ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘একটা ম্যাজিক দেখাব’ বলেই ছাত্রকে বেধড়ক পেটালেন শিক্ষক

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৩ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২৪
‘একটা ম্যাজিক দেখাব’ বলেই ছাত্রকে বেধড়ক পেটালেন শিক্ষক

পাবনা (ঈশ্বরদী): পাবনার ঈশ্বরদীতে আখলাকুর সাফা রাফসিন (১১) নামে পঞ্চম শ্রেণির এক শিশু শিক্ষার্থীকে বেত দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করেছেন ঈশ্বরদী সাউথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক উত্তম কুমার দাস।

‘আমি এখন একটা ম্যাজিক দেখাব’- বলেই  ওই কোমলমতি বেধড়ক পেটান বলে অভিযোগ উঠেছে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

 

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে ঈশ্বরদী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।  

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সকালে ঈশ্বরদী শহরের দরিনারিচা রহমান কলোনি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

আহত শিক্ষার্থী রাফসিন ঈশ্বরদী পৌর এলাকার আলোবাগ মোড় এলাকার ইলেকট্রিক ব্যবসায়ী রকিবুল ইসলাম রকিবের ছেলে। অভিযুক্ত শিক্ষক উত্তম কুমার দাস ঈশ্বরদী শহরের থানাপাড়া রহমান কলোনি এলাকার তারা দাসের ছেলে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর পরিবারের লিখিত অভিযোগে জানা যায়,  রাফসিন ঈশ্বরদী সাউথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণিতে পড়ে। সেই সুবাদে বিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক উত্তম কুমার দাসের বাড়িতে গিয়ে প্রাইভেট পড়ত সে। বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সকালে শিক্ষক উত্তমের বাড়িতে প্রাইভেট পড়ার সময় ‘চোখ উপরের দিক তাকিয়ে’ পড়া মুখস্থ করছিল রাফসিন। এসময় রাফসিনকে বইয়ের দিকে তাকিয়ে পড়তে বলেন উত্তম। তাৎক্ষণিক শিক্ষকের কথা শিশু রাফসিন বুঝতে পারেনি। প্রাইভেট শেষ করে শিক্ষক উত্তম সব শিক্ষার্থীকে বাইরে যেতে বলে। এসময় তিনি হাসতে  হাসতে ‘আমি এখন একটা ম্যাজিক দেখাব’ বলেই রাফসিনকে বেত দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটান। এক পর্যায়ে রাফসিন বেঞ্চ থেকে মাটিতে পড়ে গেলে সেখানেও বেধড়ক পেটান উত্তম। এতে শিক্ষার্থী রাফসিনের পিঠের অংশ ফেঁটে রক্তাক্ত হয়। খবর পেয়ে অভিভাবকরা তাকে উদ্ধার করে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে চিকিৎসা দেন।

শিশু রাফসানের মা ফরিদা পারভীন বাংলানিউজকে বলেন, বুধবার (২৩ মে) দুপুরে রাফসিন বাড়িতে আসে। এসময় তার মুখ কেমন যেন বিষণ্ন লাগছিল। আমি তার কাছে জানতে চাই কি হয়েছে? এসময় রাফসিনের সহপাঠীরা জানায়, রাফসিনকে বেধড়ক পিটিয়েছেন শিক্ষক উত্তম। আমি রাফসিনের জামা খুলে দেখি, বেতের প্রহারে সারা পিঠ চাকা চাকা দাগ হয়ে গেছে। তাৎক্ষণিক বিষয়টি জানতে শিক্ষককে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘আমি একটু শাষণ করেছি, যেন আমাকে একটু ভয় পায়!’ 

রাফসিনের মা আরও জানান, সাউথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমার মজুমদারকে আমি অনেকবার বলেছিলাম, ‘আমার ছেলে রাফসিন একটু দুর্বল, তাকে একটু ভালোমতো যত্ন নেবেন। ’ জবাবে তিনি বলেছেন, ‘দুর্বল ছাত্রদের পড়াশুনা করার দরকার নাই, অযথা বাবা-মায়ের টাকা পয়সা নষ্ট, তাদেরকে বরং কাজে লাগিয়ে দিলে ভালো হয়। ’ একজন প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে এ ধরনের মন্তব্য আমরা আশা করি না।

এদিকে ঘটনার পর থেকে ঈশ্বরদী সাউথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমার মজুমদার ও খণ্ডকালীন শিক্ষক উত্তম কুমার দাসের মোবাইলফোন নম্বরে কল দিলে সেগুলো বন্ধ পাওয়া গেছে। যে কারণে তাদের বক্তব্য নেওয়া যায়নি।

ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, শিশু শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে আহত করার ঘটনা শুনেছি। এ ব্যাপারে ওই শিশু শিক্ষার্থীর বাবা রকিবুল ইসলাম রকিব বাদী হয়ে ঈশ্বরদী থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ তদন্ত করবে, ঘটনা যদি সত্যি হয়,  শিশুটিকে আটকে রেখে বেধড়ক পেটানো হয়েছে। অবশ্যই শিশু নির্যাতন আইনে মামলা নথিভুক্ত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২৪
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।