ঢাকা: সকাল হয়েছে মাত্র। ভেঙেছে কোকিলের ঘুম।
রোববার (১৪ এপ্রিল) বৈশাখের প্রথম দিন ভোরে আহির ভৈরব রাগে শিল্পী মর্তুজা কবির মুরাদের বাঁশির সুরে শুরু হয় রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। পরে ছায়ানটের শিল্পীরা সম্মেলক কণ্ঠে শোনান ‘আঁধার রজনী পোহালো’।
একক কণ্ঠে ‘বিমল আনন্দে জাগো রে’ শোনান সত্যম্ কুমার দেবনাথ এবং তানিয়া মান্নান শোনান ‘তোমার সুর শুনায়ে’।
ভোরের পাখির কলতান আর সংগীতের সুর যেন মিলেছে একই প্রাণে। প্রকৃতিও যেন সুরের মায়াজালে আবাহন করছে বাংলা নববর্ষকে। রমনার সবুজ চত্বরে ভেসে আসছে সেই চিরচেনা গানের সুর, যা চলে দুই ঘণ্টা। শেষ হয় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে।
ষাটের দশকে পাকিস্তানিদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে রমনার বটমূলে যে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সূচনা করেছিল ছায়ানট, এখন তা বাঙালির নববর্ষ উদযাপনের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাড়া প্রতি বছরই এই আয়োজনটি করে আসছে ছায়ানট। করোনা মহামারির দুই বছর আয়োজনটি করা হয়েছিল ভার্চ্যুয়ালি।
প্রতি বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও গান, আবৃত্তি আর কথনে বাংলা নতুন বছরকে স্বাগত জানাল ছায়ানট।
এবার অনুষ্ঠান সাজানো হয় নতুন স্নিগ্ধ আলোয় স্নাত প্রকৃতির গান, মানবপ্রেম-দেশপ্রেম আর আত্মবোধন-জাগরণের সুরবাণী দিয়ে। যোগ হয়, জাতীয় কবির কালজয়ী সৃষ্টির বিজাতীয় অবমাননার প্রতিবাদ এবং লেখনীর দুর্দম শক্তিতে বাঙালির গণজাগরণে স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে চলা আবু বকর সিদ্দিককে স্মরণ।
ছায়ানটের যুগ্ম সম্পাদক জয়ন্ত রায় বলেন, এবার আয়োজনে সম্মেলক গান ১১টি, একক গান ১৫টি এবং পাঠ ও আবৃত্তি ছিল।
ঢাকার রমনা উদ্যানে দুই ঘণ্টাব্যাপী এই আয়োজন সরাসরি সম্প্রচার করে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার। দেখা যায় ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেলেও।
ছায়ানট সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা বলেন, এবারের নববর্ষের প্রথম প্রভাতে, আমরা মানুষের জয়গান করেছি। ভোগবাদ নয়, স্বার্থপরতা নয়। মনুষ্যত্বকে পাওয়ার অভিলাষী ছায়ানটের আহ্বান- স্বাভাবিকতার সাধনা এবং সম্প্রীতির ধ্যান ‘দূর করো আত্মকেন্দ্রিকতা, আপনি জ্বালো এই তো আলো’।
ছায়ানট সাধারণ সম্পাদক লিসা বলেন, সবাইকে নিয়ে শুভ কর্মপথে চলবার, কণ্ঠে নির্ভয় গান তুলে নেওয়ার ছায়ানটের এই আয়োজন সার্থক হবে সর্বজনের সমর্থন, অংশগ্রহণ এবং উপলব্ধিতে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২৪
এইচএমএস/আরএইচ