ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ মাঘ ১৪৩১, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

আইনের খসড়া অনুমোদন

দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণের সুযোগ বাড়লো

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৬
দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণের সুযোগ বাড়লো ছবি: ফাইল ফটো

ঢাকা: সার্কভুক্ত আটটি দেশ, মায়ানমার ও সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত দেশ ছাড়া যেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সর্ম্পক আছে-সেসব দেশের দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণের সুবিধা রেখে ‘বাংলাদেশ নাগরিকত্ব আইন, ২০১৬’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

সোমবার (০১ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

তিনি জানান, বাংলাদেশে নাগরিকত্ব প্রদান, নাগরিকত্ব বাতিলসহ প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ন্ত্রণে 'দ্য বাংলাদেশ সিটিজেনশিপ (টেম্পোরারি প্রভিশনস) অর্ডার, ১৯৭২' বলবৎ রয়েছে। এ সংক্রান্ত মূল আইন হচ্ছে 'দ্য সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট, ১৯৫১'।

‘বহিরাগমন, নাগরিকত্ব অর্জন, সংরক্ষণ, পরিত্যাগ, অবসান ইত্যাদি বিষয়ের সমাধান দেওয়া এ দু’টি আইনে সম্ভব হচ্ছে না। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দু’টি আইন একীভূত করে নতুন এ বাংলাদেশ নাগরিকত্ব আইন, ২০১৬ প্রণয়ন করা হচ্ছে। ’

শফিউল আলম বলেন, ওই দু’টি আইনের অসম্পূর্ণতা ও পুরনো বিষয়গুলোকে পুনর্বিন্যস্ত করে নতুন আইনটি করা হচ্ছে। আইনে ছয়টি অধ্যায় আছে। এগুলোর মধ্যে আছে নাগরিকত্ব অর্জনের পদ্ধতি, নাগরিকত্বের অযোগ্যতা, পরিত্যাগ, অবসান ইত্যাদি। এ নিয়ে ২৮টি ধারা রয়েছে।

তিনি জানান, নতুন এ আইনে বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের দ্বৈত নাগরিকত্বের বিধান যুক্ত করা হয়েছে।

আগে আমেরিকা ও যুক্তরাজ্য- এ দু’টি দেশের নাগরিকদের দ্বৈত নাগরিক হওয়ার সুযোগ ছিলো। তারা ওই দু’টি দেশের নাগরিকও হতে পারেন, বাংলাদেশেরও নাগরিকত্ব চাইতে পারেন। এখন সেটাকেই অনেক সম্প্রসারণ করা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, নতুন আইনে সার্কভুক্ত দেশ, মায়ানমার বা সরকার কর্তৃক গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা নাগরিকত্ব গ্রহণের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষিত রাষ্ট্র ছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সর্ম্পক রয়েছে এমন যেকোনো রাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে পারবেন।

তবে কোনো ব্যক্তি বিচারক, জাতীয় সংসদ সদস্য বা সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত বা শৃঙ্খলা বাহিনীতে বা প্রজাতন্ত্রের অসামরিক কর্মে নিয়োজিত থাকাকালে দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে পারবেন না।

দ্বৈত নাগরিকরা জাতীয় সংসদের সদস্য পদে নির্বাচন, রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন, বিচারকসহ প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মে নিয়োগ লাভ, স্থানীয় সরকার নির্বাচন বা কোনো রাজনৈতিক সংগঠন করতে পারবেন না।

বিদেশি কোনো নাগরিক বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করলে তারা নির্বাচন বা প্রজাতন্ত্রের কোনো কাজে নিয়োগও পাবেন না।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব জানান, এ আইনের আওতায় কোনো বিদেশি নাগরিককে সামাজিক, বিজ্ঞান, সাহিত্য, বিশ্বশান্তি, মানব উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিশেষ যোগ্যতা কিংবা বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশের সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদান করা যাবে।

বৈবাহিক সূত্রে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেতে কোনো বিদেশি নাগরিককে বাংলাদেশে কমপক্ষে ৫ বছর বসবাস করতে হবে।

কোনো ব্যক্তি দ্বৈত নাগরিকের ক্ষেত্র ছাড়া যদি কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আনুগত্য প্রকাশ করেন, বিদেশি রাষ্ট্রের কোনো বাহিনীতে যোগদান করেন বা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বা অন্য কোনোভাবে অন্য দেশকে সহায়তা করে থাকেন এবং এমন কোনো রাষ্ট্রের নাগরিক যে রাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত ছিলো বা আছে এবং বাংলাদেশে বেআইনি অভিবাসী হিসেবে বসবাস করেন বা করে আসছেন এ জাতীয় ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত বা অভিযুক্তদের নাগরিকত্ব থাকা না থাকার বিষয়ে আইনটিতে সরাসরি কিছু বলা হয়নি।

বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণকারী ব্যক্তিরা বিধি নির্ধারিত নিয়মে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে নাগরিকত্ব পরিত্যাগকারীর নাবালক সন্তানদেরও নাগরিকত্ব বাতিল হবে। নাগরিকত্ব পরিত্যাগকারীদের কেউ বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে চাইলে আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে সরকার আবেদনের যৌক্তিকতা বিবেচনা করে নাগরিকত্ব পুর্নবহাল করতে পারবেন।

আইন অমান্যের সাজার বিষয়ে তিনি জানান, মিথ্যা বা বিকৃত তথ্য প্রদান বা তথ্য গোপন করে এ আইনের অধীনে নাগরিকত্ব সংক্রান্ত অপরাধের জন্য অপরাধী অনধিক এক লাখ টাকা জরিমানা বা অনধিক ৫ বছরের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

১ লাখ টাকার বিষয়ে মন্ত্রিসভায় আলোচনা হয় যে, ৫ বছরের তুলনায় ১ লাখ টাকা খবুই কম হয়। সেক্ষেত্রে আইনমন্ত্রীর নেতৃত্বে আরেকটা বৈঠক হবে। সেখানে ছোটখাটো বিষয়গুলো সংশোধন করা হবে। সেক্ষেত্রে এই ১ লাখ টাকা বাড়িয়ে আরো বেশি পরিমাণ অর্থদণ্ড নির্ধারণ করা হতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৬
এমএইএম/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।