ঢাকা: খামারিদের কাছ থেকে সরাসরি বাজারে ডিম আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ১০০ দিনের কাজের অগ্রগতি উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে বন্যার প্রভাবে ডিমের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। একই সঙ্গে কৃষি ফসল নষ্ট হওয়ার কারণে বাজারে সবজির সরবরাহ কম ছিল। ফলে ডিমের চাহিদাও স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ছিল। তাই ডিমের দাম নিয়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা এ সুযোগে মুনাফা লাভের জন্য ডিমের সরবরাহে হস্তক্ষেপ করে। এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার যথেষ্ট অভিযান চালিয়েছে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছে। অন্যদিকে টিসিবি এবং ট্রাকে করে ন্যায্য মূল্যে ডিম বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে খামারি পর্যায় থেকে সরাসরি বাজারে ডিম আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বর্তমানে খামারি পর্যায়ে ১৩৩-১৩৪ টাকা, কর্পোরেট পর্যায়ে ১২৭ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে ১৩২ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ডিমের মূল্য ১৪০-১৪২ টাকা ডজন। এ দাম আরও কমতে পারে যদি উৎপাদন খরচ বিশেষ করে ফিড, একদিনের বাচ্চা এবং বিদ্যুতের দাম কমানো যায়। কৃষি বিপণনের মাধ্যমে ভর্তুকির মাধ্যমে সীমিতভাবে ঢাকা শহরে ১১০ টাকা ডজন হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে।
উপদেষ্টা ফরিদা বলেন, ডিম আমদানির যে ঘোষণা এসেছে তা নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে কিছু উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। কারণ এতে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং বিশ্ব প্রাণিস্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন অনুযায়ী বার্ড-ফ্লু মুক্ত জোনিং সাপেক্ষে রপ্তানিকারক দেশের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সার্টিফিকেট নিতে হবে, এটা ঠিক মতো করা না হলে আমাদের পোল্ট্রি শিল্প ঝুঁকিতে পড়তে পারে। আমদানিকৃত ডিমের সঙ্গে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে এবং পোল্ট্রি শিল্প বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে।
তিনি বলেন, দেশের প্রাণিজ প্রোটিনের প্রাপ্যতা বাড়ানো, গ্রামীণ অর্থনীতি সচল রাখা এবং প্রান্তিক খামারিদের টিকিয়ে রাখা, দেশে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জাসহ ভিরুলেন্ট নিউক্যাসেল ডিজিজ, ইনফেকশাস ব্রঙ্কাইটিস অথবা নতুন কোনো রোগের প্রাদুর্ভাবরোধ কল্পে ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত বাতিলকরণের লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে। সারা বছরব্যাপী সুলভ মূল্যে নিরাপদ ডিম সরবরাহের জন্য সরকারি/বেসরকারি উদ্যোগে সংরক্ষণাগার স্থাপনের জন্য একটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ডিমের ত্রুটিপূর্ণ ও এসএমএসভিত্তিক বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে উল্লেখ উপদেষ্টা ফরিদা বলেন, ফিড ও বাচ্চার ডিলারদের কমিশন ও সুবিধাদি যৌক্তিকভাবে কমিয়ে আনতে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পোল্ট্রি সেক্টর সংশ্লিষ্ট নয় এরকম ভূঁইফোঁড় সংগঠন ও ব্যক্তি কর্তৃক প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও প্রাণিসম্পদ খাতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার রোধে মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পোল্ট্রিতে কৃষির হারে বিদ্যুৎ বিল ও ব্যাংকের সুদের হার নির্ধারণের জন্য প্রচেষ্টা জোরদার করা হয়েছে। দুধ ও মাংস উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রুভেন বুল তৈরি প্রকল্প গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ টি এম মোস্তফা কামাল, অতিরিক্ত সচিব সৈয়দা নওয়ারা জাহান, বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান সুরাইয়া আখতার জাহান, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক, মৎস্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২৪
জিসিজি/আরআইএস