ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

কেজি দরে মোবাইলের পার্টস বিক্রি

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২১ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০২৪
কেজি দরে মোবাইলের পার্টস বিক্রি

রাজশাহী: মোবাইল ফোনের কোনো অংশই যে ফেলনা হয়, তা প্রমাণ করেছেন রাজশাহীর ছেলে সুজন মণ্ডল। সাধারণত হাতে থাকা ফিচার ফোন বা স্মার্ট ফোনটি ভেঙে গেলে বা নষ্ট হলে অনেকেই তা ময়লা-আবর্জনার মতোই ছুঁড়ে ফেলে দেন।

কেউ কেউ আবার নাম মাত্র দামে বিক্রি করেন। তবে এসব ফোনও যে আবার কাজে লাগতে পারে তা অনেকেরই অজানা।

মোবাইল বা এর সঙ্গে জুড়ে থাকা অংশগুলো নিয়েই কাজ করেন রাজশাহীর এই তরুণ। লোকে তাকে মোবাইলের ‘জহুরী’ বলে ডাকেন। তিনি তার এলাকার আনাচে কানাচে থেকে ভাঙাচোরা ও নষ্ট মোবাইল ফোন সংগ্রহ করে ক্যামেরা, মাদারবোর্ড, ডিসপ্লে, আইসি, চার্জিং পোর্ট ইত্যাদি পার্ট বিভিন্ন ভাগে খুলে কেজি দরে বিক্রি করেন। ফোন সার্ভিসিং স্টোরগুলোও তার কাছ থেকে এসব পার্টস কিনে নেন সাগ্রহে।

রাজশাহী ও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মোবাইল ফোন টেকনিশিয়ানরা আসেন সুজনের কাছে। চাহিদা মতো পুরনো পার্টস কিনে নেন কেজি দরে। ফলে সুজনের এ ব্যবসা দুর্দান্ত এক সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে। ফেলে দেওয়া মোবাইল থেকে পার্টস (যন্ত্রাংশ) খুলে কেনাবেচার ধারণাটি সংশ্লিষ্ট ছাড়া অনেকের কাছেই নতুন ও ব্যতিক্রমী।

এটিও যে লাভজনক ব্যবসা বা পেশা হতে পারে তা অনেকের কাছেই হয়তো অবাক করার মতো। একেবারেই স্বল্প পুঁজির ব্যবসা। যেখানে ক্ষতির আশঙ্কা নেই বললেই চলে। তবে মিলবে আশাব্যঞ্জক মুনাফা। এক কথায় ব্যবসাটি ভাঙারির হলেও একে বলা হচ্ছে ‘মোবাইল রত্ন’। যেমন- গোবরে পদ্মফুল। নিজের ব্যবসা দিয়ে ব্যাপক নাম কামিয়েছেন সুজন। রাজশাহী তো বটেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যারা মোবাইল ফোন ঠিক করার কাজ করেন, তারা বেশ ভালোভাবেই চেনেন সুজনকে। বাটন মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে আইফোনের পার্টসও তার কাছে পাওয়া যায় পানির দামে। যখনই মোবাইলের জটিল কোনো পার্টসের দরকার হয়, সুজনের ডাক পড়ে তখনই।

রাজশাহী মহানগরীর চন্দ্রিমা থানার শিরোইল কলোনি ১ নম্বর গলির মাথায় মোবাইলের জহুরী সুজনের দোকান। কেজি দরে তো বিক্রি করেনই, পিস হিসেবেও বিভিন্ন পার্টস এ দোকান থেকেই বিক্রি করেন তিনি।

সুজন জানান, ১ হাজার পিস মোবাইলের ক্যামেরা তিনি বিক্রি করেন ২ হাজার ৫০০ টাকায়। সাধারণত ১৫ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকার মোবাইল ক্যামেরা বিক্রি করেন তিনি। মোবাইল ফোনের ডিসপ্লে, মাদারবোর্ড, চার্জিং পোর্ট, সিমের স্লট, লাইট, কানেক্টিং, আইসি ও ব্যাটারিসহ সব কিছুই কেজি দরে বিক্রি করেন সুজন।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মী আসাদুল ইসলাম জানান, এলাকার অলিগলি থেকে ভ্যানে আবর্জনা সংগ্রহের সময় ভাঙাচোরা ও নষ্ট মোবাইল পান তিনি। এসব সুজনের দোকানে পিস হিসেবে বিক্রি করেন। সেখান থেকেই পার্টস খুলে বিক্রি করেন সুজন।

মেসার্স আব্দুল্লাহ এন্টারপ্রাইজ নামে নিজের দোকানে সকাল থেকেই নিজের কাজ শুরু করেন সুজন। ভাঙাচোরা মোবাইল থেকে স্ক্রু-ড্রাইভার, স্টার ও শক টেস্টার দিয়ে পরখ করে বের করেন কাঙ্ক্ষিত পার্টস। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তিনি জহুরীর মতো ভাঙারি মোবাইল থেকে বিভিন্ন পার্টস বের করেন। ফেলনা মোবাইল থেকে বিক্রেতার যেমন লাভ থাকে তেমনি থাকে ক্রেতারও। এভাবেই বাজারের চেয়ে কয়েক গুণ সস্তায় মোবাইলের পার্টস বিক্রি করেন সুজন মণ্ডল। তাকে সহযোগিতা করার জন্য দোকানে থাকেন তিন কর্মচারী।

সুজন মণ্ডল জানান, তার দোকানে মোবাইলের অরিজিনাল ক্যামেরা প্রতি কেজি মাত্র ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা। ১০০ গ্রাম ক্যামেরার দাম ২ হাজার ৫০০ টাকা। ১০০ গ্রামে ১ হাজার পিস ক্যামেরা পাওয়া যায়। সেই হিসেবে একটি ক্যামেরার দাম পড়ে মাত্র আড়াই টাকা। তবে বাজারে এই একটা ক্যামেরা কিনতে গেলে দুই থেকে ১৫ হাজার টাকা পড়ে। তার এখানে একবারে সস্তায় ক্যামেরাসহ মোবাইলের সব ধরনের পার্টসই পাওয়া যায়। তবে সব মোবাইল পার্টসই পুরো নো।

খুচরা বিক্রেতা, মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টার, ভাঙারি পট্টি থেকে নষ্ট মোবাইল কিনে এনে দোকানে খুলে আলাদা করে পার্টস বিক্রি করেন তিনি। দেশে তো বটেই, ভারত ও চীনেও পার্টস পাঠান তিনি। সেগুলো নতুন মোবাইলে সংযুক্ত করেন সংশ্লিষ্টরা।

সুজনের দোকানে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ কেজি করে মাদারবোর্ড, ডিসপ্লে ও ব্যাটারি বিক্রি হয়। এসব মালামাল বিক্রি করে কেজি প্রতি ৩০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ থাকে তার। দোকানের কর্মচারী লিটন হোসেন বলেন, বাটন ফোনের ক্যামেরা ক্যামেরার ওজন কম তাই দাম বেশি। আর অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ক্যামেরার ওজন বেশি তাই দাম কিছুটা কম। তাদের এই দোকানে প্রতি কেজি ডিসপ্লে ৩০ থেকে ১০০ টাকা, ব্যাটারি বিক্রি হয় ১২০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি। মাদারবোর্ড বিক্রি হয় প্রতি পিস ১০ থেকে ৫০০ টাকা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০২৪
এসএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।