরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকেই বাড়তি দামে তরমুজ না কেনার ডাক দিয়েছেন। এতে অনেকেই সমর্থন দিয়ে তরমুজ কিনছেন না। এর প্রভাব পড়েছে রাজশাহীর বাজারেও। আর মৌসুম শুরু হওয়ায় বাজারে চলতি সপ্তাহে তরমুজের সরবরাহও বেড়েছে। এখন তরমুজের বিক্রি না বাড়লে তারা চরম বেকায়দায় পড়বেন বলে আশঙ্কা করছেন।
মহানগরীর শালবাগান বাজারের তরমুজ ব্যবসায়ী সাজ্জাদ হোসেন বাপ্পি বলেন, চলতি সপ্তাহে তরমুজের সরবরাহ বেড়েছে। তাই দামও কমেছে। কিন্তু বাজার তরমুজের ক্রেতা খুবই কম। যারা বড় বড় ইফতার মাহফিলের আয়োজন করছেন তারা কিনছেন। এছাড়া কিছু উচ্চবিত্ত শ্রেণির মানুষ নিয়মিত কিনছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ তরমুজের বাজারে নেই বললেই চলে। কোনো কোনো ব্যবসায়ী তরমুজ বিক্রি করতে না পারায় ক্ষতির মুখে পড়ছেন।
এ সময় দুলাল হোসেন নামে অপর এক তরমুজের আড়তদার দাবি করে বলেন, মূলত তারা যেমন দামে তরমুজ কেনেন ঠিক সেই দামেই বিক্রি করেন। তবে কিছু তো লাভ করতেই হয়৷ কিন্তু রমজানের শুরুতে যেই ব্যবসা হয়েছে এখন সেই অবস্থা নেই। তরমুজের বাজার মন্দা যাচ্ছে।
কেবল শালবাগান বাজার নয়, মহানগরীর নওদাপাড়া, গোরহাঙ্গা রেলগেট, স্টেশন বাজার, ভদ্রা মোড়, সাহেববাজার, কোর্ট বাজার, উপশহর মোড়, নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে কমবেশি একই অবস্থা দেখা গেছে।
মহানগরীর সাহেব বাজার এলাকায় কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী সেলিম আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, আকাশচুম্বী দামের কারণে তিনি এখন পর্যন্ত বাড়িতে তরমুজ নিয়ে ছেলে-মেয়ের মুখে দিতে পারেননি। ছোট্ট একটি তরমুজ কিনতে গেলেও কদিন আগে ৪০০-৫০০ টাকার নিচে পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় তার মতো একজন ছোট্ট বেতনের চাকরিজীবী মানুষের পক্ষে দামি তরমুজ কিনে ছেলে-মেয়েদের খাওয়ানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই প্রায় এক দেড় মাস আগে বাজারে তরমুজ উঠলেও তিনি এখন পর্যন্ত তরমুজ কেনেননি। ঈদের আগে তিনি আর তরমুজ কিনবেন না বলেও জানান।
মহানগরীর সাগরপাড়া এলাকার শফিকুল ইসলাম বলেন, এখন তরমুজ কম দামে পাওয়া যাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু কাটার পরে দেখা যাচ্ছে সে তরমুজ কাঁচা বা অপরিক্ক। তরমুজের বিচির রঙ সাদা, তরমুজের ভেতরেও সাদা। কিন্তু তরমুজ একবার কাটলে সেই তরমুজ ব্যবসায়ীরা আর ফেরত নিতে চান না কোনো অবস্থাতেই। এ নিয়ে হরহামেশাই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ক্রেতাদের ঝগড়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২৪
এসএস/জেএইচ