ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

এক প্রস্তাবে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের দাবি বেড়ে ১৫ দফা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪
এক প্রস্তাবে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের দাবি বেড়ে ১৫ দফা

ঢাকা: বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারকে ক্যাডার-বহির্ভূতকরণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের কারণে অসন্তোষ তীব্র হচ্ছে। ওই প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে শিক্ষা ক্যাডারের পক্ষ থেকে ১৫ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শিক্ষা ক্যাডারকে ক্যাডার বহির্ভূতকরণ ও শিক্ষা কমিশনের আওতায় নেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারকে ক্যাডার-বহির্ভূতকরণের অশুভ প্রচেষ্টা প্রতিরোধকল্পে এবং শিক্ষা ক্যাডারের ১৫ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে প্রয়োজনে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

সম্প্রতি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারের বিলুপ্তি বিষয়ে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করার জন্য এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ তাজিব উদ্দিন। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রফেসর মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, প্রফেসর ড. রুহুল কাদির, প্রফেসর ড. খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল প্রফেসর সৈয়দ মইনুল হাসান, প্রফেসর মুহাম্মদ ফাতিহুল কাদির প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে ২৫টি ক্যাডারের সংগ্নঠন আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের নেতৃবৃন্দ শিক্ষা ক্যাডারের দাবি ও আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন।

ক্যাডার বহির্ভূতকরণের উদ্যোগ প্রতিহত করতে শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যগণ যেকোনো ত্যাগ স্বীকারের প্রস্তুত বলে জানানো হয়। সংস্কার কমিশন শিক্ষা ক্যাডার বিলুপ্তির কথা প্রচার করে ক্যাডার সদস্যদের সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে বলেও নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন। তারা কমিশনকে ক্যাডার বহির্ভূতকরণের উদ্যোগ থেকে সরে আসার বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য আশা করেন।

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে বিদ্যমান বৈষম্যসমূহ এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ দফা দাবি-

দাবি ১: বিসিএস সাধারণ শিক্ষাকে ক্যাডার বহির্ভূত করার পরিকল্পনা ও উদ্যোগ থেকে সরে আসার সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আমাদের সবার জানা উচিত, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার হঠাৎ করে জন্ম নেয়নি। ব্রিটিশ ভারতে ১৮৬১ সালে বেসামরিক জনগণ বা সিভিল-নাগরিকদের প্রাপ্য সেবা সঠিকভাবে পৌঁছে দিতে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস (আইসিএস) গঠিত হয় এবং এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান (সিপিএস) গঠিত হয়। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে প্রশাসন, কৃষি, স্বাস্থ্য, পুলিশসহ বিভিন্ন সার্ভিস সেক্টরের মতো এডুকেশন সার্ভিসও বরাবর সিভিল সার্ভিসের অংশ ছিল। স্বাধীনতা পূর্বকালের সিভিল সার্ভিস অফ পাকিস্তানের অন্তর্গত ইস্ট পাকিস্তান সিনিয়র এডুকেশন সার্ভিস ও ইস্ট পাকিস্তান জুনিয়র এডুকেশন সার্ভিস স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস এর অনিবার্য অংশ হিসাবে জেনারেল এডুকেশন ও টেকনিক্যাল এডুকেশন ক্যাডার নামে দুটি শাখায় আত্মপ্রকাশ করে। বিসিএস কম্পোজিশন অ্যান্ড ক্যাডার রুলস ১৯৮০-তে বিষয়টি স্পষ্ট করা আছে।

কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে এই যে, শত বছরের ঐতিহ্যকে অগ্রাহ্য করে একটি বিশেষ মহলের চক্রান্তে গত ৪ দশক ধরে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সকল সম্ভাবনা ও বিকাশের পথ রুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় কফিনের শেষ পেরেক হিসেবে শিক্ষা সেক্টরকে ক্যাডার বহির্ভূত করার অনেক পুরানো ও গোপন নীল নকশা আজ উন্মোচিত হয়েছে। সরকারি চাকরিতে বৈষম্যের বিরোধিতা করে আমাদেরই শিক্ষার্থীরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে যে পরিবর্তনের সূচনা করে, তার ধারাবাহিকতায় বৈষম্য কমানোর লক্ষ্যে গঠিত একটি সংস্কার কমিশন কী কারণে কাদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য শিক্ষা সেক্টরে কর্মরত ক্যাডার কর্মকর্তাদের বৈষম্য বাড়ানোর কাজে লিপ্ত হলেন, তা আমাদের বোধগম্য নয়। সুতরাং নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নির্মাণের স্বার্থে, মহান শিক্ষকতার পেশায় মেধাবীদের আকর্ষণ করার জন্য, বিসিএস সাধারণ শিক্ষাকে ক্যাডার বহির্ভূত করার নীল নকশা থেকে সরে আসতে হবে।

আমরা মনে করি, অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে প্রেসমিটের মাধ্যমে বিষয়টি জনসমক্ষে নিয়ে এসে শিক্ষা ক্যাডারকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে যা কোনোভাবেই উচিত হয়নি।

দাবি ২: সকল প্রকার কোটা-বৈষম্য তুলে দিয়ে মেধার ভিত্তিতে সরকারের উপসচিব পদে যোগদান নিশ্চিত করার জন্য তা শতভাগ উন্মুক্ত করে দিতে হবে এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সকল ক্যাডারের কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে সমান সুযোগ দিতে হবে।

দাবি ৩: মন্ত্রণালয়সহ ক্যাডার সংশ্লিষ্ট সকল পদে স্ব স্ব ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়ন করতে হবে, অর্থাৎ কৃত্য পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

দাবি ৪: শিক্ষা ক্যাডারসহ সকল ক্যাডারের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।

দাবি ৫: বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার একটি পেশা-বিশেষায়িত ক্যাডার। তাই সাধারণ শিক্ষার অন্তর্গত সাধারণ ও মাদরাসা শিক্ষা ধারার সকল শিক্ষা স্তর যেমন প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ শিক্ষা কিংবা মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের সকল পদ হতে প্রশাসন ক্যাডারের অপেশাদার ও অশিক্ষক কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করতে হবে। সাধারণ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট যে সব দপ্তরের নিয়োগ বিধিমালায় অন্যায্যভাবে প্রশাসন ক্যাডারের পদস্তর উল্লেখ করে একতরফা গেজেট করা হয়েছে, তা সংশোধন করে তাতে শিক্ষা ক্যাডারের পদস্তর সংযোজন করতে হবে।

দাবি ৬: বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে ৬ স্তরের পদসোপান প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

দাবি ৭: বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের অধ্যাপক পদকে ৩য় গ্রেডে উন্নীত করতে হবে এবং আনুপাতিক হারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ১ম, ২য় ও ৩য় গ্রেডের পদ সৃষ্টি করতে হবে।

দাবি ৮: প্রতিটি শিক্ষান্তরের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম তদারকির জন্য অঞ্চল, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদ সৃষ্টি ও দপ্তর স্থাপন করতে হবে। এছাড়া ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রশিক্ষণ একাডেমি ও গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

দাবি ৯: কলেজ ও দপ্তর-অধিদপ্তরসমূহে বিদ্যমান প্যাটার্ন অনুযায়ী শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রাপ্য পদ সৃজন করতে হবে।

দাবি ১০: নিয়মিত রুটিনে বছরে দুইবার সকল টায়ারে একই সাথে পদোন্নতি দিতে হবে। প্রভাষকদের পদোন্নতির শর্তপূরণ হলে যথাদ্রুত ৬ষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি দিতে হবে।

দাবি ১১: শিক্ষাকে নন-ভেকেশন ডিপার্টমেন্ট ঘোষণা করতে হবে এবং অর্জিত ছুটি নিশ্চিত করতে হবে।

দাবি ১২: অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষদের প্রাধিকারের ভিত্তিতে গাড়ি প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।

দাবি ১৩: বদলি নীতিমালা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

দাবি ১৪: ক্যাডারে পার্শ্ব প্রবেশ বন্ধ করতে হবে।

দাবি ১৫: ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে শিক্ষা ক্যাডারের মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, যেহেতু আমাদের এই দাবিগুলোয় শিক্ষা ক্যাডারের অস্তিত্ব জড়িয়ে আছে, বাংলাদেশের সকল জাতি-উপজাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের নবীন শিক্ষার্থীদের আশা-আকাঙ্ক্ষা জড়িয়ে আছে এবং জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে জাতিকে পথ দেখানো চাকরি প্রত্যাশী একদল মেধাবি প্রজন্মের ভবিষ্যৎ জড়িয়ে আছে তাই আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে আশা করছি, আমাদের সকল দাবি ২৯ তারিখের মধ্যে মেনে নেওয়ার জন্য। এর কোনো ব্যত্যয় হলে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ১৬ হাজার কর্মকর্তাকে পেশাগত বৈষম্য হতে রক্ষার জন্য আমরা আগামী ৩১ ডিসেম্বর তারিখে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪
এমআইএইচ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।