ঢাকা, শনিবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

লালমনিরহাটে এক উঠানেই মসজিদ-মন্দির, সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২৪
লালমনিরহাটে এক উঠানেই মসজিদ-মন্দির, সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত

লালমনিরহাট: একই উঠানে মসজিদ-মন্দির ধর্মীয় সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটের কালীবাড়িতে। উঠানের এক পাশে ধূপকাঠি, অন্য পাশে আতরের সুঘ্রাণ।

এক পাশে উলুধ্বনি, অন্য পাশে চলছে আযান ও জিকির।  

এভাবে ধর্মীয় সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যুগ যুগ ধরে চলছে পৃথক দুইটি ধর্মীয় উপাসনালয়। ধর্মীয় সম্প্রীতির এমন উজ্জ্বল নিদর্শনের দেখ মেলে লালমনিরহাট শহরে। শহরের বাণিজ্য কেন্দ্র কালীবাড়ী এলাকার পুরান বাজার জামে মসজিদ ও কালীবাড়ী কেন্দ্রীয় মন্দিরটি একই উঠানে অবস্থিত। যে যার মতো ধর্ম পালন করে চলেছে। এখন চলছে শারদীয় দুর্গোৎসব।

স্থানীয়রা জানায়, ১৮৩৬ সালে কালি মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই সময় লালমনিরহাট শহরে কালীবাড়ী এলাকার পুরান বাজারে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ধর্মপ্রাণ মুসলমান ব্যবসায়ীরা নামাজ আদায় করার জন্য মন্দিরের পাশেই একটি ছোট ঘর তৈরি করেন। আর সেটির নামকরণও করা হয় পুরান বাজার জামে মসজিদ হিসেবে। ওই সময় থেকে এক উঠানে চলছে দুই ধর্মের দুই উপাসনালয়ের কাজ। পূজা শুরুর আগে মসজিদ ও মন্দির কমিটি বসে সিদ্ধান্ত নেন। এ পর্যন্ত সেখানে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। মন্দির ও মসজিদ দেখতে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসে কয়েক হাজার মানুষ। বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতও এ বিরল দৃষ্টান্ত দেখতে পরিদর্শন করেন একই উঠানের মন্দির ও মসজিদ। সৌন্দর্য ফুটে উঠে শারদীয় দুর্গোৎসবে।  

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, আজানের সময় থেকে নামাজের জামাত শেষ না হওয়া পর্যন্ত মন্দিরের ঢাকঢোলসহ যাবতীয় শব্দ যন্ত্র বন্ধ থাকে। নামাজ শেষ হলে মন্দিরের কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়। এখানে কোনো বিশৃঙ্খলাও হয় না। শালীনতা বজায় রেখে একই উঠানে দীর্ঘদিন ধরে ধর্মীয় উৎসব পালন করে আসছেন উভয় ধর্মের মানুষ। নামাজ শেষ করে উঠানে পা রাখতেই চোখে পড়বে মন্দিরের দেবী দুর্গার প্রতিমা। একইভাবে পূজারীরাও পূজা করতে এসে মুসলমানদের নামাজের দৃশ্য অবলোকন করতে পারছেন।  

পূজারি এস দিলীপ রায় বলেন, লালমনিরহাটে ধর্মীয় সম্প্রীতির এটি একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। কোনো বিশৃঙ্খলা ছাড়াই যুগ যুগ ধরে এ সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ধর্মীয় উৎসব পালন করছেন তারা। সত্যি এটি আমাদের জন্য অনেক বড় গর্বের বিষয়।

এদিকে সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এ পূজায় সাজ সাজ রবে সাজানো হয়েছে মন্দির এলাকা। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা উৎসবের সঙ্গে পূজা করছেন। নামাজের সময়েও নামাজ চলছে। ধর্মীয় সম্প্রীতির এমন উদাহরণ দেখতে অনেকেই ছুটে আসছেন এখানে।

পুরান বাজার জামে মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, ঐতিহ্যবাহী পুরান বাজার একসঙ্গে দুটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। মসজিদের আগে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবুও এখানে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবশ্রেণির মানুষ স্বাধীনভাবে ঘুরতে আসে। আমরা তাদের সব কাজে সহযোগিতা করি। তারাও আমাদের সহযোগিতা করেন। নামাজের সময় মন্দিরের ঢাক-ঢোল বন্ধ রাখা হয়। কোনো বিশৃঙ্খলা ছাড়াই যুগ যুগ ধরে চলছে এ সম্প্রীতির বন্ধন।

কেন্দ্রীয় কালীবাড়ী মন্দিরের সভাপতি ও প্রধান পুরোহিত শংকর চক্রবর্তী জানান, ১৮৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এলাকার নামকরণও করা হয় কালীবাড়ী। পরে এখানে বাজার গড়ে উঠলে বাজারের ব্যবসায়ী ও শহরের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মন্দিরের পাশেই প্রতিষ্ঠা করেন পুরান বাজার জামে মসজিদ। সেই থেকে এক উঠানে চলছে দুই ধর্মের দুই উপাসনালয়ের কার্যক্রম। সামান্য বিশৃঙ্খলাও হয় না এখানে। জন্মের পর থেকে এভাবে চলতে দেখছেন তিনি।

লালমনিরহাট অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আতিকুল ইসলাম বলেন, এখানে মসজিদ-মন্দির পাশাপাশি রয়েছে। এটি প্রায় ২০০ বছর ধরে চলে আসছে। মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পাশাপাশি তাদের ধর্ম পালন করছে। কখনও কোনো সমস্যা হয়নি। আমি মনে করি, এটা সারা বাংলাদেশেই অনুপ্রাণিত হওয়ার মত বিষয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।