লক্ষ্মীপুর: প্রায় দেড় মাস ধরে পানিবন্দি লক্ষ্মীপুরের ভুলুয়া নদীর দুই পাড়ের লাখ লাখ বাসিন্দা। ভুলুয়ার তলদেশে ডুবন্ত বাঁধ আর মাছ শিকারের জাল বসানোর কারণে পানি প্রবাহে বাঁধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।
ভুলুয়ার দুই তীরের জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে নিজস্ব কর্মী বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে মাঠে নেমেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুস সাত্তার পলোয়ান। গত কয়েকদিন ধরে ভুলুয়াতে থাকা অবৈধ বাঁধ, মাছ শিকারের বেল জালসহ নানা প্রতিবন্ধকতা অপসারণে মাঠে নামে স্বেচ্ছাসেবক দলটি।
এসময় ভুলুয়ার পদে পদে কৃত্রিম বাঁধ দেখতে পান তারা। স্থানীয় গুটি কয়েক লোভী বাসিন্দারা ভুলুয়ার অস্তিত্ব বিলীন করে দিয়েছে। কেউ ভুলুয়ার পাড় দখল করে বসতি করেছেন। কেউ বাঁধ দিয়ে জাল বসিয়ে মাছ শিকার করছেন। এসব প্রতিবন্ধকতা কারণে ভুলুয়ার পানি প্রবাহের গতি নেই বললে চলে।
জানা যায়, নোয়াখালী অঞ্চল থেকে আসা পানি ভুলুয়া নদী হয়ে কমলনগর ও রামগতি হয়ে এ দুই উপজেলার পূর্বাঞ্চলের পানি মেঘনা নদীতে প্রবাহিত হয়। সেই পানি গিয়ে পড়ে বঙ্গোপসাগরে।
বন্যা কবলিত বাসিন্দাদের জলাবদ্ধতার কবল থেকে রক্ষায় ভুলুয়া নদীসহ জেলার নদী-খালের অবৈধ দখল ও প্রতিবন্ধকতা দূর করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুস সাত্তার পলোয়ান।
আদালত নদী-খালের প্রতিবন্ধকতা অপসারণে স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন। এরপর স্থানীয় প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং আদালতে রিটকারী আইনজীবী আবদুস সাত্তার পলোয়ান বাঁধ অপসারণে কাজ শুরু করেন।
আবদুস সাত্তার পলোয়ান বলেন, ভুলুয়া নদীতে পানির নিচে প্লাস্টিক নির্মিত গোপন বাঁধের সন্ধান পাওয়া গেছে। মাত্র পাঁচ কিলোমিটার অংশে ২০টির বেশি মনুষ্য তৈরি কৃত্রিম বাঁধ আবিষ্কার করেছি আমরা। ভুলুয়া তীরের মানুষদের ৫০ দিনের বন্যার অন্যতম কারণ এই প্লাস্টিক বাঁধ। ১০ ফুট নেট জালে পুরো নদীর মাছ যাতে ঢুকতে বাধ্য হয় সেজন্য এপাশ থেকে ওপাশে ২০০ ফুট প্লাস্টিক বাঁধ দিয়ে রেখেছে। যা দিয়ে ১ ফোঁটা পানিও প্রবাহ হতে পারে না। ইট, পাথর, রড, সিমেন্ট দিয়ে বানানো বাঁধ যেমনি পানি আটকে রাখতে পারে, এটাও তার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। ৫০ ফুট অন্তর অন্তর এরকম বাঁধ।
এ আইনজীবী বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালীর বন্যা সত্যি মনুষ্য সৃষ্ট বন্যা। এসব প্রতিবন্ধকতা অপসারণে সবাইকে সহযোগিতা এবং সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান করেন তিনি।
তিনি বলেন, নদী-খালের প্রতিবন্ধকতার জন্য অনেকাংশেদায়ী এলাকার কিছু জনগণ। আমাদের এবারের বন্যা ভবিষ্যতের জন্য অশনির সংকেত। খাল ও নদীগুলো পুনরুদ্ধার করতেই হবে। খাল এবং ভুলুয়া নদীর পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে না পারলে দুর্ভিক্ষ ও মহামারি রোগ দেখা দেবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪
এসএম