ঢাকা, রবিবার, ২১ পৌষ ১৪৩১, ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

‘যে শীত আর বাঁচুম না’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০১৮
‘যে শীত আর বাঁচুম না’ দলবেধে বসে আগুন সেঁকছেন কয়েকজন ব্যক্তি। ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: রাজধানীর নীলক্ষেত মোড়। রাত তখন দেড়টা বাজে। মৃদু শৈত্যপ্রবাহে হাড় কাঁপানো শীতে বাইরে থাকা তখন মুশকিল। হঠাৎ একদল মানুষের কোলাহল শুনতেই মনে প্রশ্ন জাগলো এই শীতের রাতে কারা ঘরের বাহিরে। একটু সামনে এগিয়ে দেখা গেলো একদল মানুষ গুটিসুটি হয়ে দলবেধে বসে আগুন সেঁকছেন। 

প্রথম তাদের দেখে ছিন্নমূল মানুষ মনে হল। কৌতূহল মেটাতে তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিজ পরিবারের ভরণপোষণ করতেই হাড় কাঁপানো শীতের এই রাতে তারা এখন ঘরের বাইরে।

এদের মধ্যে কেউ চালান রিকশা, কেউ সিএনজি আবার কেউ বিক্রি করেন চা-পান সিগারেট।

সোমবার (০৮ জানুয়ারি) মধ্যরাতে রাজধানীর নীলক্ষেত মোড়সহ আরো বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে এসব চিত্র দেখা যায়।  

সরেজমিনে দেখা যায়, গায়ে ঠিকভাবে নেই শীতের গরম কাপড়। কেউ কেউ শীতে থরথর করে কাঁপছেন। আবার কেউ কাগজে আগুন জ্বালিয়ে নিজেকে শীত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। তাদের মধ্যে একজন রিকশা চালক মো. লিটন শেখ। তিনি রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ এলাকার বস্তিতে থাকেন। নীলক্ষেত মোড়ে এসে রিকশা থেকে মেনে লিটন চা বিক্রেতা কবিরকে বলেন, ‘দে দে এক কাপ গরম চা দে। আর পারতেছিনা, যে শীত আজ মনে হয় আর বাঁচুম না। ’

দলবেধে বসে আগুন সেঁকছেন কয়েকজন ব্যক্তি।  ছবি: জিএম মুজিবুর

তখন কবির লিটনকে এক কাপ চা বাড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘আরে বেটা নে আমার হাতে বানানো চা নে, এতে যাদু আছে, দেখবি সব শীত গায়েব হয়ই যাইব। ’ এরমধ্যে লিটন শরিক হয়ে গেছেন আগুন সেঁকার দলে। কবির কাছ থেকে চায়ের কাপ নিয়ে কাঁপতে কাঁপতে লিটন বলেন, ‘হ আগে দেহি কেমন যাদু আছে, পরে তর পেঁচাল শুনমু। ’

কবির ও লিটনের মতো এই দলে আরও ছিলেন রিকশা চালক কালাম, নাইট গার্ড ফিরোজ, সিনজি চালক মনিরসহ বেশ কয়েকজন। তারা সবাই রাতে বের হয়েছেন জীবিকার তাগিদে। তাদের গল্পে ঢুকে এখন জানার চেষ্টা দিন থাকতে এই শৈত্যপ্রবাহের মধ্যরাতে কেন তারা কাজে বের হয়েছেন। আড্ডায় এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতে প্রথমই উত্তর দেন সিএনজি চালক মনির।

মনির বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাগো দিন রাইত, গরম ও শীত কিছুই নাই। পেটের দায়ে সব করতে হয়। ’

মনিরের এমন অতিমানবীয় উত্তরটি পছন্দ হয়নি রিকশা চালক কালামের। তিনি মনিরের কথা থামিয়ে দিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাগোও শীত লাগে, আমাগোও কষ্ট হয়। এই দেহেন হাত-পাওয়ের কি অবস্থা শীতে গাড়ি চালাইয়া। এহন আর সোজা করতে পারিনা। এলেইগা আগুনে হাত-পাও দিয়া রাখছি। ’

তিনি বলেন, ‘পরিবারের কথা মনে হয়লে এসব কষ্ট কিছুই মনে হয় না। তাছাড়া শীতের রাইতে কাজ করলে কয়েকটা টেহা বেশি পাওয়া যায় বলেই তো আমরা সবাই এতো কষ্ট কইরা কাজ করি। ’

ভ্যান থামিয়ে চালক আলী কাগজে আগুন ধরিয়ে সেঁকছেন।  ছবি: জিএম মুজিবুর

শুধু নীলক্ষেত মোড়ে নয়, এমন চিত্র রাজধানীর প্রায় প্রতিটি রাস্তায়। বনানীর সিগন্যালের সামনে ভ্যান থামিয়ে চালক আলী কাগজে আগুন ধরিয়ে সেঁকছেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আর পারতেছি না, দম বন্ধ হয়ে আসছে। এই শীতে ভ্যান চালাইয়া মরতে হইব। তারপরেও কিছু করার নাই। কাজ না করলে খামু কি, আর না খাইয়া মরার থাইকা কাজ কইরা মরা অনেক ভালো। ’  

তবে এসব খেটে খাওয়া মানুষদের প্রতি আপাতত প্রকৃতিও কিছু করতে পারছে না। আগামী দিনগুলোতে তাদের জন্য আরও কষ্টকর রাতের উপহার নিয়ে আসছে প্রকৃতি!

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (০৯ জানুয়ারি) সকাল ৭টার দিকে তাপমাত্রার পারদ নামবে ৮ ডিগ্রিতে। চলতি মৌসুমে এটাই হবে রাজধানী শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এসময় বাতাসের গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ৯ কিলোমিটার।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৩১ ঘণ্টা জানুয়ারি ০৯, ২০১৮
এমএসি/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।