ঢাকা: জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের বাংলাদেশ ডাক বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক শুধাংশু শেখর ভদ্রসহ ২ জনের নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) দুদকের সহকারী পরিচালক সাইদুল রহমান বাদী দুর্নীতি দমন কমিশন ঢাকা ১ এ মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার অপর আসামি হলেন- বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল মোস্তাক আহমেদ।
জানা গেছে, আসামিদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে ‘পোস্ট ই-সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি’ শীর্ষক প্রকল্পের বরাদ্দকৃত ১৫ কোটি ১১ লাখ ৪২ হাজার টাকার ৫০০টি ‘এইচপিই সার্ভার অ্যান্ড ইউপিএস’ ক্রয় ও ব্যবহারে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ: অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র, মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন এবং সাক্ষীদের বক্তব্য পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, ডাক অধিদপ্তরের আওতায় ‘পোস্ট ই-সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীন ৫০০টি ‘এইচপিই সার্ভার এমএল৩০’ এবং ‘উইনার ব্র্যান্ড ইউপিএস’ সহ অন্যান্য ইলেট্রেনিক সামগ্রী ক্রয়ের জন্যে সরকারি মালিকানাধীন টেলিফোন শিল্প সংস্থা (টেশিস) এর সাথে চুক্তির মাধ্যমে ক্রয় করা হয় এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ডাকঘরগুলিতে বিতরণ করা হয়।
পরবর্তীতে উক্ত প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা অপচয় এবং আত্মসাতের অভিযোগ উত্থাপন হয়। যা তদন্তের জন্য টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ হতে অতিরিক্ত সচিব মো. মুহিবুর রহমানকে আহবায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়। উক্ত তদন্ত টিম ডাক বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন ডাকঘরের মধ্য থেকে দৈবচয়নের ভিত্তিতে কিছু কিছু ডাকঘর সরেজমিন পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকৃত সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোর স্টক রেজিস্টার পরীক্ষা করে দেখেন, প্রকল্পটি জুন, ২০১৭ তে সমাপ্ত হয়েছে। কিন্তু সরবরাহ চালানে কোনো কোনো মালামাল প্রকল্প সমাপ্তির প্রায় দুই বছর পর সরবরাহ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করেন যে, টেশিস, টঙ্গী, গাজীপুর কর্তৃক সরবরাহকৃত এইচপিই সার্ভার এমএল অ্যান্ড ইউপিএস সহ অন্যান্য সরবরাহকৃত যন্ত্রপাতি অফিসে অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে। সংশ্লিষ্ট পোস্টমাস্টারসহ উপস্থিত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীগণ জানান যে, ব্যবহার না জানার কারণে এবং উক্ত যন্ত্রপাতি কিভাবে চালাতে হয় তার কোনো প্রশিক্ষণ না পাওয়ায় সরবরাহকৃত যন্ত্রপাতি তারা ব্যবহার করেন না এবং তা সম্পূর্ণ অব্যবহৃত অবস্থায় দীর্ঘদিন পড়ে আছে।
প্রকল্পের আওতায় সংগৃহীত এসকল যন্ত্র কোনটিই ব্যবহারের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মেশিন ও যন্ত্রাংশ প্যাকেট জাত অবস্থায় রয়েছে। তারা তদন্তকালে আরো দেখেন, প্রকল্প কর্তৃপক্ষ থেকে এসকল মেশিন কি কাজে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নির্দেশনা ডাক অধিদপ্তর/ প্রকল্প কর্তৃপক্ষ হতে আঞ্চলিক অফিসকে প্রদান না করায় এ সকল যন্ত্রাদি কোন কাজে আসেনি।
প্রকল্পের প্রশিক্ষণ খাতে ৬ কোটি ৯৯ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও এসকল যন্ত্র ব্যবহারের জন্য কোনো প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে এরূপ কোনো তথ্য সরেজমিন পরিদর্শনকালে পাওয়া যায়নি। ‘পোস্ট ই-সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ক্রয় পরিকল্পনা অনুসারে ক্রয় সম্পাদনের দালিলিক ও বাস্তব প্রমাণ পাওয়া গেলেও ক্রয়কৃত সামগ্রী কার্যক্ষম করার লক্ষে কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়নি।
এতে ‘পোস্ট ই-সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ বরাদ্দের সঠিক ব্যবহার না করে এবং সংশ্লিষ্ট মেশিন ক্রয় করে সরকারে অর্থের অপব্যবহার করে প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা টেশিসের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে সার্ভারের ব্যবহার উপযোগী দক্ষ জনবল তৈরি না করে সার্ভার ক্রয় করে একদিকে সরকারি অর্থের অপচয় ও সরকারি অর্থ ও বাজেট ব্যবস্থাপনা আইন, ২০০৯ এর ২৩ ধারা লঙ্ঘন এবং টেসিশের মাধ্যমে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে লাভবান করে সরকারের ক্ষতিসাধন করে দন্ডবিধির ৪০৯/১০৯ এবং ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ২০,২০২৪
এসএমএকে/এমএম