ঢাকা: প্রস্তাবিত বাজেটের ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হলেও ব্যাংকিং খাতে এর প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন অর্থসচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার। তিনি বলেন, ব্যাংকের তারল্যের সঙ্গেও ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।
শুক্রবার (৭ জুন) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, পরিকল্পনা মন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুস শহীদ, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন, এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।
অর্থসচিব বলেন, আমরা এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াচ্ছি। রাজস্ব বাড়লে ব্যাংক ঋণের ওপরে চাপ পড়বে না। তাছাড়া এলডিসি গ্রাজুয়েশন পরবর্তী বৈদেশিক ঋণের চাপ কমাতে আমরা অভ্যন্তরীণ উৎসের দিকে আছি। আবার সঞ্চয়পত্রে সুদহার বেশি হওয়ায় সেখান থেকেও আমরা কম অর্থ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি।
আসন্ন নতুন বাজেটে ব্যাংক খাতে থেকে সরকার ঋণ নেবে এক লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের চেয়ে ৫ হাজার ১০৫ কোটি টাকা বেশি। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংক খাত থেকে নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল এক লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা।
অর্থনীতির আকার ছোট হয়ে গেছে এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থসচিব বলেন, আমাদের চলতি অর্থবছরের বাজেট ৭ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। এ বছর বাজেট আরও বড় করা যেতো। কিন্তু করতে পারিনি মূল্যস্ফীতির জন্য। মুখে অনেক কিছু বলা যায়, আসলে মূল্যস্ফীতি মেজারমেন্ট করার জন্য কিছু টুলস আছে। তবে আমাদের সাপ্লাই চেইনে একটু সমস্যা রয়েছে। সেগুলো আমরা সমাধানের জন্য চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির জন্য আমাদের যে নিম্নআয়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাদের সহায়তা দেওয়ার জন্য বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে সহায়তা করা হচ্ছে। এর বাইরেও টিসিবির মাধ্যমে ট্রাক সেলে দেওয়া হচ্ছে।
সচিব বলেন, আরেকটি বিষয় এসেছে এক্সচেঞ্জ রেট ডিভ্যালিউশন হয়েছে ৩৭ শতাংশ। আসলে এটা হয়েছে ২৭ শতাংশ। সেটার কারণে মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়েছে। আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে মূলস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণ করা। আমরা আশাবাদী, যেসব উদ্যোগ নিয়েছি তাতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে। বিশেষ করে ইন্টারেস্ট রেট সাড়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে, যা মূল্যস্ফীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য আমরা আশাবাদী, আগামী বছর আমাদের মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রাখতে পারবো।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এবারের বাজেটের প্রতিপাদ্য হলো 'সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। যা জিডিপির ১৪.২ শতাংশ। এটি চলতি বাজেটের তুলনায় ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। টাকার অঙ্কে বাড়ছে ৩৫ হাজার ২১৫ কোটি টাকা। যা চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছরে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা বাজেট ঘোষণা করে সরকার। আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা, যা গত অর্থবছর ছিল দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা।
নতুন বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয় ২ লাখ ৮৩ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধরণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছর ছিল ৫ লাখ কোটি টাকা।
আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। পরে তা কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ করা হয়। মোট জিডিপি ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে আটকে রাখার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বাজেটে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৮ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০২৪
জিসিজি/জেএইচ