ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

দাবিতে সম্মতি, বাস্তবায়ন নেই

প্রশান্ত মিত্র, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০২০
দাবিতে সম্মতি, বাস্তবায়ন নেই

ঢাকা: দীর্ঘদিন ধরেই অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিজেদের ভাতা-সুবিধাদি নিয়ে বৈষম্যের কথা জানিয়ে আসছে পুলিশ। অন্যদের তুলনায় নির্দিষ্ট কর্ম ঘণ্টার বাইরে বাড়তি পরিশ্রম, পক্ষান্তরে সুযোগ-সুবিধা কম বলে অভিযোগ তাদের।

পুলিশের অভিযোগ, বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্টদের কাছে যৌক্তিক দাবি তুলে ধরেছেন তারা। তাৎক্ষনিকভাবে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও বাস্তবায়ন নেই বললেই চলে।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন দফতরে নানা কারণে দাবিগুলো দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকছে।  

জানা গেছে, ২০১৯ সালের পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বেশ কয়েকটি দাবি জানিয়েছিল পুলিশ। সেগুলো বাস্তবায়নে তাৎক্ষনিকভাবে নির্দেশও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে ২০২০ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত একটিও বাস্তবায়িত করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।  

রোববার (০৫ জানুয়ারি) থেকে শুরু হচ্ছে পুলিশ সপ্তাহ-২০২০। আসছে পুলিশ সপ্তাহে পুরানো দাবির দ্রুত বাস্তবায়নসহ প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবারো একগুচ্ছ দাবি তুলে ধরবে পুলিশ।  

২০১৯ সালে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর জন্য একটি স্পোর্টস ট্রেনিং কমপ্লেক্স তৈরি দাবি জানানো হয়েছিল। সে অনুযায়ী, পুলিশ সদর দফতরের ডেভেলপমেন্ট-২ শাখা উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) প্রণয়নের কাজ করছে। ডিপিপি তৈরির পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরপর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় যাবে এই প্রস্তাব। ফলে সহসাই নিজস্ব স্পোর্টস কমপ্লেক্স পাচ্ছে না পুলিশ।

একই বছর পুলিশ সদস্যদের পরিবারের আজীবন (মৃত্যুর আগ পর্যন্ত) দুই সদস্যের পারিবারিক রেশন সুবিধা চেয়েছিল পুলিশ। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশের এই প্রস্তাব মেনে নেন। তবে বর্তমানে এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-২ শাখায় আটকে আছে।

এছাড়া, ‘দুষ্কৃতিকারী কর্তৃক আক্রান্ত হয়ে’ মৃত্যুবরণকারী কর্মকর্তাদের পারিবারিক রেশন দেওয়া হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিহত হওয়া কর্মকর্তাদের পরিবার এই সুবিধার বাইরে। তাদের পরিবারকে এই সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।  

২০১৯ সালে পুলিশের বিশেষ ভাতা যৌক্তিক পর্যায়ে উন্নীতকরণের কথা ছিল। এই প্রস্তাবটিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-২ শাখায় ঝুলে আছে।

পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘদিনের দাবির পর অর্থ বিভাগ রাজশাহীর সারদার পুলিশ একাডেমি ও মিরপুরের স্টাফ কলেজের কর্মরত ও পদায়িত বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারদের শর্ত সাপেক্ষে ৩০ শতাংশ প্রশিক্ষণ ভাতা দিতে সম্মতি জানায়। এছাড়া, জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকাশ ভাতা বৃদ্ধিকরণের প্রস্তাব মেনে নেয় সরকার। তবে এটিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-২ শাখায় আটকে আছে।

পুলিশ ৩৬৫ দিনে ২৪ ঘণ্টা করে দেশের নিরাপত্তায় নিয়োজিত। অথচ সরকারি সব পর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণ ভাতা পেলেও পুলিশের কেবলমাত্র বিসিএস ক্যাডারদের ভাতা দেওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত বৈষম্যমূলক বলে মনে করছে পুলিশ।

সূত্র জানায়, ২০১৬ থেকে গত ৪ বছরে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে প্রায় অর্ধশতাধিক দাবি তুলেছে পুলিশ। ২০১৮ সাল থেকেই পুলিশে নতুন পদ সৃষ্টির দাবি জানানো হচ্ছে। পুলিশের ভাষ্য, অনেকেই যোগ্য হলেও পদ না থাকায় অনেক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া যাচ্ছে না। এই কার্যক্রম ‘চলমান’ বলা হলেও ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পদ সৃষ্টি করা হয়নি।

৩ বছর আগে পুলিশে ৫ টি পদকে গ্রেড-১ পদ অনুমোদনের দাবি করা হয়েছিল। সেই দাবি মেনে নেওয়া হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ৫ টি পদের মধ্যে অতিরিক্ত আইজিপি-এএন্ডও এবং অতিরিক্ত আইজিপি-এসবিকে গ্রেড-১ পদে উন্নীত করা হয়। এছাড়া, ব্যক্তি র‍্যাব ডিজি, সিআইডির সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি, সাবেক ডিএমপি কমিশনারকে নিউমারির (গ্রেড-১) পদে উন্নীত করা হয়।

পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নতির জন্য ২০১৭ ও ২০১৮ সালে রাজারবাগের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে ১০ তলা ভবন করার প্রস্তাব ছিল পুলিশের। এ দাবির প্রেক্ষিতে সর্বশেষ ওই প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি কাজের জন্য কনসালট্যান্ট নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন বলে জানা গেছে।

একই সময় পুলিশের এসআই, সার্জেন্ট ও এএসআইদের সরকারি কাজে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ক্রয়ে স্বল্প সুদের কিস্তির বা ঋণের প্রস্তাব ও জ্বালানি ভাতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তবে দুইবছর পর ২০২০ সালেও এটি পুলিশের ট্রান্সপোর্ট ও অডিট শাখায় আটকে আছে।

এদিকে, কর্তব্যরত অবস্থায় একজন পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যু হলে তার পরিবার ৫ লাখ টাকা পায়। অথচ চাকরিরত অবস্থায় এমনকি ছুটিতে থাকলেও কোন সরকারি কর্মকর্তা মৃত্যুবরণ করলে তার পরিবারকে ৮ লাখ টাকা দেওয়া হয়। পুলিশ কর্মকর্তারা এই বিষয়টিকে ‘চরম বৈষম্যমূলক’ বলে মন্তব্য করছেন।

 বিভিন্ন দাবির বিষয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী পুলিশের অনেক উন্নয়ন করেছেন, পুলিশের সব দাবি মেনে নিয়েছেন। আমরা যখনই তাকে আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো তুলে ধরি তিনি সঙ্গে সঙ্গেই এগুলো বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন। তবে এগুলোর অধিকাংশই নানা কারণে নানা মন্ত্রণালয়ে আটকে যায়।

তিনি বলেন, অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে পুলিশের অনেক বৈষম্য রয়েছে। বৈষম্য দূর করতে আমরা কয়েক বছর ধরে কিছু দাবি তুলে ধরছি। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এগুলো বাস্তবায়ন দরকার।

 এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা বলেন, আগামী ৫ জানুয়ারি থেকে পুলিশ সপ্তাহ অনুষ্ঠিত হবে। পুলিশ সদস্যরা প্রতিবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজেদের যৌক্তিক দাবিগুলো তুলে ধরবেন।

বাংলাদেশ সময়: ০২২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০২০
পিএম/জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।