পিরোজপুর: পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলায় প্রায় দুই যুগ ধরে কোটি টাকার সরকারি জমি দখল করে রেখেছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র।
উপজেলা শহরের পুরোনো সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ওই সরকারি জমি অবৈধভাবে দখল করে সেখানে অর্ধশতাধিক দোকান তুলে ভাড়া আদায় করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে চক্রটির বিরুদ্ধে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ভান্ডারিয়ার পুরোনো সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের প্রায় ৫৯ শতক জমি প্রায় দুই যুগ আগে অবৈধভাবে দখল করে নেয় স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র। এরপর ওই জমিতে অর্ধশতাধিক দোকান ঘর তুলে সাধারণ ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দিয়ে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা ভাড়া আদায় করে তা ভোগ করছে চক্রটি। প্রায় ৮০ কোটি টাকার ওই জমিতে সম্প্রতি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ জমিটি দখলমুক্ত করতে ভান্ডারিয়া পৌরসভা থেকে একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে নোটিস দিলে সেখানে থাকা ব্যবসায়ীরা (ভাড়াটিয়া) দখল ছেড়ে অন্যত্র যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পৌরসভার কাছে সময় চান। তখন পৌরসভা থেকে তাদের মৌখিকভাবে কিছু দিনের সময় দেওয়া হয়।
এর আগে ওই চক্রটি ওই জমি নিজেদের দখলে রাখতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। এ চক্রের কয়েকজন সদস্য অন্য এলাকার কাগজপত্র দাখিল করে মো. জাহাঙ্গীর মিয়া গং বাদী হয়ে পিরোজপুর ১ম জেলা যুগ্ম জজ আদালতে একটি মামলা করেছিলেন। কিন্তু কোনো বৈধ কাগজ পত্র দেখাতে ব্যর্থ হলে দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত ২০০৭ সালের ০২ এপ্রিল মামলাটি খারিজ করে দেন। পরে ওই চক্রটি উচ্চ আদালতে আবার আপিল করলে অনেক বছর মামলা চলার পর সেটিও খারিজ করে দেন আদালত। বর্তমানে ওই জমিতে আদালতের কোনো মামলা অথবা নিষেধাজ্ঞা নেই বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে প্রশাসন যখনই ওই জমি উদ্ধারের চেষ্টা করে, তখনই ওই চক্রটি জানায়, ওই জমি নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা চলছে। পরে অজ্ঞাত কারণে উদ্ধার কাজ থেমে থাকে।
অভিযোগ রয়েছে, উদ্ধার কাজের সংশ্লিষ্টরা কখনও এর গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করেননি। বর্তমানেও একই প্রক্রিয়ায় মো. জাহাঙ্গীর মিয়ার ওয়ারিশ মো. আল আমিন মিয়া মামলার পুরোনো কাগজপত্র দেখিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। বড় মসজিদ সংলগ্ন একটি দোকানের সামনে মামলা সংক্রান্ত একটি সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গছে, কাগজপত্র এবং রেকর্ড অনুযায়ী ওই জমির প্রকৃত মালিক আইন মন্ত্রণালয়। জমির সিএস, আর এস, এস এ এবং বিএস রেকর্ড আইন মন্ত্রণালয়ের নামেই রয়েছে। কোনোকালেই ওই জমি কোনো ব্যক্তির মালিকানাধীন ছিল না। এ জমিতে কয়েক যুগ ধরে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ছিল। প্রায় দুই যুগ আগে তাদের অফিস অন্যত্র স্থানান্তর করার পরে আইন মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন জেনারেল এ জমিতে স্থানীয় এক ব্যক্তিকে প্রশাসক নিয়োগ দেন। তবে তিনি অবৈধ দখলদারদের সামনে দাঁড়াতে পাড়েননি বলে জানা যায়।
ভান্ডারিয়া দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. কাওসার হোসেন জানান, বর্তমান সাব-রেজিস্ট্রি অফিসটি জরাজীর্ণ। এখানে নতুন সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ভবন হলে অফিস সংশ্লিষ্টরাসহ সাধারণ মানুষের অনেক উপকার হবে।
সাব-রেজিস্ট্রার পার্থ প্রতীম মূখার্জি বলেন, বর্তমান সাব-রেজিস্ট্রি অফিসটি খুবই জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। এ ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী। নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিক বার চিঠি পাঠানো হয়েছে।
ভান্ডারিয়া পৌরসভার মেয়র মো. ফায়জুর রশিদ খসরু জানান, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ওই জমি অবৈধ দখলমুক্ত করতে পৌরসভা থেকে নোটিস দেওয়া হয়েছে। দোকানিরা সময় চাইলে তাদের তিন মাসের সময় দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট তারিখের পরে এসব অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৪ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০২৪
এসআই