ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

জালে জীবন চলে খলিল মিয়ার

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০১৯
জালে জীবন চলে খলিল মিয়ার পাতিলের ভেতর মাছ রাখছেন খলিল মিয়া। ছবি: বাংলানিউজ

বগুড়া: মাঝারি আকারের জাল। দেখতেও অনেকটা নতুন। তবে জেলের দেখা মিললো মাত্র একজন। যার নাম খলিল মিয়া। সেই জালের সঙ্গে তুলনা করলে মাছ রাখার সামগ্রী ছিলো অত্যন্ত ছোট। মাছ রাখার জন্য দেখা গেলো একটি ছোট আকারের পাতিল।

খলিল মিয়া একাই কষ্ট করে নদী থেকে জাল উঠানোর পর কিনারে ভেড়ালেন। এরপর মাছের আশায় জাল পরিষ্কারে নেমে পড়লেন।

কিন্তু জালে মাছের পরিবর্তে ময়লা-আবর্জনার স্তূপই বেশি চোখে পড়লো। কাঁদার ভেতর থেকে কয়েকটি টাকি মাছ ধরা দিলো তার হাতে। সেগুলো খুব যত্ন সহকারে সেই পাতিলের ভেতর রেখে দিলেন।
 
মাছ ধরার এমন দৃশ্য দেখা গেলো এককালের যৌবনাদীপ্ত করতোয়া নদীতে। দখল-দূষণে বর্তমানে নদীটি জর্জরিত। দখলবাজদের চাপে নদীটি সরু হয়ে পড়েছে। জীর্ণশীর্ণ এই নদীটির বিস্তীর্ণ বুকজুড়ে শুধুই দেখা যায় ময়লা-আবর্জনা। ময়লা-আবর্জনার চাপ সইতে না পেরে নদীর বুকে থাকা সামান্য পানিও চিকচিকে কালচে বর্ণ ধারণ করে। যেন মশা-মাছি উৎপাদনের প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
 
বেঁচে থাকার তাগিদে যৌবন হারানো এই নদীতেই জাল নিয়ে নেমেছেন খলিল মিয়া। তিনি নাকি প্রায়ই বগুড়া শহরের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত নদীর বিভিন্ন স্থানে জাল পেতে মাছ ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু জালের বেশির ভাগ অংশই মাছের পরিবর্তে ময়লা-আবর্জনায় ভরে যায়।  
নদী থেকে জাল উঠানোর পর কিনারে ভেড়াচ্ছেন খলিল মিয়া।  ছবি: বাংলানিউজখলিল মিয়ার ছোট পরিবার। পরিবার-পরিজন নিয়ে করতোয়ার পাশেই বগুড়া শহরের এসপি ব্রিজ এলাকায় ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে বসবাস করেন। নিজের কোনও জায়গা-জমি নেই।
 
খলিল মিয়া বাংলানিউজকে জানান, বেশির ভাগ সময় তিনি শহর এলাকায় রিকশা চালান। তবে শহরের ভেতর বিশেষ করে সাতমাথায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাতে দেয় না সংশ্লিষ্টরা। এ কারণে পায়ে চালিত রিকশা চালাতে হয়। এতে বেশি আয় করা যায় না।
 
‘দেখা যায় দিন শেষে যে আয় হয় তা ভাড়া বাবদ রিকশার মহাজনকে দিতেই প্রায় শেষ। কারণ তার নিজের কোনও রিকশা নেই। ভাড়ায় রিকশা চালাতে হয়। এছাড়া যখন যে কাজ পান তাই করে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করেন। এ কারণে কিছু কিছু করে টাকা জমিয়ে জাল তৈরি করে নিয়েছেন। সময় পেলেই জাল নিয়ে ছোটেন করতোয়া নদীতে। ’
 
তিনি বলেন, ঘের জাল একা ফেলতে কষ্ট হয়। তবুও কাউকে সঙ্গে নেন না। কারণ ময়লা-আবর্জনায় ভরপুর ও সরু হয়ে যাওয়া এই নদীতে তেমন একটা মাছ মেলে না। তাই কাউকে সঙ্গে নিলে মাছ দিতে হবে। এ কারণে একাই জাল নিয়ে নদীতে নামেন। জালে যা ধরা পড়ে এই নিয়ে খুশি থাকতে হয় তাকে।
 
খলিল মিয়া বলেন, ভাগ্য ভালো হলে মাঝে মধ্যে জালে কিছু চাষ উপযোগী মাছ ধরা পড়ে। তবে বেশির ভাগ সময় টাকিসহ কিছু দেশীয় জাতের মাছ পাওয়া যায়। যেদিন একটু বেশি মাছ ধরা পড়ে সেদিন কিছু মাছ বাজারে বিক্রি করেন। আর কিছু মাছ নিজের খাওয়ার জন্য রেখে দেন। এভাবে চলছে তার জীবন সংসার।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০১৯
এমবিএইচ/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।