ঢাকা, শুক্রবার, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

প্রশ্নফাঁসে নোমানের নাম, বিব্রত পরিবার

মো. নিজাম উদ্দিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০২৪
প্রশ্নফাঁসে নোমানের নাম, বিব্রত পরিবার নোমানের বাবার বাড়ি

লক্ষ্মীপুর: বিপিএসসির প্রশ্নফাঁস চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার ১৭ জনের মধ্যে দ্বিতীয় অভিযুক্ত হিসেবে নাম রয়েছে নোমান সিদ্দিকীর।  

এমন ‘কেলেঙ্কারি’ নিয়ে বিব্রত তার পরিবারের সদস্যরা।

এর আগেও কারাগারে যেতে হয়েছে তাকে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তেমন একটা যোগাযোগ রাখতেন না নোমান।

নোমানের পৈত্রিক বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার রামদয়াল বাজার দক্ষিণে চর আলগী ইউনিয়নের চরআলগী গ্রামের চর গেসাই ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন এলাকায়। বাড়িতে থাকা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সখ্য কম থাকায় খুব কম তিনি বাড়িতে আসতেন। এলাকার লোকজনের সঙ্গেও তেমন একটা মিশতেন না তিনি।

এলাকায় পৈতৃক সম্পত্তি ছাড়া নিজের কোনো সম্পদ গড়ে তোলেননি নোমান। তিন ভাই মিলে যৌথভাবে আধাপাকা একটি বাড়ি করেছেন। ওই বাড়ির একাংশে বসবাস করেন তার বড় ভাই স্থানীয় ফার্মেসি ব্যবসায়ী মো. ফারুক। বাড়িটি মেঘনা নদীর খুব কাছেই, সেটি ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।

তার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।  

পরিবার ও স্থানীয় লোকজন বাংলানিউজকে জানান, প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার  নোমান যত সম্পদ করেছেন, তা রাজধানী কেন্দ্রিক। পরিবার এবং এলাকার লোকজন তাকে বড় গার্মেন্টস ব্যবসায়ী হিসেবেই জানতেন।

নোমানের বাবার নাম আবু তাহের। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট নোমান। মেঝো ভাই সেনাবাহিনীতে চাকরি করেন। নোমান নিজেও সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন। র‍্যাবেও কাজ করেছেন তিনি। তবে স্বেচ্ছায় সেনাবাহিনীর চাকরি ছাড়েন নোমান। এরপর শুরু করেন ব্যবসা। এ ফাঁকে জড়িয়ে পড়েন বিপিএসসির প্রশ্নফাঁসে।

নোমান সিদ্দিকীর বড় ভাই মো. ফারুক বলেন, নোমান ১৯৯৬ সালে স্থানীয় চর মেহের আজিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ১৯৯৮ সালের দিকে তিনি সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগ দেন। ২০১৭ সালের দিকে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেন নোমান। চাকরি করার সময় তিনি লাইবেরিয়াতে জাতিসংঘের মিশনে ছিলেন ১৫ মাস। মিশন এবং চাকরির টাকা দিয়ে ঢাকায় ব্যবসা শুরু করেন।

ফারুক জানান, তার ভাই পাবনার ঈশ্বরদীতে বিয়ে করেছে। তার এক ছেলে, দুই মেয়ে। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ঢাকায়ই বসবাস করেন। স্ত্রীর বাবার বাড়ির লোকেদের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক, গ্রামের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে তার সখ্য কম। বাড়িতে কম আসেন। গেল বছরের অক্টোবর মাসে বাবার মৃত্যু হয়, সর্বশেষ তখন বাড়ি আসেন নোমান৷  

তিনি জানান, নোমান সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়ে ২০১৮ সালের দিকে গার্মেন্টস এক্সেসরিজের ব্যবসা শুরু করেন। ঠিকাদারিও করেছেন বলে শোনা যায়। পরিবার এবং এলাকার লোকজন তাকে গার্মেন্টস ব্যবসায়ী হিসেবে জানে। তার একজন বন্ধুর সঙ্গেও গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে শেয়ার আছে বলে শুনেছেন তিনি৷ 

ফারুক জানান, ২০২২ সালের দিকেও ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে তিন মাসের জন্য তাকে জেল খাটতে হয়েছে। নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং গণমাধ্যম কর্মীরা বাড়িতে নোমানের খোঁজ খবর নিতে আসায় বিব্রত তারা।  

প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগের বিষয়ে নোমানের ভাই ফারুক বলেন, যেখানে দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বিপিএসসির চালক থেকে শুরু করে শীর্ষ কর্তারা জড়িত থাকতে পারেন, সেখানে আমার ভাই জড়িত থাকার বিষয়টা অমূলক নয়। তদন্তে যদি প্রমাণ হয়, তাহলে আইন তাকে শাস্তি দেবে।

স্থানীয় একটি সূত্র বলছে, নোমানের স্ত্রী সাফিয়া সুলতানা স্বর্ণা শিক্ষা অধিদপ্তরে চাকরি করতেন। তখন সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে স্ত্রীর যোগসাজশে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন নোমান।  

শাহে আলম (৮৭) নামে গ্রামের এক বৃদ্ধ জানান, বাড়িতে এলে নোমান গ্রামের কারো সঙ্গে তেমন কথা বলতেন না। ১০টা কথা জিজ্ঞেস করলে একটার উত্তর দিতেন।  

তিনি বলেন, শুনেছি, অবসরে গিয়ে অপকর্মে জড়িয়েছিল নোমান। এজন্য গত ২০২২ সালে তিন মাস জেল খেটেছিল। জেল থেকে বের হয়ে হয়তো আবার শুরু করেছিল।  

শামছুল হক (৭০) নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, নোমান এলাকায় কোনো ধরনের অর্থ সম্পদ গড়ে তোলেনি। বাবার এক একর জমি ছাড়া আর কিছু নেই এলাকায়। তবে টেলিভিশনে দেখেছি, নোমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সে নাকি প্রশ্নফাঁস করে বিক্রি করত।  

শাহাজাহান নামের নোমানের এক স্বজন বলেন, আমরা শুনেছি, নোমানের ঢাকায় চারটি বাড়ি রয়েছে। বহু টাকা পয়সার মালিক। তবে এলাকায় তার কিছুই নেই। কোনো আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে সম্পর্ক নেই।  

চর আলগী ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আল আমিন বলেন, এলাকায় নোমান কারো সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে চলতো না। নিজের মতো করে আসত, আবার চলে যেত। এখন তো শুনি সে প্রশ্নফাঁসের মতো গুরুতর একটি অভিযোগে অভিযুক্ত।  

বিপিএসসি প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে সারাদেশে পুলিশের অভিযানে ১৭ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের একজন নোমান সিদ্দিকী। নোমানের নামে অভিযোগ, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সাবেক চেয়ারম্যানের গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীর কাছ থেকে প্রশ্নপত্র নিয়ে মোটা অংকের টাকায় বিক্রি করতেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৪ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০২৪
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।