ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বগুড়ায় লেবুর পিনিকের পর কলার ‘কাগনা’ মাখা ভাইরাল

কাওছার উল্লাহ আরিফ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০২৪
বগুড়ায় লেবুর পিনিকের পর কলার ‘কাগনা’ মাখা ভাইরাল

বগুড়া: বগুড়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি করে ‘লেবুর পিনিক’ নামে মাখার পর এবার ‘কাগনা’ (কলা পাতার মাঝ খানের ডাটা) মাখা খাইয়ে বেশ প্রশংসায় ভাসছেন সেই ভাইরাল মাখাওয়ালা প্রদীপ কুমার।

ইতোমধ্যেই ভিন্ন ধরনের এই খাবারের স্বাদ নিতে শহর ও গ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে দোকানটিতে ছুটে আসছেন মাখাপ্রেমী মানুষ।

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে বগুড়া শহরের বিসিক শিল্প এলাকায় প্রধান সড়কের ধারেই প্রদীপ কুমারের ছোট্র দোকানটিতে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।

সরেজমিনে দেখা যায়, কলাপাতার ঠিক মাঝ বরাবর শিড় দাঁড়ার মতো লম্বা অংশটিকে স্থানীয় ভাষায় ‘কাগনা’ বলে। এর ওপরের শক্ত আবরণটি তুলে ফেলে দিয়ে ভেতরের নরম অংশটি ছোট ছোট করে কেটে তাতে নানা পদের মশলা-মরিচ, তেঁতুল, তেল ভালো মতো মাখিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ‘কাগনা মাখা’। মাখানো সেই কাগনা দশ টাকা থেকে শুরু করে যে যেমন চান তেমন পরিমাণে পরিবেশন করেন ভাইরাল মাখাওয়ালা প্রদীপ কুমার।

‘লেবুর পিনিক’ ও ‘কাগনা’ মাখাওয়ালা প্রদীপ কুমার। তিনি বগুড়া সদর উপজেলার মংলিশপুর এলাকার বাসিন্দা। অনেকদিন ধরেই বগুড়া শহরের বিসিক শিল্প এলাকায় প্রধান সড়কের পাশেই ছোট এই দোকানটি পরিচালনা করে আসছে প্রদীপ। কাঁচামালের (সবজি) ব্যবসা ছেড়ে প্রায় এক যুগ আগে বাড়ির কাছেই এই মাখার দোকান শুরু করেন তিনি। শুরুতে জলপাই, পেয়ারা, আমড়া মাখা বিক্রি করলেও ধীরে ধীরে মাখার তালিকায় যুক্ত হয় একের পর এক ফলের নাম। আম, জাম, তরমুজ, আনারস থেকে আস্তে আস্তে মৌসুমি এমন কোনো ফল নেই যার মাখা হয় না তার দোকানে।

জানা গেছে, প্রদীপ কুমার পুরোনো দিনে মানুষের চাহিদা আর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত ফল মাখার অনুসন্ধান শুরু করেন। রাজশাহী থেকে পেয়ে যান লেবু মাখার রেসিপি। তার হাতের সেই মাখা রীতিমতো ‘লেবুর পিনিক’ নামে ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। লেবুর পিনিকের ক্রেতা বগুড়া শহর ছাপিয়ে জেলার অন্যান্য উপজেলা ও আশপাশের জেলাগুলো থেকেও ছুটে আসেন। সম্প্রতি প্রদীপ তার তালিকায় যুক্ত করেছেন নতুন মাখার নাম। যা কিনা বগুড়ার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বহু আগে কিশোর-কিশোরীদের কাছে ছিল ভীষণ প্রিয়। প্রায় হারিয়ে বা ভুলে যাওয়া সেই খাবারটি নতুন করে ফিরিয়ে এনেছেন তিনি।

কাগনা মাখা খেতে আসা আবু সুফিয়ান, হিমেল, মিলি আক্তার, সোমা নামে একাধিক ক্রেতা বাংলানিউজকে জানান, ‘কাগনা’ মাখার আগে প্রদীপ কুমারের মাখানো লেবু ‘লেবুর পিনিক’ নামে তরুণ প্রজন্মের কাছে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর ভিডিও দেখে বগুড়া ছাড়াও গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, জয়পুরহাটসহ বিভিন্ন জেলা থেকে অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন লেবুর পিনিকের স্বাদ নিতে তার দোকানে ছুটে আসেন। কেউ আবার বাড়ি ফেরার পথে সঙ্গে করে নিয়েও যাচ্ছেন।

মাখাওয়ালা প্রদীপ কুমার বাংলানিউজকে বলেন, দুই ছেলে ও এক মেয়ের ছোট পরিবার আমার। আগে সবজির ব্যবসা করতাম। প্রায় ১২ বছর আগে সবজি দোকান গুটিয়ে বাড়ির পাশেই মাখার দোকান শুরু করি। তখন থেকে এখন পর্যন্ত মাখার দোকান থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেশ সচ্ছল জীবনযাপন করছি।  

তিনি আরও বলেন, আমার সব থেকে বেশি ভালো লাগে নতুন নতুন মাখার স্বাদ নিতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসা মানুষদের জন্য। তারা আমাকে ভালোবেসে, আমার তৈরি বিভিন্ন মাখা টেস্ট করতে অনেক পয়সা খরচ করে এখানে আসেন। এতে আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আর তাই প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রকার মৌসুমি ফলের পাশাপাশি ভিন্নধর্মী মাখার সন্ধান করি। মানুষকে এমন ভিন্ন রকম মজাদার খাবার খাইয়ে বেশ তৃপ্তি পাই।

অঞ্চল ভিত্তিক বিলুপ্ত কিছু খাবারের মধ্যে কলার ‘কাগনা মাখা’ একটি অন্যতম খাবার। অনেক আগে থেকেই গ্রামে এই খাবারের প্রচলন রয়েছে। গ্রামে এই খাবারটির প্রচলন থাকলেও শহরে তেমন নেই বললেই চলে। আর ভিন্ন রকম সেই খাবার বিক্রিও যেন অকল্পনীয়। মাখা প্রেমীদের কাছে এখন প্রিয় নাম মাখাওয়ালা প্রদীপ কুমার।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০২৪
কেইউএ/এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।