চাঁপাইনবাবগঞ্জ: জেলার ভোলাহাটে তিন বছরের বেশি সময় ধরে আন্দিপুরাণ কমিউনিটি ক্লিনিকে যাওয়ার কোনো রাস্তা ও বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। বিশেষ করে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে গ্রামের এ ক্লিনিকটিতে বিদ্যুৎ না থাকায় ভোগান্তিতে পাঁচ গ্রামের সেবাগ্রহীতারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে উপজেলার জামবাড়িয়া ইউনিয়নের আন্দিপুর গ্রামে ৮ শতক জমির ওপর কমিউনিটি ক্লিনিকটি প্রতিষ্ঠা হয়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ক্লিনিকটির কার্যক্রম শুরু হয়। তখন থেকেই ক্লিনিকটিতে বৈদ্যুতিক সংযোগ ও যাতায়াতের রাস্তা নেই। জামবাড়িয়া ইউনিয়নটি শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার এবং নিজ উপজেলা ভোলাহাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দুরে হওয়ায় প্রতিদিন এখানকার পাঁচটি গ্রামের গড়ে ৭০-৮০ জন রোগী এই কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামের বিভিন্ন বয়সের মানুষজন সেবা নিতে ক্লিনিকের বারান্দায় ভিড় করেছেন। গরম থেকে বাঁচতে প্রায় সবার হাতে ছিল হাত পাখা। একই চিত্র স্বাস্থ্যকর্মীদেরও। হেলথ প্রভাইডারের এক হাতে পাখা অন্য হাতের সাহায্যে রোগীর যাবতীয় সমস্যা খাতায় লিখতে দেখা গেছে। বিশেষ করে মা ও শিশুদের সমস্যা বেশি হয়। প্রত্যাশিত সেবা পেলেও ক্লিনিকটিতে বিদ্যুতের ব্যবস্থা না থাকায় রোগীদের গরমে কষ্ট পেতে হচ্ছে। ক্লিনিকটির বাইরেও বেশ ভোগান্তি লক্ষ্য করা গেছে।
প্রধান সড়ক থেকে ক্লিনিকে যেতে কোনো রাস্তা না থাকায় মানুষের জমি দিয়ে সেবাপ্রার্থীদের যেতে হয়। আর যাদের জমি তারা কেউ জমি ঘিরে চাষাবাদ করায় দুই জমির মাঝের আইলের ওপর দিয়ে গ্রামের সেবাপ্রার্থীদের যেতে হয়। এতে করে অসুস্থ ও বৃদ্ধ রোগীদের সেখানে যাওয়া অনেকটা কষ্টকর হয়।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আন্দিপুর কমিউনিটি ক্লিনিকটি চালু থেকেই তিন বছর ধরে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। নেই রাস্তাও। এতে করে অসুস্থ, প্রতিবন্ধী, মা ও শিশুদের সমস্যা বেশি হয়। প্রত্যাশিত সেবা পেলেও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা না থাকায় গরমে কষ্ট পেতে হয়।
ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা আমেনা বেগম বলেন, দেখেন ভাই আন্দিপুর গ্রামে এই ক্লিনিকটি ছাড়া আর কোনো সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক নেই। গ্রামের মানুষের একমাত্র ভরসা এটিই। কিন্তু দুঃখের বিষয় তিন বছরের বেশি সময় ধরে এখানে বিদ্যুৎ নেই। নেই যাওয়ার রাস্তা। অসুস্থ রোগীকে রিকশা বা ভ্যানে করে আনারও সুযোগ নেই। প্রচণ্ড গরমে শিশুরা কান্না করে। গরম থেকে বাঁচতে এখানকার ডাক্তারসহ রোগীরা হাত পাখা দিয়ে নিজেরাই নিজেদের বাতাস করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কালাম বলেছেন, এখনকার যে তাপমাত্রা মানুষের এমনই স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। এর মধ্যে গ্রামের এই ক্লিনিকটিতে রোগী চিকিৎসা নিতে এসে গরমে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন রোগীরা। এছাড়া এই ক্লিনিকে আসার জন্য নির্দিষ্ট কোনো যাতায়াতের রাস্তা নেই। ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি দিয়ে যাতায়াত করতে অনেক বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
অপর সেবাপ্রার্থী আলেকনুর জানান, তিনি হাঁটতে পারেন না। তাই রাস্তায় বসে আছেন। তার স্বজন গেছে তার সমস্যা ডাক্তারকে জানাতে। তিনি চিকিৎসাপত্র ও ওষুধ নিয়ে আসবেন।
ক্লিনিকের সামনের জমির মালিক আব্দুর রহিম জানান, তাদের জমির ওপর দিয়ে মানুষ চলাচল করায় প্রায় তাদের ফসলের ক্ষতি হয়। তারপরও তারা মানুষের যাতায়াতের সুযোগ দিয়ে রেখেছেন।
অপর জমির মালিক শরিফুল ইসলাম জানান, ক্লিনিকের জায়গাটি খাস জমি হলেও এর চারপাশের সব জমিই ব্যক্তি মালিকানাধীন। ক্লিনিকটি যেতে প্রায় ১০০ ফিট রাস্তা দরকার। তারসহ রহিম ও তোফাজ্জলের জমির কিছু অংশ সংশ্লিষ্টরা কিনে নিয়ে রাস্তা তৈরি করলেই তো আর ভোগান্তি থাকে না। তাছাড়া এটি নির্মাণের সময় বিদ্যুৎ ও রাস্তার বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের মাথায় রাখা দরকার ছিল।
ক্লিনিকে কর্মরত কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) আলমগীর বলেন, ক্লিনিকটিতে শুরু থেকেই বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। হাঁসফাঁস গরমে রোগীদের সেবা দিতে হচ্ছে। এছাড়া বর্ষাকালে ক্লিনিকটি অন্ধকার হয়ে গেলে সেবায় বিঘ্ন ঘটে। রোগীদের আসা-যাওয়া কষ্টকর হয়।
জামবাড়িয়া ইউপির ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মতিউর রহমান বলেন, এই কমিউনিটি ক্লিনিকের সভাপতি বানিয়েছে আমাকে। আমি একাধিক বার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এই ক্লিনিকের সব সংকটের কথা বলেছি। তাও কোনো কাজ হয়নি।
ভোলাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মাহবুব আলম বলেন, এই কমিউনিটি ক্লিনিকটিতে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। এই বিষয়টি স্বাস্থ্য প্রকৌশলসহ স্থানীয় পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। আর রাস্তাটির জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। অর্থ প্রাপ্তি সাপেক্ষে এর সমাধান হবে। আশা করা যাচ্ছে এই সংকটের সমাধান খুব শিগগির হবে।
ভোলাহাট জোনাল পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. রেজাউল করিম বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকে অনেক দিন ধরে বিদ্যুতের সংযোগ নেই। সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য আমাদের জানিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। নিয়ম মেনে সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৫ ঘণ্টা, জুন ২, ২০২৪
এসএম