ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ইংরেজি নববর্ষের আনন্দ ওদের কাছে বিবর্ণ !

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০১৭
ইংরেজি নববর্ষের আনন্দ ওদের কাছে বিবর্ণ ! নিউ ইয়ার’ কী বুঝেন না শেফালীরা- বাংলানিউজ

ময়মনসিংহ: ‘নিউ ইয়ার’ কী বুঝেন না শেফালী আক্তার। চল্লিশের কোঠায় তার বয়স। ময়মনসিংহ নগরীর পালিকা শপিং সেন্টারের সামনে কাঁচামালের ব্যবসা করেন। স্বামী নেই। তিন সন্তান নিয়ে ব্রহ্মপুত্রের ওপারে ছোট্ট খুপড়ি ঘরে থাকেন।

ইংরেজি নববর্ষবরণে আতশবাজির ঝলকানিতে আকাশ উজ্জ্বল হয়ে উঠলেও প্রান্তিক এ সংগ্রামী নারীর জীবন রঙিন হয়ে উঠে না। পুরাতন বছরকে পেছনে ফেলে সম্ভাবনাময় নতুনের আবাহনেও উজ্জীবিত নন এ নারী।

এমনকি বর্ষ বরণের আনন্দ একটুকুও স্পর্শ করেনি তার কোমলমতি সন্তান ফরিদ, শাকিল ও ঝর্ণাকে।

ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চরাঞ্চলের বাসিন্দা নূরজাহান বেগমের (৫০) কথাই ধরা যাক না। শেফালীর মতো তিনিও শাক বিক্রেতা। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে শাক তুলে বাজারে বিক্রি করেন।

বছরের প্রথম দিনটিও কাটবে তার বাজারেই। এ দিনটির সঙ্গে নিজের যাপিত অন্য দিনের কোনো ফারাক নেই।

শৈশব থেকেই অভাবের মধ্যে বড় হওয়া এ নারী বর্ষবরণের আনন্দের কথাই ভাববেন কী করে, তার যে এখনো নুন আন্তে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। ৫ সদস্যের সংসারে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাতে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হচ্ছে।

এর ফলে তার বাজার থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরেই আতশবাজির আলো ও বিস্ফোরিত পটকার যুগলবন্দি শব্দেও আমোদ নেই তার মাঝে। নূরজাহান বলেন, ‘বছরের প্রথম দিন কোনো আমোদ নেই মনে। প্রতিটা দিনই অভাব আর অভাব। ’

‘নিউ ইয়ার’র কথা তুলতেই দু’ চোখ কপালে তুলে বলেন, ‘ইংরেজি নববর্ষ তো বুঝি না। তবে বাংলা নববর্ষ বুঝি। পোলাপানরে নতুন কাপড় কিইন্ন্যা দেই। ইংরেজি নতুন বছর বড়লোকগর, গরিবের না’ একদমে বলতে থাকেন নূরজাহান।

এ সময় পাশেই দাঁড়ানো শেফালী, ফুলবানুরা যেন হাসতে হাসতে একজন আরেকজনের গাঁয়ের ওপর ঢলে পড়েন।

শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে এ প্রান্তিক নারীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের নতুন বছরের বিবর্ণ কাহিনী শোনা যায়।
ইংরেজি নববর্ষের আনন্দ ওদের কাছে বিবর্ণ !
এ বাজারেই আলাপ হলো সালেহা নামের আরেক সবজি ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তার কাছে জীবন মানেই যন্ত্রণার এক নাম। শিক্ষা, চিকিৎসাসহ মৌলিক বিষয়গুলোও তাদের জীবন থেকে নির্বাসিত।

আর সেই কথাই তুলে ধরে সালেহা গড়গড় করে বলতে থাকেন, ‘নতুন বছর আইলেই কী। আমরা যেমন আছি তেমনই থাকমু। আমরা মুরুক্কু। আমগর সন্তানরাও মুরুক্কুই অইবো। ’

সালেহার অভাবের আরেকটি কারণ জানা গেলো তারই বয়সী আরেক নারী কন্ঠে। দারিদ্র্য পীড়িত এ নারীরা পুষ্টিহীনতা, চর্মরোগ, পেটের পীড়াসহ নানা রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন।

এ নারীদের সঙ্গে আলাপ শেষ করেই নগরীতে ঢু মেরে দেখা গেলো, ময়মনসিংহের আকাশজুড়ে যেন আতশবাজির মেলা। নতুন বছরের আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছেন তরুণরা।

উন্মাতাল নৃত্যের তালে নাচছেন আবার গাইছেন কেউ। নগরীর এ পাড়া, ওই পাড়াতেও অভিন্ন উদ্দামতা।

কিন্তু এ হৈ-হুল্লোড় স্পর্শ করছে না বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্তা এসব নারীদের। বাজারের অন্যান্য ব্যবসায়ীদের মাঝেও নেই নতুন বছরের আনন্দ-উল্লাস।

অবশ্য বিদায়ী বছরের পাওয়া না পাওয়ার হিসাব মেলাচ্ছেন তারাও। বিশেষ করে প্রান্তিক ওই নারীরা জীবনের প্রতিটি দিনেই হিসাব-নিকাশ করেন। তবুও নতুন বছরে নতুন আশায় বুক বাধা হয় না ওদের।

বাংলাদেশ সময়: ০২৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৭
এমএএএম/বিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।